সফল: এ ভাবেই ওমানের রক্ষণ ভেঙে এগোন মনবীর। ফাইল চিত্র
সপ্তম আইএসএলে তাঁরা ছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বী। কিন্তু জাতীয় দলে একে অপরের পরিপূরক। প্রথম জন এটিকে-মোহনবাগানের স্ট্রাইকার মনবীর সিংহ। দ্বিতীয় জন বিপিন সিংহ। এই মরসুমে মুম্বই সিটি এফসি-র এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগে যোগ্যতা অর্জন ও আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যে অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি।
দুবাইয়ের মাকতুম বিন রশিদ স্টেডিয়ামে ওমানের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিপিনের সেন্টার থেকেই গোল করে সমতা ফেরান মনবীর। ক্লাব ফুটবলে প্রতিদ্বন্দ্বী। অথচ জাতীয় দলে দুর্দান্ত বোঝাপড়া। এর রহস্য কী? শুক্রবার দুবাই থেকে মনবীর বললেন, ‘‘অনুশীলনে বার বার আমরা এ ভাবে গোল করার মহড়া দিতাম। বিপিন সেন্টার করত। আমি গোল করার চেষ্টা করতাম।’’ ফেলুদার ভঙ্গিতে বিপিন হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘পুরোটাই টেলিপ্যাথি! বল ধরার পরেই দেখলাম, মনবীর দৌড় শুরু করেছে। আমার তখন একটাই লক্ষ্য ছিল, ওকে নিখুঁত ভাবে বলটা দেওয়া। কারণ, সমতা ফেরানোর এটাই সেরা সুযোগ। মনবীর অসাধারণ হেডে বল জালে জড়িয়ে দিয়েছিল। পুরো কৃতিত্বই ওর।’’ মনবীর যদিও তা মানছে না। সতীর্থের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে বললেন, ‘‘বিপিন বলটা ধরার সঙ্গে সঙ্গে আমি দ্রুত গতিতে ওদের বক্সে ঢুকে পড়ি। কারণ, এই ধরনের ম্যাচে গোল করার সুযোগ বেশি পাওয়া যায় না। বিপিনের সেন্টারটা অসাধারণ ছিল বলেই আমি গোল করতে পেরেছিলাম।’’
ওমানের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে প্রথমার্ধে একেবারেই ছন্দে ছিল না ভারতীয় দল। ২৬ মিনিটে আল মাকবলির পেনাল্টি বাঁচিয়ে পতন রোধ করেছিলেন গোলরক্ষক অমরিন্দর সিংহ। যদিও প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার দু’মিনিট আগে চিংলেনসানা সিংহের আত্মঘাতী গোলে পিছিয়ে পড়েছিল ভারত। কোথায় সমস্যা হচ্ছিল? মনবীরের ব্যাখ্যা, ‘‘ওমান অভিজ্ঞ দল। ওদের গুণগত মানও দারুণ। তা ছাড়া ওমান শরীরী ফুটবল খেলছিল। তাই একটু সমস্যা হচ্ছিল।’’
এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে আইএসএলের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বে ম্যাচের শেষ মুহূর্তে অমরিন্দরকে তুলে পূর্বা লাচেনপাকে নামিয়েছিলেন কোচ সের্খিয়ো লোবেরা। টাইব্রেকারের মুম্বইয়ের শেষ প্রহরী ছিলেন পূর্বা। বৃহস্পতিবার ওমানের বিরুদ্ধে পেনাল্টি বাঁচিয়ে ভারতীয় দলের গোলরক্ষক যেন সেই উপেক্ষারই জবাব দিলেন। অমরিন্দর বলছিলেন, ‘‘পেনাল্টির সময় গোলরক্ষকদের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলে চলবে না। লক্ষ্যে স্থির থাকতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি পেনাল্টি বাঁচানোর অনুশীলন করি।’’ যোগ করেন, ‘‘জাতীয় দলের হয়ে কিছু করতে পারায় দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’’
ওমানের বিরুদ্ধে ০-১ পিছিয়ে পড়ার পরে হাফটাইমে ড্রেসিংরুমে ফিরেই কোচ ইগর স্তিমাচ ফুটবলারদের বলেছিলেন, ‘‘তোমরা বিপক্ষের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে পারছ না। আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি রয়েছে। সাহসী ফুটবল খেলো।’’ পাশাপাশি তিনি রওলিন বর্জেসের জায়গায় নামান লালেংমাওয়াই রালতেকে। জ্যাকসন সিংহের পরিবর্তে আনেন রেনিয়ার ফার্নান্দেসকে। দশ মিনিটের মধ্যেই মনবীর গোল শোধ করে দেন। বিপিন বলছিলেন, ‘‘প্রথমার্ধে আমরা খেলতে পারছিলাম না। হাফটাইমে কোচ বলেছিলেন, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। খোলামনে খেলো তোমরা। দ্বিতীয়ার্ধে সকলেই দুর্দান্ত খেলেছে।’’ অভিষেক ম্যাচে দুর্দান্ত খেলে নজর কাড়া বিপিন হাসতে হাসতে যোগ করলেন, ‘‘এ বার গর্বের সঙ্গে বলতে পারব, আমি এখন আন্তর্জাতিক ফুটবলার। তবে আমার এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি রয়েছে।’’
আন্তর্জাতিক ফিফা ফ্রেন্ডলিতে বৃহস্পতিবার ওমানের বিরুদ্ধে পিছিয়ে পড়েও ভারতীয় দলের দুরন্ত প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বসিত ফুটবলপ্রেমীরা। অথচ ফুটবলাররা আশ্চর্যরকম ভাবে নির্লিপ্ত। তাঁদের পাখির চোখ এখন আগামী সোমবারের সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ম্যাচ। শুক্রবার সকালে দুবাইয়ের টিম হোটেলেই হাল্কা ফিটনেস ট্রেনিং করেছেন মনবীররা। আগের দিন ওমানের বিরুদ্ধে যাঁরা ৪৫ মিনিটের কম খেলেছেন, ইগর তাঁদের বিকেলে অনুশীলন করান। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে পরের ম্যাচে প্রথম দলে বেশ কয়েকটি পরিবর্তনের ভাবনা-চিন্তাও শুরু করেছেন তিনি। জাতীয় কোচ ২৭ জন ফুটবলারকেই খেলিয়ে দেখে নিতে চান। ফ্রেন্ডলি ম্যাচই যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সেরা মঞ্চ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy