রঞ্জি ফাইনালের পরই কোচিংকে বিদায় জানাবেন কারসন ঘাউড়ি। —ফাইল চিত্র।
বাংলার পেস ত্রয়ী আছে তো কী, সৌরাষ্ট্রের আছে জয়দেব উনাদকট। রাজকোটে রঞ্জি ফাইনালের আগে ভেসে আসছে এমনই পাল্টা হুঙ্কার। আর তা দিচ্ছেন স্বয়ং সৌরাষ্ট্রের কোচ!
ঘটনাচক্রে সৌরাষ্ট্রের কোচ ছাড়াও তাঁর অন্য পরিচয় রয়েছে। তিনি প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটার তো বটেই। অনেক গর্বের মুহূর্তের শরিক। কিন্তু, এই আবহে তাঁর অন্য একটা পরিচয়ই বরং গুরুত্ব পাচ্ছে। কারসন ঘাউড়ি তো নিছক সৌরাষ্ট্রের কোচ বা প্রাক্তন ক্রিকেটার নন, তিনি বাংলারও প্রাক্তন কোচ যে!
সোমবার থেকে রাজকোটে বাংলা-সৌরাষ্ট্রের রঞ্জি ফাইনাল তাই তাঁকেও কোথায় একটা দ্বিধাবিভক্ত স্টেশনে দাঁড় করাচ্ছে। আর সেই কারণেই আনন্দবাজার ডিজিটালকে বলে ফেললেন, “দুটোই তো আমার দল। ভালবাসি দুটো দলকেই। যেমন কোনও বাবা-মার অনেক সন্তান। বাবা-মা কিন্তু সবাইকেই সমান ভাবে ভালবাসে। পক্ষপাতিত্ব করে না।”
আরও পড়ুন: ‘ক্রিকেটে এমন সময় আসে, যখন সব কিছু ক্লিক করে যায়, বাংলার এখন সেটাই ঘটছে’
আরও পড়ুন: ‘বার বার কঠিন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসছে, এমন বাংলা দল আগে দেখিনি’
এ তো গেল আবেগের কথা। রাজকোটের বাইশ গজে তো আবেগ থাকবে না। থাকবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আবহ। নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার মরিয়া জেদ। ট্রফি জেতার তীব্র তাগিদ। সেখানে বাংলা যতই তাঁর প্রাক্তন দল হোক না কেন, ঘাউড়ির কাছে তারা নিছক বিপক্ষই। কাদের হাতে উঠবে ট্রফি? উত্তর এল, “বাংলা দল যথেষ্ট শক্তিশালী। এই মরসুমে দুর্দান্ত কিছু পারফরম্যান্সও করেছে। তার জন্যই তো ওরা ফাইনালে উঠেছে। আমরাও তাই। অসাধারণ খেলেছে সৌরাষ্ট্রও। ফাইনালে তাই কঠিন লড়াই হবে। কে জিতবে বলা কঠিন। আমার মতে এটা ফিফটি-ফিফটি লড়াই।”
বাংলার পেস আক্রমণকে বর্তমান ঘরোয়া ক্রিকেটে দেশের সেরা বলে চিহ্নিত করেছেন কোচ অরুণলাল। অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরনও একই সুরে গলা মিলিয়েছেন। ঈশান পোড়েল, মুকেশ কুমার, আকাশ দীপদের দাপটে ইডেনে সেমিফাইনালে কর্নাটককে রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্ত দেখিয়েছে। ফাইনালেও বাংলার ভরসা যথারীতি পেস ত্রিভূজ। ঘাউড়ি অবশ্য পাল্টা শোনাতে চাইছেন উনাদকটের কথা। বললেন, “হ্যাঁ, বাংলার পেস ব্যাটারি ভাল খেলছে অবশ্যই। তবে তুলনা করলে আমাদের পেস আক্রমণও পিছিয়ে নেই। তাই দুই দলের পেসারদের মধ্যে ভাল যুদ্ধ হবে।”
সেমিফাইনালে গুজরাতের বিরুদ্ধে ১০ উইকেট নেওয়া উনাদকট সৌরাষ্ট্রের বোলিংয়ের সেরা অস্ত্র। —ফাইল চিত্র।
সৌরাষ্ট্রের পেসার বলতে ক্রিকেটমহলে সবার আগে আলোচিত হচ্ছেন জয়দেব উনাদকট। এই মরসুমে বাঁহাতি এই পেসার নয় ম্যাচে নিয়েছেন ৬৫ উইকেট। গড় অবিশ্বাস্য ১২.১৬। সদ্য সেমিফাইনালে গুজরাতের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে নিয়েছেন সাত উইকেট। ম্যাচে শিকারসংখ্যা ১০। ঘাউড়ির প্রধান অস্ত্রও হলেন দলের অধিনায়ক জয়দেব। কোচের কথায়, “উনাদকট চ্যাম্পিয়নের মতো বল করছে। এ দুর্দান্ত ছন্দে রয়েছে। যে কোনও পরিস্থিতিতে জ্বলে ওঠার ক্ষমতা ধরে ও।”
বাংলার ওপেনাররা যে বড় রানের ভিত গড়তে পারছেন না, বরং টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় বার বার চাপে পড়ে যাচ্ছে দল, তা অজানা নয় ঘাউড়ির। আর সেটা বলেও দিচ্ছেন, “বাংলার ওপেনাররা তো ভাল ফর্মে নেই। তাই না? অবশ্য থাকলেই বা কী হত! আমাদের দ্রুত ফেরাতে হবে ওপেনারদের। চিন্তা নেই, উনাদকট আছে তো।”
চেতেশ্বর পূজারার অন্তর্ভুক্তি যে ফাইনালে সৌরাষ্ট্রের ব্যাটিং গভীরতা বাড়াচ্ছে, তা মেনে নিচ্ছেন ঘাউড়ি। বললেন, “ও যোগ দেওয়ায় ব্যাটিং আরও জমাট হবে। পূজারা কেমন ব্যাটসম্যান তা তো আর বলার দরকার নেই।” একই ভাবে বাংলাও পাচ্ছে ঋদ্ধিমান সাহাকে। তবে তা মাথায় রাখছেন না ঘাউড়ি। তাঁর মতে বরং টস খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: ফাইনালে বাংলার দুই ওপেনারকে কী করতে হবে? টিপস দিলেন দুই রঞ্জিজয়ী বঙ্গসন্তান
আরও পড়ুন: এই দলের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মশলা রয়েছে, বলছেন সম্বরণ
বাংলা নাকি সৌরাষ্ট্র, ফাইনালের আগে কোন দলকে বেশি শক্তিশালী লাগছে? ঘাউড়ির উত্তর, “ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগই আমাদের শক্তি। সৌরাষ্ট্রের কোনও দুর্বলতা নেই। আর বাংলাও একই রকমের ভাল দল। এ বার কার কোথায় শক্তি, কোথায় দুর্বলতা, তা তো ১৩ মার্চই বোঝা যাবে।” বোঝা গেল, ধোঁয়াশা রাখতে চাইছেন বর্ষীয়ান কোচ।
একটা বিষয়ে অবশ্য ধোঁয়াশা কাটানোয় জোর দিচ্ছেন তিনি। এটাই কোচ হিসেবে তাঁর শেষ বছর। বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। পরের বছর এত ম্যাচের যাতায়াতের ধকল নিতে চাইছেন না একেবারেই। বললেন, “এই মরসুম দারুণ উপভোগ করেছি। ছেলেরা অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে। পজিটিভ থেকেছে। কোচ হিসেবে এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ ছিল। আর সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি সামনাসামনি।”
রঞ্জি ফাইনাল কোচ ঘাউড়ির শেষ চ্যালেঞ্জ। বিদায়বেলা রাঙিয়ে দিয়ে যাওয়ার মরিয়া তাগিদের জন্ম সেই কারণেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy