কবে ফের এই মেজাজে দেখা যাবে, জানেন না ঝুলন। —ফাইল ছবি।
ব্রিটেনের পর ইউরোপে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দুই দেশ হল স্পেন ও ইটালি। আমেরিকার পর এই দুই দেশেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। খুব পিছনে নেই জার্মানিও। আর এই দেশগুলোতেই কি না ফুটবল লিগ চালু করার ভাবনা ডালপালা মেলেছে।
জার্মানিতে বুন্দেশলিগা ফের শুরু হচ্ছে ১৬ মে। স্পেনে লিয়োনেল মেসির বার্সেলোনা শুরু করে দিয়েছে অনুশীলন। রিয়াল মাদ্রিদ সোমবার থেকে নামছে প্র্যাকটিসে। যদিও লা লিগা কবে শুরু হবে তা স্পষ্ট নয়। ইটালিতেও সিরি আ কবে শুরু হবে তা পরিষ্কার নয়। তবে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো ফিরে এসেছেন তুরিন থেকে। বাধ্যতামূলক দুই সপ্তাহের কোয়রান্টিনের পর হয়তো অনুশীলনও শুরু করে দেবেন জুভেন্টাসের সতীর্থদের সঙ্গে।
আরও পড়ুন: চার হাজার দুঃস্থের পাশে দাঁড়ালেন সচিন
এই সব উদ্যোগ ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছেন ঝুলন গোস্বামী। জাতীয় দলের সিনিয়র পেসারের মতে, “গত কয়েক দিন ধরে কাগজে দেখলাম বেশ কয়েকটি দেশ ফুটবল লিগ শুরু করার কথা বলছে। জার্মান লিগ হবে বলেছে। লা লিগাও সে দিকে এগোচ্ছে। ইটালিতেও তেমন খবর রয়েছে। এটা বিশাল বড় পজিটিভ দিক। লকডাউনের বাজারে এর চেয়ে স্বস্তির খবর হয় না। ধীরে ধীরে হলেও পরিস্থিতির যে উন্নতি ঘটছে, এটা তারই ইঙ্গিত। এই খবরটা মোটিভেট করছে, উৎসাহ বাড়াচ্ছে। দেখুন, হুট করে তো সব কিছু থমকে গিয়েছিল। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গোটা দুনিয়া। এটা আমাদের জীবনে কখনও দেখিনি। এটা পৃথিবীতেও কখনও ঘটেনি। সেই অবস্থা থেকে যে খেলা শুরুর কথা ভাবা হচ্ছে, সেটা অনুপ্রাণিত করছে ভীষণ ভাবে। ফুটবল কী ভাবে শুরু হচ্ছে, কী ভাবে খেলা চলছে, সেটা অন্য খেলাগুলোর কাছেও শিক্ষার হয়ে উঠবে।”
ফুটবল অনেক বেশি শরীরী খেলা। বল দখলের লড়াইয়ে যেখানে মেতে ওঠে দুই দলের ২২ জন ফুটবলার। ২২ গজে ব্যাট-বলের যুদ্ধে সেই চাপ নেই। তবে ক্রিকেটেও যে ‘সামাজিক দূরত্ব’ বজায় রাখা সম্ভব নয়, মেনে নিলেন ঝুলন। তাঁর কথায়, “শুধু ফুটবল কেন, রাগবি আছে, কুস্তি আছে, অ্যাথলেটিক্সে রিলে রেসে ব্যাটন বদলানোর সময়ও তো কাছে আসার ব্যাপার আছে। ক্রিকেটেও আমরা একটা নির্দিষ্ট ধাঁচের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তার থেকে দূরে সরে আসা সহজ নয়। সময় লাগবে। কাউকে আউট করলে আমরা হাতে হাত ঠেকিয়ে সেলিব্রেট করি, ক্লোজ-ইন ফিল্ডার রাখি, একটা বলই হাতে হাতে ঘুরে বোলারের কাছে পৌঁছয়। এগুলো কী ভাবে পাল্টানো যাবে? কুস্তির মতো খেলা কি তা হলে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে? এই প্রশ্নগুলো থাকবে। তবে তার মধ্যেও এগোতে হবে। যখনই খেলা শুরু হোক, সচেতনতার সঙ্গে মাঠে নামতে হবে। আমরা জানি না, ভবিষ্যৎ কী হবে। তবে একটা ইতিবাচক খবর তো পাচ্ছি।”
থুতু ও লালা ব্যবহার করে বল পালিশ রাখা অভ্যাসে পরিণত ক্রিকেটারদের। বোলাররা যাতে পরের দিকে রিভার্স সুইং পেতে পারেন, সেটাই এর উদ্দেশ্য। কিন্তু করোনা-পরবর্তী সময়ে এটা গভীর উদ্বেগের ক্ষেত্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল ভাবছে, প্রয়োজনে বল-বিকৃতিকে আইনসিদ্ধ করার কথা। যা আবার ক্রিকেটবিশ্বকে বিভাজিত করে দিচ্ছে। ঝুলন অবশ্য এই বিতর্কে খুব একটা আগ্রহী নন। তিনি বললেন, “যে গাইডলাইন দেওয়া হবে, যা করতে বলা হবে, সেটাই করতে হবে। ক্রিকেটে তো নিয়ম পরিবর্তিত হয়েছে অনেক বার। আর সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়েছে। এ বারও তাই হবে। আমাদের ধাতস্থ হয়ে উঠতে হবে। কিছু জিনিস পাল্টাতে সময় লাগবে। আবার কিছু জিনিস না-ও পাল্টাতে পারে। এত তাড়াতাড়ি বিশ্লেষণে আমি নেই। এগুলো সবই যদি-কিন্তুর ব্যাপার। আইসিসি তো বিশ্বক্রিকেটের নিয়ামক। ওরা যা বলবে, সেটাই হবে।”
আরও পড়ুন: স্মিথ নয়, কোহালিকেই সেরা বেছে নিলেন অজি কিংবদন্তি
প্রতিষেধক যত দিন না আসছে, তত দিন কী ভাবে খেলাধূলা শুরু করা যাবে, তা নিয়ে ধোঁয়াশা যদিও রয়েছে। ঝুলন বললেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এখনও পরিষ্কার ভাবে কিছু বলেনি। আগে ওরা নির্দেশিকা জারি করুক। তার পর সেটা নিয়ে এগোতে হবে। প্রতিষেধক না বেরনো পর্যন্ত কী ভাবে প্রচুর মানুষকে নিয়ে খেলার আয়োজন হবে, সেটার একটা ধারণা তখন মিলবে। এখনও তো স্পষ্ট নয় কিছুই। তবে প্রথম প্রথম সব খেলাই ফাঁকা গ্যালারিতে করতে হবে। অন্তত প্রতিষেধক না বেরনো পর্যন্ত তা-ই করতে হবে। এখন লাইভ স্ট্রিমিং আর টিভিই তো প্রধান। সেগুলোই হবে।”
করোনা ক্রীড়াবিদদের কাছে অন্য রকম চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন ভারতের মহিলা দলের প্রাক্তন অধিনায়ক। চাকদহ থেকে উঠে আসা পেসারের মতে, “প্রতি দিন করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। মানসিক-শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকা খুব কঠিন। আগের ছন্দে ফিরতে সময় লাগবে। কতটা পিছিয়ে যেতে হল, সেটা বুঝতেও সময় লাগবে। এই যে হুট করে বসে যাওয়া, সেটাও প্রায় দু’মাস হতে চলল, সেখান থেকে ফেরা সহজ নয়। এই সময়ে শরীর একটা অন্য অভ্যাস গড়ে তুলেছে, সেটাতে রপ্ত হয়েছে। কেউ সারা রাত বই পড়ছে, ওয়েব সিরিজ দেখছে, কেউ দেরিতে উঠছে— জীবনের ধারাই বদলে গিয়েছে। সেখানে কী ভাবে নিজের সেরা ফর্মে সবাই ফিরবে, সেটা একটা ব্যাপার। আবার এত দিন বসে থেকে মাঠে নামতে গেলে চোট পাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সকালে উঠে ট্রেনিংয়ের পুরনো রুটিনে ফের মানিয়ে নেওয়া অনায়াস হবে না।”
যে কোনও ক্রীড়াবিদের কাছে প্রতিটা দিনই কঠিন। থাকতে হয় উন্নতির সরণিতে। উৎকর্ষের পথে। করোনা তার বাইরেও অন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। উন্নতি-উৎকর্ষ এখন পরে, আতঙ্ক কমলে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগে নিজের পুরনো মেজাজে ফিরতে হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy