বন্ধু চামোরোর পাশে দাঁড়াচ্ছেন বেইতিয়া। —ফাইল চিত্র।
এক সময়ে হোসে রামিরেজ ব্যারেটোর জন্য গ্যালারিতে গান ধরতেন ভক্তরা, ‘শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, ব্যারেটোই ভরসা।’ ব্যারেটো-যুগ সেই কবেই শেষ হয়ে গিয়েছে মোহনবাগানে।
ওডাফা ওকোলি, সনি নর্দের জন্যও একবুক ভালবাসা উজার করে দিয়েছিলেন সমর্থকরা। লিখেছিলেন ছড়া। দিয়েছিলেন তাতে সুর। বাগানে এখন স্প্যানিশ সুঘ্রাণ ছড়াচ্ছেন জোসেবা বেইতিয়া। তাঁর পায়ে বল পড়লেই ভক্তদের চোখে স্বপ্ন।
সমর্থকদের কাছে ইতিমধ্যেই তিনি হয়ে গিয়েছেন ‘‘গ্রিন অক্টোপাস’’। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে নিখুঁত ভাবে পাস বাড়ানোর ক্ষমতার জন্যই তাঁকে এখন ডাকা হচ্ছে এই নামে। বৃহস্পতিবারের ‘মিনি ডার্বি’তে এই বেইতিয়াই সবুজ-মেরুনের আশা-ভরসা। লিগে মোহনবাগানের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার জিয়নকাঠি যে তাঁর পায়ে। বাগানের ১০ নম্বর জার্সিধারী চলতে শুরু করলে সবুজ-মেরুনকে থামায় কার সাধ্যি!
আরও পড়ুন- মেসি আর আমি মোটেও বন্ধু নই, ওর থেকে বেশি ব্যালন ডি’অর জিততে চাই, বললেন রোনাল্ডো
আরও পড়ুন-বিরাট-রোহিতের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ শিখর, বলছেন প্রাক্তন ভারতীয় স্পিনার
সাপ লুডোর লিগ এখন দারুণ জমে গিয়েছে। ট্রফি ঘরে তোলার জন্য লড়ছে পাঁচ-পাঁচটা ক্লাব। কলকাতার তিন প্রধানের সঙ্গে দৌড়ে রয়েছে পিয়ারলেস ও ভবানীপুরও। সাত ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে পিয়ারলেস। এক ম্যাচ বেশি খেলে সম সংখ্যক পয়েন্ট নিয়ে চারে কিবু ভিকুনার মোহনবাগান। আট ম্যাচ খেলে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের পয়েন্ট ১৩। সাদা-কালো শিবির রয়েছে পাঁচে। ইস্টবেঙ্গল আবার তিন নম্বরে। আর দু’ নম্বরে ভবানীপুর।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারছেন বেইতিয়া। চোয়াল কঠিন করে স্পেনীয় মিডফিল্ডার বলছেন, ‘‘লিগ জয়ের আশা রয়েছে আমাদেরও। তবে সবটাই আমাদের নিজেদের উপরে নির্ভর করে রয়েছে। লিগের বাকি ম্যাচগুলি আমাদের জিততেই হবে।’’
জয়ের রাস্তা ধরে সবুজ-মেরুনকে ছুটতে হলে বেইতিয়াকে মাঠে নেমে ফুল ফোটাতেই হবে। বাড়াতে হবে ঠিকানা লেখা পাস। গোলের দরজা খোলার জন্য তাঁকেই নিতে হবে বাঁক খাওয়ানো সব সেন্টার। রিয়াল সোসিয়াদাদের জার্সি পিঠে চাপিয়ে একসময়ে খেলা বেইতিয়া বলছেন, ‘‘ফ্রি কিক, কর্নার খেলারই অঙ্গ। বিপক্ষের জমাট রক্ষণ টপকে গোল করার জন্য অনেক সময়ে এগুলিই বড় ভূমিকা নেয়।’’ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলার পরেই ‘টিমম্যান’ বেইতিয়া বলেন, ‘‘ফুটবল দলগত খেলা। কারওর পক্ষেই একা লিগ জেতানো সম্ভব নয়। দল হিসেবে খেলতে পারলে তবেই লিগ জিততে পারি আমরা।’’
তবে কলকাতা লিগ এখন যে জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে, তাতে আর নতুন করে ভাবনাচিন্তা, পরীক্ষা নিরীক্ষার অবস্থা নেই কারওরই। হয় মারো, না হয় মর— এরকম পরিস্থিতি প্রতিটি দলের। পয়েন্ট নষ্ট করলেই লিগ দৌড়ের কক্ষপথ থেকে ছিটকে যেতে হবে। তাই সবার মতো সতর্ক কিবু ভিকুনা। সতর্ক বেইতিয়াও। মাঝমাঠের জেনারেল তিনি।
আবার বন্ধু সালভা চামোরোর ত্রাতাও। সবুজ-মেরুন স্ট্রাইকার চামোরোকে নিয়ে সন্তুষ্ট নন সবুজ-মেরুন দর্শকরা। মাঠে নেমেই স্পেনীয় স্ট্রাইকার গোলের বন্যা বইয়ে দেবেন, এমনটাই মরসুমের শুরু থেকে ধরে নিয়েছিলেন ভক্তরা। সেই জায়গায় দীঘল চেহারার চামোরো লিগে করেছেন মাত্র দু’টি গোল। ডুরান্ড কাপে দিয়েছিলেন চার-চারটি গোল। বন্ধু চামোরোর দিকে ধেয়ে আসা সমালোচনার সামনে দাঁড়িয়ে বেইতিয়া বলছেন, ‘‘সমর্থকদের প্রত্যাশা তো থাকবেই। প্রিয় দলের কাছ থেকে সেরাটা দেখার জন্যই তো মাঠ ভরায় ওরা। তবে চামোরোকে নিয়ে গেল গেল রব তোলার কিছু হয়নি। ও বেশ ভালই খেলছে। কলকাতা লিগ এবং ডুরান্ড কাপ মিলিয়ে চলতি মরসুমে এখনও পর্যন্ত ছ’টি গোল করে ফেলেছে। শুধু গোল করা নয়, গোলের পাসও বাড়িয়েছে। আর কী করবে চামোরো? ওর পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা একেবারেই চিন্তিত নই।’’
বন্ধুকে নিয়ে চিন্তিত নন বেইতিয়া। তাঁর চিন্তা বাড়িয়েছে কলকাতার কর্দমাক্ত মাঠ। ভারী মাঠে পাসিং ফুটবল খেলা হয়ে ওঠে কঠিন। বেইতিয়া বলছেন, ‘‘কলকাতার কাদা মাঠে খেলা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং। তবে কাল আমাদের খেলা সল্টলেক স্টেডিয়ামে। আশা রাখছি, আমাদের পাসিং ফুটবল খেলতে সুবিধাই হবে ওখানে। আমরা যদি নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারি তাহলে আমরাই জিতব।’’
যুবভারতীর সবুজ ঘাসে পাসিং ফুটবলের মায়াজাল বুনতে হলে বেইতিয়ার দিকেই তাকাতে হবে বাগান শিবিরকে। সবুজ-মেরুনের ১০ নম্বর জার্সিধারীই যে স্বপ্নের ফেরিওয়ালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy