ইডেন-য়ুদ্ধের আগে ফুরফুরে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
মনে করুন, ক্রিকেট খেলা হয় না এমন এক দেশ থেকে ভারতে কেউ এসেছে! সেক্ষেত্রে গত তিন দিন এখানে কাটানো সেই বিদেশি নির্ঘাত ভাববে, ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধ লেগেছে! অন্তত আমাদের নিউজ চ্যানেলগুলো সে বেচারাকে এমনই ধারণা দেবে। যাদের একটা শনিবারের ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচকে আখ্যা দিয়েছে— ‘মহাভারত’! আর একটা চ্যানেলে হুঙ্কার— ‘পাকিস্তান খবর্দার, ইন্ডিয়া তৈয়ার’! আরও আছে। কারও শিরোনাম— ‘মহাসংগ্রাম’! কোথাও ‘টক্কর’! আমার এক সৃজনশীল বন্ধু আবার সেই ‘মওকা মওকা’-র স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। গত বছর ওয়ান ডে বিশ্বকাপের প্রচারে যেটা ওয়াঘার দু’প্রান্তেই ভাল খেয়েছিল।
আমি ঠিক জানি না, এগুলো ভারত-পাক ম্যাচের আগে নিউজ চ্যানেলগুলোর নিজেদের টিআরপি বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা, নাকি জাতীয়তাবাদ প্রকাশের আধুনিক কায়দা। আমি নিজে অনেকগুলো ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অংশ ছিলাম। বিশ্বকাপে, অন্য টুর্নামেন্ট বা দু’দেশের মধ্যে সিরিজে। আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন, সেই সব ম্যাচের কোনওটায় শাহিদ আফ্রিদি, কোনওটায় কামরান আকমলের সঙ্গে মাঠে আমার দেদার ঝামেলা হওয়া সত্ত্বেও আমরা এখনও খুব ভাল বন্ধু। ঈশ্বরের দিব্যি, আমরা ভুলেও দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে সমস্যা, রাজনৈতিক টানাপ়ড়েন নিয়ে কখনও কোনও কথা বলি না। আমাদের আড্ডা চলে প্রধানত ক্রিকেটারদের ভদ্রতাবোধ নিয়ে, যাদের সঙ্গে বা বিপক্ষে কোনও না কোনও সময় খেলেছি আমরা। শোয়েব আখতার আর আমার যেমন আড্ডার বিষয়বস্তু— ভারতে কেএফসি-র মান ভাল না পাকিস্তানের কেএফসি-র? দিল্লিতে যে হোটেলে সাধারণত ও ওঠে তার স্ট্যান্ডার্ড কেমন? যে সব রংচঙে আউটফিটে ও সগর্বে টিভিতে ধারাভাষ্য দেয় সেগুলোয় ওকে সত্যিই কতটা ভাল দেখায় তা নিয়ে।
অতএব আমার বিদেশি বন্ধুটিকে আমাদের দেশের নিউজ চ্যানেলগুলো শনিবারের ম্যাচ নিয়ে যে ধারণাই দিক, আমরা ভারতীয় বন্ধুটি ম্যাচটা নিয়ে যা-ই সৃজনশীলতা দেখাক, দিনের শেষে এটা ই়ডেনে স্রেফ আর একটা ভারত-পাক ক্রিকেট ম্যাচ। আজ যাঁরাই ইডেনের গ্যালারিতে থাকবেন, তাঁদেরকে আমার পরামর্শ— মাঠে যান আর প্রশংসা করুন মহম্মদ আমের নামের এক তরুণ বোলারের রোহিত শর্মা কিংবা বিরাট কোহালিকে বোলিং করার মুহূর্তকে। সেই সময় ভুলে যান ওরা কে কোন দেশের হয়ে বোলিং বা ব্যাটিং করছে। ভুলে যান এলওসি-তে কী ঘটছে। ভুলে যান স্বার্থপর শেয়ারহোল্ডারদের পাল্লায় পড়ে আমাদের কী বিপর্যস্ত অবস্থা হয়েছে। বদলে স্রেফ উপভোগ করুন দু’টো টিমের নিখাদ ক্রিকেট প্রতিভা, স্কিলকে। আফ্রিদির আসল বয়স কত আমি জানি না। তবে ও ভবিষ্যতে আর কোনও দিন ভারতে খেলতে আসবে কি না সন্দেহ আছে। সুতরাং ওকে দেখার এ বারই শেষ সুযোগ। আরে মাঠে স্রেফ উপভোগ করুন না মহম্মদ ইরফান, ওয়াহাব রিয়াজের খেলা। আমি তো মশাই করব।
আমার কাছে আজকের ম্যাচটা একটা ভাল পিচে পাকিস্তানের বোলিং বনাম ভারতের ব্যাটিংয়ের। ভারতীয়দের সঠিক লেংথে বল করার খোঁজে থাকবে পাকিস্তানিরা। ভারত যদি ম্যাচের সেকেন্ড হাফে ব্যাট করে তা হলে সেটা দেখতে বাড়তি আগ্রহী থাকব। কেননা বছরের এই সময় রাতের ই়ডেনে যখন তাপমাত্রা ঝুপ করে খানিকটা নেমে যায়, সাদা বল কিন্তু বেশি সুইং করে। আমাদের ক্যাপ্টেন এমএস ধোনির টস-ভাগ্য খুব ভাল। আশা করি আজও ও টসে জিতে আগে ব্যাট করে নেবে। এই ভারতীয় দলের জন্য আর একটা ভাল ব্যাপার— একঝাঁক ছেলে যারা খুব কমই এই ম্যাচটা খেলেছে। ফলে হারের বোঝাটোঝা ঘাড়ে তেমন কিছু থাকবে না। মাঠে নামার সময় মনের ভেতরে হারের ভূত খোঁচাবে না।
সব শেষে বলব, বেশি রাতের দিকে ম্যাচের রেজাল্ট যা-ই হোক না কেন, সবার প্রার্থনা হোক— আবেগের কাছে কেউ হারব না। কেউ টিভি সেট ভাঙব না। পটকা ফাটানোটা সীমাবদ্ধতা ছাড়াবে না। খোঁচা মার্কা ফেসবুক-টুইটার পোস্ট হবে না। ক্রিকেটারদের বাড়িতে ঢিল উড়ে আসবে না। তাদের পরিবারকে বিরক্ত করা হবে না।
বিশ্বাস করুন, আজ স্রেফ আর একটা দিন আমাদের জীবনে। কোনও স্পেশ্যাল ডে-ফে নয়। যা-ই হোক না কেন, আমাদের বিদেশি বন্ধুটির ভারত-পাক যুদ্ধ লেগেছে ভেবে এ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা করে ছাড়ব না!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy