স্বীকৃতি: আইসিসি-র সেরা ওয়ান ডে একাদশে ঝুলন। ফাইল চিত্র
আইসিসি-র দশক সেরা মেয়েদের ওয়ান ডে দলে জায়গা পেয়েও সেই বিনয়ী ঝুলন গোস্বামী। বাংলা থেকে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থার নির্বাচিত দশক সেরা পুরুষ ও মহিলা দলে জায়গা পেয়েছেন। তার পরেও ঝুলন বলে ফেলছেন, ‘‘দশক সেরা ওয়ান ডে দলে মনোনয়ন পেয়েও আমি খুব একটা কিছু আশা করিনি। বিশ্বের সেরা সব ক্রিকেটার রয়েছে। মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপ জিতিনি কখনও। তার পরেও কি আর জায়গা হবে দশক সেরা দলে?’’ আর নিজের নাম দেখে কী প্রতিক্রিয়া? ভারতের ডান হাতি মিডিয়াম পেসার বলছেন, ‘‘বিশ্ব একাদশে সুযোগ পাওয়াটা সম্পূর্ণ অন্য একটা অনুভূতি। বিশাল স্বীকৃতি। সত্যিই কখনও ভাবিনি এ রকম একটা দলে স্থান পাব।’’ কেন নয়? তিনি তো মেয়েদের ওয়ান ডে ক্রিকেটে বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি! বরাবরের বিনয়ী ঝুলনের জবাব, ‘‘আমার চেয়েও কত ভাল, ভাল সব ক্রিকেটার রয়েছে। ওরা বিশ্বকাপ জিতেছে। আমি পারিনি। তাই মনে হয়েছিল, চূড়ান্ত দলে হয়তো স্থান পাব না।’’
চাকদহ থেকে লোকাল ট্রেন ধরে রোজ কলকাতায় অনুশীলনে আসা। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে কিটব্যাগ সামলে ছুটতে ছুটতে মাঠে গিয়ে সাধনায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখা। ঝুলনের সেই সংগ্রাম করে উঠে আসার প্রেরণামূলক কাহিনি নিয়ে বায়োপিকও হচ্ছে। আর তাতে তাঁর ভূমিকায় অভিনয় করছেন অনুষ্কা শর্মা। বলিউড অভিনেত্রী সন্তানসম্ভবা বলে এবং অতিমারির কারণে আপাতত ফিল্মের কাজ বন্ধ। আইসিসি-র দশক সেরা ওয়ান ডে একাদশে ঝুলনের সঙ্গে রয়েছেন মিতালি রাজ-ও। যাঁকে নিয়ে বরাবরের মতোই মুগ্ধ ঝুলন, ‘‘আমি যখন দেশের হয়ে খেলতে শুরু করি, মিতালি তত দিনে বেশ প্রতিষ্ঠিত। খুব অল্প বয়সে সহ-অধিনায়ক হয়েছিল। মিতালি আমাদের কাছে উদাহরণ। সব সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কী ভাবে লড়াই করে ম্যাচ জেতাতে হয়, সেটা আমরা ওর থেকে শিখেছি। মিতালি আমাদের অনেকের কাছে আদর্শ। ওর অবদানকে আমি খুব সম্মান করি।’’ মিতালি মেয়েদের বিশ্ব ক্রিকেটে ওয়ান ডে-তে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী। ঝুলন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। দু’জনের হাত ধরে বিবর্তন ঘটেছে ভারতের মহিলা ক্রিকেটের। ‘‘মিতালি আর আমি একটাই স্বপ্ন দেখেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশকে এক নম্বর করার,’’ বলতে থাকেন ঝুলন, ‘‘২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও আমরা হেরে গেলাম। কিন্তু বিশ্ব অন্তত দেখেছিল, ভারত মেয়েদের ক্রিকেটে সেরা শক্তির একটা।’’ যোগ করেন, ‘‘কুড়ি বছর ধরে মিতালি আর আমার বন্ধুত্ব। কফির আড্ডাতেও কখনও আমরা নিজেদের মাইলস্টোন নিয়ে কথা বলিনি। সব সময় আলোচনা করেছি, কী ভাবে ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।’’ যোগ করেন, ‘‘এই দশক সেরা দলটায় মিতালি আছে দেখে তাই বেশি খুশি হয়েছি। দু’বছরের মধ্যে আমরা দু’টো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছি। খুশি মনে বলা যেতেই পারে ভারতের মহিলা ক্রিকেট অনেকটাই এগিয়েছে।’’
অতিমারির কারণে বেশির ভাগ দেশে কার্যত বন্ধই মেয়েদের ক্রিকেট। ঝুলনদেরই ফের কবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেখা যাবে, জানা নেই। এই সময়টায় কী ভাবে নিজেদের তৈরি রাখছেন? ‘‘প্রত্যেকেই ফিটনেস ট্রেনিং চালিয়ে যাচ্ছি। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফিটনেস ধরে রাখা। কারণ, অনেক দিন আমরা ম্যাচ খেলছি না,’’ বলছেন ঝুলন। বিশ্বকাপও পিছিয়ে গিয়েছে। তা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক বছর পিছিয়ে গিয়েছে বিশ্বকাপ। তাই নিজেদের ছন্দে রাখাটা বড় চ্যালেঞ্জ।’’ চাকদহ থেকে দৌড় শুরু করে দশক সেরা বিশ্ব একাদশে। সেরা প্রাপ্তি হিসেবে কোনটাকে বেছে নেবেন? ঝুলন বলেন, ‘‘২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা। কাপ জিততে পারিনি ঠিকই কিন্তু ভারতে মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে ভাবনাটা পাল্টে দিয়ে গিয়েছিল ওই বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠাটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy