Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ার কাছে এখন ত্রাস কুলদীপ

ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। চেন্নাইয়ের মতো ইডেনেও রিস্ট স্পিনাররা ম্যাচটা নিয়ে গেল। চেন্নাইয়ে যুজবেন্দ্র চহাল। আর কলকাতায় কুলদীপ।

ভয়ঙ্কর: দুরন্ত হ্যাটট্রিকের পরে উল্লাসে লাফ কুলদীপ যাদবের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

ভয়ঙ্কর: দুরন্ত হ্যাটট্রিকের পরে উল্লাসে লাফ কুলদীপ যাদবের। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার ইডেনে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী

সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৩০
Share: Save:

কলকাতায় পা দেওয়ার পর গত দু’দিন ধরে কলকাতায় হন্যে হয়ে চায়নাম্যান খুঁজেছে। কলকাতার নবীন প্রতিভাদের সঙ্গে ইন্ডোর নেটে অনুশীলন করে কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালদের বিরুদ্ধে আক্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া টিম ম্যানেজমেন্ট।

আসলে অস্ট্রেলিয়া ভুলটা করেছিল বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসার পথে। চট্টগ্রাম থেকে ওরা দেশে রিহ্যাব-এর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল ওদের স্পিন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য নেথান লায়ন-কে। আর সেখানেই মোক্ষম ভুলটা করেছিল ওরা। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, লায়ন এই ভারত সফরে অস্ট্রেলিয়া টিমের সঙ্গে থাকলে ওদের রিস্ট স্পিনারদের খেলতে গিয়ে এতটা দুরাবস্থা হত না। গত পাঁচ দশকে ভারত সফররত অনেক অস্ট্রেলিয়া টিমকেই আমি দেখেছি। কিন্তু কখনও প্রধান স্পিনারকে দেশে রেখে আসতেও দেখিনি।

ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে। চেন্নাইয়ের মতো ইডেনেও রিস্ট স্পিনাররা ম্যাচটা নিয়ে গেল। চেন্নাইয়ে যুজবেন্দ্র চহাল। আর কলকাতায় কুলদীপ। এ দিন ইডেনে কুলদীপ হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ সেরা হলেও, আমার কাছে কিন্তু ম্যাচের সেরা ভুবনেশ্বর কুমার। ছয় ওভার বল করে নয় রানে তিন উইকেট। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ধাক্কাটা তো দিয়েছিল ভুবিই। শুরুর দিকে ট্র্যাভিস হেডের লোপ্পা ক্যাচ রোহিত শর্মা না ফেললে এ দিন ভুবিরও হ্যাটট্রিক হয়ে যেতে পারত।

আর কুলদীপের হ্যাটট্রিকের ক্ষেত্রে ওকে খাটো না করেও বলছি, কৃতিত্ব দিতে হবে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি এবং উইকেট রক্ষক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে।

আরও পড়ুন: কপিল, হরভজনের স্মৃতি ফেরালেন কুলদীপ

বিরাটের কথা বলছি এই কারণেই, যে অস্ট্রেলিয়া যখনই আক্রমণের রাস্তা নিয়েছিল তখনই ও বুদ্ধি করে বোলিং পরিবর্তনটা করল। আর ধোনির কথা বলছি এই কুলদীপের ওই হ্যাটট্রিকের প্রথম উইকেট ম্যাথু ওয়েড-কে স্টাম্পিং-এর জন্য। ওখানেই রক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘের মতোই আরও আগ্রাসী মেজাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার রসদটা পেয়ে গিয়েছিল কুলদীপ। ফলে পরের দুই ব্যাটসম্যান অ্যাস্টন অ্যাগার এবং প্যাট কামিন্স ওর বলের হদিশই খুঁজে পায়নি। কারণ এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম ত্রাসের নাম এখন কুলদীপ।

এ দিন ইডেনে বিরাট কোহালির টস জিতে ব্যাটিং নেওয়ার পর তাকিয়ে ছিলাম উইকেট কী রকম আচরণ করে তা দেখার জন্য। ভারতীয় ব্যাটিংয়ের একদম শুরুতে অজিঙ্কা রাহানে যখন প্যাট কামিন্সের প্রথম দু’টো বল খেলল, তা এতটা ‘ক্যারি’ করল যে অস্ট্রেলিয়ার উইকেটকিপার ম্যাথু ওয়েড তাঁর কাঁধের কাছে ধরলেন। তখন মনে হয়েছিল বল আজ দারুণ ‘ক্যারি’ করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বদলে খেলা যত গড়িয়েছে ততই পিচ মন্থর থেকে মন্থরতম হয়ে গিয়েছে।

ক্রিকেটের পরিভাষায় এই ধরনের পিচকে বলা হয় ‘ডাবল পেসড’ উইকেট। তবে এর জন্য পিচ কিউরেটর-দের দোষারোপ করা যায় না কোনও ভাবেই। পুজোর আগে সেপ্টেম্বর মাসে এর চেয়ে ভাল পিচ তৈরি করা কোনও ভাবেই সম্ভব ছিল না সিএবি-র পক্ষে।

বিরাট মাঠে নামার পরেই অজিঙ্কা রাহানের সঙ্গে জুটি বেঁধে খেলাটা ধরে নিয়েছিল। ওদের দু’জনের জুটিতে ওঠে ১০২ রান। সেই সময় মনে হচ্ছিল, ভারতের রান আজ তিনশো ছাড়াবে। কারণ বিরাট আর অজিঙ্কার ফিটনেস। সিঙ্গলসকে দু’রান বানিয়ে নেয়। কিন্তু এ দিন অজিঙ্কা কিন্তু রান নিতে গিয়েই আউট হয়ে গেল। আর অজিঙ্কা আউট হতেই বুদ্ধি করে উইকেট টু উইকেট বল শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। যার ফলে হার্দিক পাণ্ড্য চেন্নাইয়ের মতো ইডেনে মারার জন্য কোনও জায়গা পায়নি। সে কারণেই ভারতের রানটা মিডল অর্ডারে লাফ দিয়ে বাড়েনি ইডেনে।

ধোনির মতোই বিরাট কোহালিকেও উইকেটের বাইরে চতুর্থ, পঞ্চম স্টাম্প লক্ষ্য করে হাফ ভলি দিয়ে প্রলুব্ধ করেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু বিরাট যেন আজ সংকল্প করেই নেমেছিল, ইডেনে বড় রান করতে হবে। কিন্তু শতরানের মাত্র আট রান আগেই থেমে যেতে হল ভারত অধিনায়ককে। না হলে আজ ইডেনেই নিজের ৩১ তম শতরানটা পেয়ে যেত ও। নেথান কুল্টারনাইলের যে বলে ও আউট হল, সেই বলটা ও থার্ড ম্যান দিয়ে স্টিয়ার করতে চেয়েছিল। যা বিরাট খুব ভালই মারে। কিন্তু এটাই ক্রিকেটের মজা। যেখানে ব্যাটসম্যান আউট হতে পারে, তার সবচেয়ে শক্তিশালী স্কোরিং শটেই। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।

কিন্তু এ দিন শতরানের মাত্র আট রান আগে বিরাটের ইনিংস থেমে গেলেও একটা জিনিস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল ও। তা হল এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকতে গেলে ফিটনেসের কোনও বিকল্প হয় না। না হলে যে ম্যাচে চড়া রোদ আর আর্দ্র পরিবেশে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল, সেই ম্যাচে বিরাট কোহালি দৌড়ে সিঙ্গলসকে পরিণত করছিল ডাবলসে। উইকেটের সবদিকেই অবলীলায় খেলে গেল। এটাই বুঝিয়ে দিয়ে যায়, ওর সঙ্গে
অন্যদের তফাৎ।

এ দিন ভারতের কাছে হেরে সিরিজে ০-২ পিছিয়ে পড়ল অস্ট্রেলিয়া। আর ভারত ইডেনে জিতে যে আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেল তাতে অস্ট্রেলিয়ার সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর কোনও সম্ভাবনা দেখছি না। সিরিজ ৫-০ হলেও অবাক হব না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy