মহড়া: ইউরোয় প্রথম গোল পাওয়ার জন্য মরিয়া হ্যারি। ছবি রয়টার্স।
ইউরো ২০২০-র প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে দুর্দান্ত জয় দেখে মনে হয়েছিল, সহজেই শেষ ষোলোয় পৌঁছে যাবে ইংল্যান্ড। ভাবিনি দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র করবে হ্যারি কেন-রা।
ইংল্যান্ডের সমস্যা হল ধারাবাহিকতার অভাব। এ বার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গোল করতে না পারার ব্যর্থতা। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বৈরথ সব সময়ই ইংরেজদের কাছে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এই ম্যাচের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ১৪৯ বছরের আবেগ। স্কটল্যান্ডের অধিকাংশ ফুটবলারই ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ক্লাবে খেলে। আবার ইংল্যান্ডেরও অসংখ্য ফুটবলার স্কটিশ লিগে খেলছে। কিন্তু এই ম্যাচটা এলেই আবহ বদলে যায়। আমারও প্রচুর স্কটিশ বন্ধু রয়েছে। যদিও এই দ্বৈরথের দিনে ৯০ মিনিট আমরা একে অপরের প্রতিপক্ষ।
গত বৃহস্পতিবার স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের খেলা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে ফিল ফডেন, রাহিম স্টার্লিংদের গতিময় ফুটবলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি লুকা মদ্রিচেরা। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেই গতিটাই হারিয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের খেলা থেকে। তার উপরে হ্যারির পারফরম্যান্স। দু’টি ম্যাচেই দেখলাম ও বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।
ববি চার্লটন, জিওফ হার্স্টের মতো কিংবদন্তি স্ট্রাইকারদের খেলা দেখে আমি বড় হয়েছি। তার পরে দেখেছি গ্যারি লিনেকার, অ্যালান শিয়ারার, মাইকেল আওয়েন, ওয়েন রুনির মতো একাই ম্যাচের রং বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখা স্ট্রাইকারদের। ওদের চেয়ে হ্যারি একটু পিছিয়েই থাকবে। টটেনহ্যাম হটস্পার তারকার খেলার মধ্যে সেই মরিয়া ভাবটাও চোখে পড়ল না। একক কৃতিত্বে গোল করার ক্ষমতাও সীমিত। অপেক্ষা করে থাকে, কখন সতীর্থেরা ওকে বল সাজিয়ে দেবে গোল করার জন্য। ইউরোর গ্রুপ পর্বে আগের দু’টি ম্যাচ দেখে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড দশ জনে খেলছে।
ইংল্যান্ড দলের আক্রমণভাগের যা অবস্থা, তাতে চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হতে পারে। অঙ্ক করে দলকে খেলাচ্ছেন কোচ ইয়ারোস্লাভ শিহাভি। চেক প্রজাতন্ত্রের দলের ভারসাম্য খুব ভাল। দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট নিয়ে টেবলের শীর্ষ স্থানে রয়েছে ভ্লাদিমির দারিদা-রা। ইংল্যান্ডেরও দুই ম্যাচে চার পয়েন্ট। কিন্তু গোল পার্থক্যে পিছিয়ে থাকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কেভিন ফিলিপসরা। তাই খুব একটা স্বস্তিতে থাকার উপায় নেই। চেক প্রজাতন্ত্র যদি জিতে যায় এবং মঙ্গলবার ক্রোয়েশিয়াও বড় ব্যবধানে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়, তা হলেই সমস্যায় পড়বে ইংল্যান্ড। কারণ, তখন মদ্রিচদেরও চার পয়েন্ট হয়ে যাবে। গোল পার্থক্যে ইংল্যান্ডকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে ক্রোয়েশিয়ার।
এই কঠিন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার চেক প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধেও যদি ইংল্যান্ড কোচ গ্যারেথ সাউথগেট ফরোয়ার্ডে একা হ্যারিকে রেখে দল সাজান, তা হলে কিন্তু ফের সমস্যায় পড়তে হবে। আমার মতে, দুই স্ট্রাইকারে খেলা উচিত। স্টার্লিংয়ের পরিবর্তে জাডন স্যাঞ্চোই হতে পারে সাউথগেটের সেরা অস্ত্র। এর ফলে হ্যারিও চাপমুক্ত হয়ে খেলতে পারবে। একটা গোল পেলেই ও আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে।
বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে স্যাঞ্চো দারুণ খেলেছে। ফডেনের সঙ্গে ওর বোঝাপড়াও দুর্দান্ত। স্টার্লিং প্রথম ম্যাচে গোল করে ইংল্যান্ডকে জেতালেও খুব একটা ভরসা করার মতো নয়। গত মরসুমে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির প্রথম দল থেকে ওকে বাদ দিয়েছিলেন পেপ গুয়ার্দিওলা। আশা করব, সাউথগেটও সেই পথ অনুসরণ করবেন।
ইউরো ২০২০ শুরু হওয়ার আগে ইংল্যান্ডের রক্ষণ নিয়ে শুধু আমি একা নই, বিশেষজ্ঞেরাও চিন্তিত ছিলেন। প্রথম দু’টি ম্যাচে দারুণ খেলেছে জন স্টোন্স-রা। দুই সাইড ব্যাক কাইল ওয়াকার ও কিয়েরান ট্রিপিয়ার তো অসাধারণ। দুই প্রান্ত নিয়ে ক্লান্তিহীন ভাবে আক্রমণে উঠেছে। ওদের জন্যই ইংল্যান্ডের মাঝমাঠের ফুটবলারদের কাজ অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। তবে চেক প্রজাতন্ত্রের ফুটবলারেরা এই ম্যাচে কিন্তু সহজে ওদের খেলার জায়গা দেবে বলে মনে হয় না। ওদের খেলার ধরনই হল বল যত বেশি সম্ভব নিজেদের দখলে রেখে খেলা। যাতে বিপক্ষের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। ছন্দ নষ্ট হয়ে যায় ফুটবলারদের। স্কটল্যান্ডকে ওরা হারিয়েছিল এ ভাবে খেলেই। আমার মনে হয় ফডেন-দের আটকাতেও একই পরিকল্পনা নিয়ে ওরা মাঠে নামবে। আমার মতে ইংল্যান্ড যদি শুরু থেকেই গতিময় ফুটবল খেলে, তা হলে চেক প্রজাতন্ত্র সমস্যায় পড়বে। আমার বিশ্বাস, সাউথগেটের রণকৌশলও তৈরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy