Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Makhaya Ntini

একঘরে ছিলাম দলে, এনতিনির বর্ণবিদ্বেষ-তোপ

এখন ৪৩ বছর বয়স এনতিনির। নামী প্রাক্তনদের মধ্যে জাক কালিস, শন পোলক, মার্ক বাউচার, লান্স ক্লুজনারদের সঙ্গে খেলেছেন তিনি।

সরব: দক্ষিণ আফ্রিকা দলে জুটত উপেক্ষা, ফাঁস করলেন এনতিনি।

সরব: দক্ষিণ আফ্রিকা দলে জুটত উপেক্ষা, ফাঁস করলেন এনতিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৬:২৭
Share: Save:

বর্ণবিদ্বেষ এবং দক্ষিণ আফ্রিকা! দীর্ঘ ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে নতুন বিতর্কের ঢাকনা খুলে দিলেন মাখায়া এনতিনি। প্রাক্তন দক্ষিণ আফ্রিকান ফাস্ট বোলার বলে দিলেন, জাতীয় দলে খেলার সময় সারা ক্রিকেটজীবনেই একাকীত্বে ভুগতেন। কেউ সে ভাবে তাঁর সঙ্গে কথাই বলতে চাইত না।

এখন ৪৩ বছর বয়স এনতিনির। নামী প্রাক্তনদের মধ্যে জাক কালিস, শন পোলক, মার্ক বাউচার, লান্স ক্লুজনারদের সঙ্গে খেলেছেন তিনি। আমেরিকায় জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে ঘিরে বিশ্বব্যাপী যে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ অভিযান শুরু হয়েছে, সে প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট নিয়ে নীরবতা ভঙ্গ করেছেন এনতিনি। সাউথ আফ্রিকান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনকে বলেছেন, ‘‘খেলার সময় আমি বরাবরই একাকী ছিলাম। ডিনারে যাওয়ার কথা বলতে কেউ আমার ঘরের দরজায় কখনও কড়া নাড়েনি। সতীর্থরা আমার সামনে দাঁড়িয়েই সব পরিকল্পনা করত আমাকে বাদ দিয়ে। প্রাতরাশ সারতে যখন আমি আসতাম, একা থাকতাম। কেউ আমার সঙ্গে বসত না।’’ এখানেই না থেমে তাঁর আরও বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘‘আমরা একই জার্সি পরে মাঠে নামতাম। একই জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। কিন্তু আমাকে সারাক্ষণ এই একাকীত্বের সঙ্গে লড়াই করে যেতে হত।’’

এনতিনির এমন চাঞ্চল্যকর কথাবার্তা নতুন করে দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটে বর্ণবিদ্বেষ বিতর্ক জাগিয়ে তুলতে বাধ্য। তিনি এমনও বলেছেন যে, এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রায়ই টিমবাসে করে যেতেন না। ‘‘বাসের ড্রাইভারের সঙ্গে দেখা করে ওর হাতে আমার ব্যাগটা দিয়ে দিতাম। তার পর দৌড়ে দৌড়ে মাঠে যেতাম। ফেরার সময়েও একই কাজ করতাম। বাসে না উঠে দৌড়ে দৌড়ে ফিরে আসতাম,’’ ফাঁস করেছেন এনতিনি। তাঁর আরও ব্যাখ্যা, ‘‘তখন অনেকেই হয়তো বুঝতে পারেনি, কেন আমি এটা করছি। আমিও এত দিন কাউকে এ সব কথা বলিনি। কিন্তু এ ছাড়া অস্বস্তিকে এড়িয়ে চলার আর কোনও রাস্তা ছিল না।’’ আবেগরুদ্ধ ভাবে এর পর আরও সাংঘাতিক কথা বলছেন, ‘‘আমি একাকীত্ব থেকে পালাতে চাইতাম। কী করব? যদি আমি বাসের পিছনের সিটে গিয়ে বসতাম, ওরা সামনের দিকে চলে যেত। যখন দল জিতত, সব কিছু ঠিকঠাক চলত। দল হারলেই প্রথম কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গত আমাকে। সবার আগে আমাকে দায়ী করা হত হারের জন্য।’’ এনতিনির কথায়, তাঁর ছেলে থান্ডোও বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। ‘‘আমার ছেলেকেও একই জিনিসের মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট শিবিরে ও নানা কারণ দেখিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে,’’ বলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে অন্যতম সেরা পেসার।

দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিদ্বেষের দীর্ঘ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে এনতিনির মন্তব্য নতুন করে বিস্ফোরণ ঘটাতে বাধ্য। বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগে দীর্ঘ সময় খেলাধুলো থেকে বহিষ্কৃত ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বাকি বিশ্ব কেউ তাদের সঙ্গে খেলত না। নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে দীর্ঘ লড়াইয়ের পরে মুক্তি ঘটে। নির্বাসন ওঠার পরে কলকাতাতেই প্রথম ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছিলেন কেপলার ওয়েসেলসরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান পেসার লুনগি এনগিডি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে অন্যায় আচরণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন। তার পরে এনতিনি-সহ ৩০ জন ক্রিকেটার এই অভিযানকে সমর্থন করে চিঠি দেন। প্যাট সিমকক্স, বোয়েটা ডিপেনারের মতো প্রাক্তন ক্রিকেটার এনগিডির সমালোচনা করেছেন। আবার ফ্যাফ ডুপ্লেসি এ দিন বলেছেন, ‘‘কোনও জীবনকেই সম্মান জানানো যাবে না যদি না কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনকে যথার্থ সম্মান আমরা করতে পারি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Makhaya Ntini South Africa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy