প্রতিভা: বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি নিয়ে সাইনি। নবীন ভারতের মুখ। টুইটার
সিডনিতেই টেস্ট অভিষেক হয় নবদীপ সাইনির। তিন উইকেট নিয়ে প্রথম ম্যাচ শেষ করেন তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচের আগে ভারতীয় দলের সব চেয়ে অভিজ্ঞ পেসার যশপ্রীত বুমরা চোট পেয়ে ছিটকে যান। বুমরা চোট পাওয়ায় নবদীপ, মহম্মদ সিরাজ ও শার্দূল ঠাকুরের কাঁধে দায়িত্ব এসে পড়ে পেস বিভাগ সামলানোর।
ব্রিসবেনে অস্ট্রেলিয়ার দুর্গে সব চেয়ে অনভিজ্ঞ পেস বিভাগ নিয়ে বিপক্ষের ২০টি উইকেট তোলার কাজ কী করে করবে ভারত? বুমরা চোট পেয়ে খেলতে না পারলেও, মাঠের বাইরে থেকেই প্রত্যেককে পরামর্শ দিয়েছেন ম্যাচের আগে। সিরাজ, নবদীপ, শার্দূল ও নটরাজনকে ডেকে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেন গ্যাবার উইকেট সম্পর্কে। এই উইকেটে প্রভাবিত হয়ে অতিরিক্ত খাটো লেংথের বল করতেও বারণ করে দেন তিনি। তার সঙ্গেই বুমরার বিশেষ নির্দেশ ছিল, “রঞ্জি ম্যাচ ভেবে খেলো।”
শনিবার আনন্দবাজারকে ফোনে সেই গল্প শোনালেন সাইনি। বললেন, “কখনও কল্পনাই করিনি যে, আমাদের উপরে পেস বিভাগ সামলানোর দায়িত্ব এসে পড়বে। তা-ও আবার সিরিজের শেষ ম্যাচে। টেস্টের আগের দু'দিন বোলিং কোচ আমাদের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেন। প্রত্যেককে বিশেষ দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। কিন্তু একটা স্নায়ুর চাপ ছিল আমাদের মধ্যে।”
ম্যাচের দিন সকালে পেসারদের নিয়ে বিশেষ আলোচনায় বসেন বুমরা। শেষ মুহূর্তে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি? নবদীপের উত্তর, “বুঝিয়ে দিয়েছিল, ব্রিসবেনের পিচে কোন লেংথে বল করলে সফল হওয়া যায়। এ ছাড়াও বলছিল, প্রত্যেকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে সফল। সুতরাং ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। রঞ্জি ট্রফিতে যে রকম দাপটের সঙ্গে বল করেছি, এখানেও যেন বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করে যেতে পারি। বিপক্ষকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে আমরা অনভিজ্ঞ।”
সিডনি টেস্টে তিন উইকেট পেলেও গ্যাবায় একটিও উইকেট পাননি সাইনি। কারণ, প্রথম ইনিংসে বল করতে গিয়ে কুঁচকিতে চোট পান। দ্বিতীয় ইনিংস শুরু হওয়ার আগে অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে জানতে চান, নবদীপ আদৌ বল করতে পারবেন কি না। তৃতীয় টেস্টে চোট নিয়ে হনুমা বিহারী ও আর অশ্বিনের ম্যাচ বাঁচানো ইনিংস দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন তিনিও। নির্দ্বিধায় রাহানেকে জানিয়ে দেন, বল হাতে দলকে সাহায্য করতে তিনি তৈরি। চোট নিয়ে হাঁটতেই যেখানে সমস্যা হচ্ছিল, নবদীপ আরও পাঁচ ওভার বল করে বিপক্ষের রান আটকানোর চেষ্টা করেন। বলছিলেন, “এত বড় সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। ভারতকে জেতানোর সুযোগ বার বার আসে না। তাই কোনও ভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া হতে দিতে চাইনি।”
বর্তমানে নবদীপ সুস্থ। তবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম দুই টেস্টের দলে তাঁর নাম নেই। তা নিয়ে আক্ষেপ নেই এই ডানহাতি পেসারের। ভারতে ফিরে এলেও মন পড়ে রয়েছে ব্রিসবেনেই। ঐতিহাসিক জয়ের রাতের কথা ভুলতে পারছেন না হরিয়ানার তরুণ।
ব্রিসবেনে এই অনভিজ্ঞ পেস বিভাগ নিয়েও যে জেতা যায়, এই বিশ্বাস কী করে তৈরি হল দলের মধ্যে? নবদীপের জবাব, “আমাদের দলেই এমন সব চরিত্র রয়েছে যাদের দেখে অনুপ্রাণিত আমি। যেমন মহম্মদ সিরাজের কথাই বলি। বাবার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরে ওর কান্না সামলানো যাচ্ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম, এক-দু'দিনের মধ্যেই হয়তো বাড়ি ফিরে যাবে। কেউ ভাবতে পারিনি, ও থেকে যাবে।” যোগ করেন, “সেই সময় শামি, উমেশ ভাই ফিট ছিল। সিরাজের প্রথম দলে খেলার সম্ভাবনাও ছিল না। তবুও দলকে কতটা ভালবাসলে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, তা অনুভব করেছিলাম। সিরাজের ঘুরে দাঁড়ানো দেখে প্রত্যেকে অনুপ্রাণিত। আমি ভেবেছিলাম, নিজের সব চেয়ে প্রিয় মানুষকে হারিয়েও যদি কেউ এ রকম লড়াই করতে পারে, তা হলে আমরা কেন পারব না?”
সাইনি যদিও মনে করেন, ভারত যে সিরিজ জিততে পারে, সেই বিশ্বাস তৈরি হয় মেলবোর্নে অজিঙ্ক রাহানের সেঞ্চুরির পরে। নবদীপের স্বীকারোক্তি, “অনেকেই ভেবেছিল আমরা ০-৪ সিরিজ হারছি। কিন্তু অজিঙ্ক ভাইয়ের সেই লড়াই আমাদের মধ্যে জেতার খিদে তৈরি করে। দ্বিতীয় টেস্ট জেতার পরে কোচও বলেছিলেন, এ বার সিরিজ জেতার জন্য ঝাঁপাও। সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেশে ফিরে আসার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।” নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর জন্মদিন বিশেষ ভাবে পালিত হয় সাইনির বাড়িতে। শনিবার তাই উৎসবে মেতেছিলেন সব সদস্য। আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্য ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy