মহড়া: ফাইনালের প্রস্তুতি সুহের ও চামোরোর। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পকেট থেকে একবার করে কাগজ বার করছেন, তার পর ডেকে নিচ্ছেন সেখানে লিখে রাখা বাছাই করা তিন-চার জন ফুটবলারকে।
যে ফুটবলারদের ডেকে নিচ্ছেন তাদের দিয়ে করাচ্ছেন নানা ধরনের ‘সিচুয়েশন মুভ’। কখনও ডাউন দ্য মিডল রান, কখনও উইং প্লে, কখনও হঠাৎ করে ভিতরে ঢুকে প্রতিপক্ষকে ধোঁকা দেওয়ার কৌশল রপ্ত করা— শুক্রবার বিকেলে মেঘলা আকাশের নীচে এ ভাবে অন্তত পঁচিশ রকম ‘মুভ’ শেখানো হল সালভা চামোরোদের এবং সেটা করা হল সংবাদ মাধ্যমকে মাঠের বাইরে বার করে দিয়ে।
মোহনবাগান কোচ কিবু ভিকুনার বাঁ পকেটে থাকা ওই সাদা কাগজে ‘যুদ্ধ’ জেতার অস্ত্র সাজিয়ে দিয়েছেন ভিডিও অ্যানালিস্ট নীতেশ সিংহ। ডুরান্ড কাপ শুরুর আগে যাঁকে মুম্বই থেকে উড়িয়ে এনেছেন সবুজ-মেরুন কর্তারা। আজ, শনিবার ডুরান্ড ফাইনালে জোসেবা বেইতিয়াদের প্রতিপক্ষ গোকুলম। শেষ চার ম্যাচে কেরলের দলটির খেলা দেখে তাদের শক্তি এবং দুর্বলতা কোথায়, সেটাই কোচকে ছক কষে দেখিয়ে দিয়েছেন ওই যুবক। অনুশীলন শুরুর আগে ড্রেসিংরুমে ফুটবলারদের নিয়ে কুড়ি মিনিটের বৈঠক করেন কিবু। সেখানে পর্দায় যে ক্লিপিংস দেখান, মাঠে নেমে ছাত্রদের দিয়ে তা প্রয়োগ করেছেন সবুজ-মেরুনের স্প্যানিশ কোচ। শুধু তাই নয়, পুরো দল নিয়ে উঠেছেন স্টেডিয়াম সংলগ্ন হোটেলে।
কুড়ি বছর পর ডুরান্ড কাপ পালতোলা নৌকোয় তোলার সুযোগ। বিশ্বের যে কোনও কোচই দেশের সবচেয়ে পুরনো ও ঐতিহ্যময় এই খেতাব জেতার জন্য মরিয়া হবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু গত কয়েক দিন কিবুকে দেখে মনে হয়েছে ফ্রান মোরান্তেদের কোচ এই ট্রফি জেতার জন্য যেন সর্বস্ব পণ করে বসে আছেন। ‘‘যে কোনও টুনার্মেন্টের ফাইনালে খেলাই স্পেশ্যাল। আর এই ট্রফি জয়টা আমার চেয়েও ক্লাবের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো এই ক্লাবের একজন সৈনিক মাত্র,’’ বলার সময় বোঝা যায় কতটা পেশাদার তিনি। পড়শি ক্লাবের স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস দু’দিন আগে ব্যর্থ হয়ে অন্ধকারে চলে গিয়েছেন, মরসুমের শুরুতেই এ রকম মঞ্চে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার জন্য একটা ফাইনাল-জয় যে তাঁকে আকাশে তুলে দেবে, সেটা জানেন অভিজ্ঞ কিবু। আর সে জন্যই বৈচিত্রময় কর্নার থেকে নাগাড়ে পেনাল্টি অনুশীলন—ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে কোনও অস্ত্রেই শান দিতে বাকি রাখেননি কিবু।
শুধু অনুশীলন নয়, গোকুলম সম্পর্কে সব তথ্য যে তাঁর নখদর্পণে, সেটা বোঝা গিয়েছে তাঁর কথা শুনেও। গড়গড় করে বলে দেন, ‘‘ওদের মার্কাস ৪ ম্যাচে ৯ গোল করেছে। ভাল ফুটবলার। ওদের হেনরি কিসেক্কা আগে আমাদের দলে খেলত। গোকুলমের সেন্ট্রাল মিডিয়ো বেশ ভাল। দু’নম্বর লেফট ব্যাকটা ভাল ওভারল্যাপ করে।’’ সঙ্গে জানিয়ে দেন, ‘‘ফাইনালে খেলা দুটি দলই ১২০ মিনিট করে শেষ ম্যাচ খেলেছে। যা আবহাওয়া, তাতে অতিরিক্ত সময়টা তুলে দেওয়া উচিত ছিল। বদলি হিসাবে পাঁচ জন ফুটবলার নামানোর নিয়ম থাকলে ভাল হত। কিছু করার নেই। যা নিয়ম তা মানতে হবে।’’
অনুশীলনে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলালেও দেড় ঘণ্টার অনুশীলন দেখে মনে হয়েছে, কাশ্মীর-জয় করা দলই শুরুতে নামাতে চলেছেন কিবু। সুপার সাব হিসাবে থাকবেন ফ্রান গঞ্জালেস এবং নতুন নায়ক ভি পি সুহের। গোকুলমের শক্তিশালী আক্রমণ রুখতে কার্যত পাঁচ ডিফেন্ডারেই দল নামাবে মোহনবাগান। এ বারের সবুজ-মেরুনের ইঞ্জিন জোসেবা বেইতিয়া বলছিলেন, ‘‘যুবভারতীতে বৃষ্টি হলে আমরা সুবিধা পাব। স্পেনে এ রকম আবহাওয়ায় আমরা খেলে অভ্যস্ত।’’ তা অবশ্য মানতে চাননি বেইতিয়াদের কোচ কিবু। তাঁর মতে, ‘‘ম্যাচ পঞ্চাশ-পঞ্চাশ।’’
স্পেন এবং পোলান্ডে দীর্ঘদিন কোচিং করানো কিবু জানেন, ‘আমরা এগিয়ে’ বলা মানেই অযথা চাপ নেওয়া। সেটা কি কেউ নিতে চায়!
শনিবার ডুরান্ড কাপ ফাইনালে: মোহনবাগান বনাম গোকুলম এফসি (যুবভারতী), বিকেল পাঁচটা থেকে সরাসরি স্টার স্পোর্টস থ্রি চ্যানেলে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy