স্বপ্নপূরণ: জয়ের পরে সতীর্থদের সঙ্গে বেইতিয়া (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র
গায়ে মোহনবাগানের টি-শার্ট। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন থেকে বেরিয়ে গুটি গুটি পায়ে বান্ধবী অইয়ানা ও দেবোরার সঙ্গে এগোচ্ছিলেন গাড়ি ধরতে। সেই সময়েই রবিবারের বড় ম্যাচে গোল করে ও করিয়ে নায়ক জোসেবা বেইতিয়ার দিকে ছুটে এল প্রশ্নটা।
বাড়ি ফিরে এ বার পরিকল্পনা কী? শুনেই প্রশ্নকর্তার দিকে চকিতে ঘুরে তাকান বেইতিয়া। মুখ আলো করা হাসি নিয়ে চিৎকার করে স্পেনীয় মিডফিল্ডার বলে ওঠেন, ‘‘আজ রাতে শুধুই পার্টি হবে। এই স্মরণীয় জয়ের পার্টি। এত দর্শকের সামনে গোল করে ম্যাচ জেতার আনন্দই আলাদা। এই দিনটা স্মরণীয় করে রাখতে আজ রাতে প্রিয় জনের সঙ্গে নাচব, গাইব, খানাপিনা করব। চাইলে আপনিও চলে আসতে পারেন।’’ বলেই হো হো করে হাসতে শুরু করে দেন মোহনবাগানের ১০ নম্বর জার্সিধারী। যোগ করেন, ‘‘ম্যাচ সেরা হয়ে তৃপ্ত নই। চাই আই লিগ ট্রফিটাও।’’
সবুজ-মেরুন শিবিরে মাঝমাঠের প্রধান অস্ত্রকে ততক্ষণে ঘিরে ধরেছেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। ২০১৮ সালের জানুয়ারির পরে ফের ডার্বিতে জয় তাঁদের। প্রায় ২৪ মাস পরে বড় ম্যাচ জয়ের আনন্দে প্রিয় নায়ক ও তাঁর বান্ধবীদের ঘিরে এ বার শুরু হল সমর্থকেদের নিজস্বী তোলার হিড়িক। যা দেখে এ বার বেইতিয়ার বান্ধবী অইয়ানাও বলে দেন, ‘‘দারুণ মজার এই দিনটা। আমাদের মতো মোহনবাগান সমর্থকদের মনেও তো উল্লাস।’’
ডার্বিতে প্রথম গোল করে বেইতিয়াও উচ্ছ্বাসে ফুটছিলেন। বললেন, ‘‘ডার্বিতে এই প্রথম গোল করলাম। আর এই জয় বান্ধবীদের পাশাপাশি উৎসর্গ করছি আমার প্রিয় বন্ধু জুলেন কলিনাসকে। বেচারা এই ম্যাচে খেলতে পারলে আজ আরও আনন্দ হত। তবে আমার বাবা খোসে বেইতিয়া স্পেনের বাড়িতে বসেই ম্যাচটা সরাসরি দেখেছেন। সেটাও সমান আনন্দের। ম্যাচের পরে অল্প কথা হয়েছে। বাড়ি গিয়ে বিস্তারিত কথা হবে বাবার সঙ্গে।’’
মোহনবাগান কোচ কিবু এ দিন বেইতিয়াকে নামিয়েছিলেন উইথড্রল ফরোয়ার্ডের ভূমিকায়। স্ট্রাইকার পাপা বাবাকর দিওয়ারার পিছনেই ছিলেন বেইতিয়া। আক্রমণের সময়ে মোহনবাগান হয়ে যাচ্ছিল ৪-২-৩-১। আর রক্ষণের সময়ে ৪-৪-২। দুই ছকেই বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখে দুরন্ত ফুটবল উপহার দিয়েছেন বেইতিয়া। কেবল উইথড্রল ফরোয়ার্ড হিসেবেই নন। রক্ষণ থেকে বল নিয়েও দু’তিন জনকে কাটিয়ে ইস্টবেঙ্গল রক্ষণে বারবার হানা দিচ্ছিলেন বেইতিয়া। তাঁকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছিল লাল-হলুদ শিবিরের রক্ষণ ও মাঝমাঠের ফুটবলারেরা। মোহনবাগানের পুরো দলটাকেই যেন এ দিন ‘ব্যান্ড মাস্টার’-এর মতো পরিচালনা করছিলেন বেইতিয়া। গোল করা ও করানোর পরে সঙ্গে প্রান্তি নিখুঁত সেটপিস। যা বারবার নজরে পড়ছিল।
প্রথমার্ধে ফ্রান গঞ্জালেসের শূন্যে ভাসিয়ে দেওয়া বল ধরে নংদাম্বা নওরেম যখন ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে পর্যুদস্ত করে নিখুঁত মাইনাস রাখছেন, তখন বেইতিয়া ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে শিকারি বাঘের মতো চুপিচুপি পৌঁছে গিয়েছিলেন বক্সের মধ্যে অরক্ষিত জায়গায়। তিনি যেন জেনেই গিয়েছিলেন বল তাঁর মাথা লক্ষ্য করে আসবে। সেই আগুয়ান বলে হেড করেই প্রথম গোল তাঁর। যে প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘নওরেম দুর্দান্ত বলটা বাড়িয়েছিল। ড্রেসিংরুমে ফিরেই ওকে ধন্যবাদ দিয়েছি।’’ মোহনবাগানের দ্বিতীয় গোল বেইতিয়ারই কর্নার থেকেই। হেডে গোল করেন পাপা বাবাকর জিয়োয়ারা।
এর আগে কলকাতা লিগের ডার্বিতেও ম্যাচ সেরা হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন বেইতিয়া। এ দিন সেই প্রসঙ্গ উঠলে অতীতে রিয়াল সোসিদাদ ‘বি’ দলে খেলে আসা এই ফুটবলার বলে দেন, ‘‘এই ম্যাচে জিতেছি। কিন্তু ওই ম্যাচটা ড্র হয়েছিল। তাই এই ম্যাচে সেরা হওয়ার মুহূর্তটাই এগিয়ে রাখব।’’
৮ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে আই লিগের শীর্ষে বেইতিয়ার দল মোহনবাগান। দ্বিতীয় স্থানে থাকা পঞ্জাব এফসি পিছিয়ে ছয় পয়েন্টে। আই লিগে কি চ্যাম্পিয়ন হতে পারেন আপনারা? এ বার সতর্ক বেইতিয়া বলেন, ‘‘চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করতেই পারি। কিন্তু তার জন্য আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। রক্ষণ ও মাঝমাঠে আরও পোক্ত হতে হবে আমাদের। সঙ্গে বাকি ম্যাচগুলোও জেতা চাই। বারো রাউন্ডের আগে পর্যন্ত এই ছন্দে বদল হওয়া চলবে না। তার আগে কোনও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়। অনেক কিছুই হতে পারে।’’
বেইতিয়ার মতোই এ দিনের জয়ী দলের অপর গোলদাতা পাপা বাবাকর জিয়োয়ারাও বলছেন, ‘‘এ রকম দর্শকঠাসা ডার্বি ম্যাচে গোল করার মজাই আলাদা। তার চেয়েও বড় ব্যাপার আমরা তিন পয়েন্ট পেয়ে শীর্ষেই থাকছি। সেটা আরও তৃপ্তির।’’ মিডফিল্ডার ফ্রান গঞ্জালেস বলছেন, ‘‘দ্বিতীয়ার্ধে চাপ বাড়ছে। এই দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে হবেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy