Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Italy

ছুটছে নতুন ইটালি, তবু বোধনে সতর্ক মানচিনি

করোনা বিধ্বস্ত ইউরোপে কি মানুষের মুখে হাসি ফেরাতে পারবে ফুটবল? গোল এবং ফলাফল ছাপিয়ে জীবনের স্বাদ ফিরে পেতে মরিয়া ক্রীড়াপ্রেমীরা।

মহড়া: শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ইমমোবিলের সঙ্গে বল দখলের লড়াই জর্জিনহোর। আজ প্রতিপক্ষ তুরস্ক।

মহড়া: শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ইমমোবিলের সঙ্গে বল দখলের লড়াই জর্জিনহোর। আজ প্রতিপক্ষ তুরস্ক। গেটি ইমেজেস।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২১ ০৭:১২
Share: Save:

অবশেষে প্রতীক্ষার অবসান। করোনা অতিমারির কারণে এক বছর পিছিয়ে যাওয়া ইউরো শুরু হচ্ছে আজ, শুক্রবার ভারতীয় সময় মধ্যরাত পেরিয়ে। বোধনে নতুন রূপের, রবের্তো মানচিনির ইটালি নামছে তুরস্কের বিরুদ্ধে। যারা কখনও ইটালির মতো মহাশক্তির বিরুদ্ধে জেতেনি, কিন্তু অতীতে ইউরোর মঞ্চে চমক দেখিয়েছে।

করোনা আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে এক সময় উপরের দিকে ছিল ইটালি। ভয়াবহ পরিস্থিতি হয়েছিল প্রথম স্রোতের সময়। হাসপাতালে উপচে পড়ছিল রুগী, অ্যাম্বুল্যান্সের সাইরেনের শব্দ আর মৃতদেহের স্তুপের সেই ভয়াবহ ছবি আতঙ্কিত করে তুলেছিল মানুষকে।এখন অনেকটা স্বস্তি ফিরেছে। আর বিনোদন ফেরাচ্ছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ ইউরোর হাত ধরে। নজিরবিহীন ভাবে এ বারে ইউরো এগারোটি দেশে হচ্ছে। ইটালি তার মধ্যে অন্যতম। রোমে প্রথম দিনের ম্যাচে ১৬,০০০ দর্শককে মাঠে আসার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। ৫১টি ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই দর্শকেরা উপস্থিত থাকবেন। করোনা বিধ্বস্ত ইউরোপে কি মানুষের মুখে হাসি ফেরাতে পারবে ফুটবল? গোল এবং ফলাফল ছাপিয়ে জীবনের স্বাদ ফিরে পেতে মরিয়া ক্রীড়াপ্রেমীরা। মনে করা হয় হয় একটি ফুটবল ম্যাচ থেকেই ইটালিতে করোনা অতিমারি ছড়িয়ে পড়েছিল। আটলান্টা বনাম ভ্যালেন্সিয়ার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচে ৪০,০০০ দর্শক উৎসবে মেতেছিল। একে অপরকে আলিঙ্গন করছিল, চুম্বন করছিল। সন্দেহ করা হয়, এর পরেই করোনা অতিমারি ছড়িয়ে পড়ে ইটালিতে। ম্যাচটি হয়েছিল মিলানে। কিন্তু লোম্বার্ডি, বার্গামো অঞ্চল থেকে প্রচুর মানুষ এসেছিলেন খেলা দেখতে। এর পরেই সেই সব অঞ্চলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়তে থাকে। সেই ম্যাচে অংশ নেওয়া ফুটবলার, কর্মরত সাংবাদিক বা সংস্থার কর্তারা অনেকে করোনা আক্রান্ত হন। অভিশপ্ত ফুটবল কি ফিরবে আনন্দের ফুটবল হয়ে? দেখার অপেক্ষা গোটা দেশের মানুষ।

ইটালির দুশ্চিন্তা, মার্কো ভেরাত্তির হাঁটুর চোট এখনও সারেনি। তাঁকে প্রথম ম্যাচে পাওয়া যাবে না। রোমার মিডফিল্ডার লোরেনজ়ো পেলেগ্রিনিরও চোট রয়েছে। বুধবার ট্রেনিংয়ের সময় আহত হন তিনি। প্রথম ম্যাচে তিনিও অনিশ্চিত। তবে এই ইটালি দলে বিকল্পেরও অভাব নেই। বলা হচ্ছে, এত শক্তিশালী, এত সম্পূর্ণ ইটালি দল বহু দিন দেখা যায়নি। ইটালি মানেই যে শুধু দুর্ভেদ্য রক্ষণ, সেই চিরাচরিত ধারণাটাই পাল্টে দিতে চেয়েছেন মানচিনি। আকর্ষণীয়, উত্তেজক, গতিময় ফুটবল খেলছে এই ইটালি দল। যাঁদের ফুটবলের সঙ্গে তিকিতাকারও তুলনা করা হচ্ছে। যে দলে ডিফেন্ডারেরা নয়, মিডফিল্ডারদের ঘিরে তৈরি হয় ম্যাচের নকশা। তবে ভেরাত্তি এবং পেলেগ্রিনি না খেলতে পারলে মানচিনির পরিকল্পনা কিছুটা ধাক্কা খেতে পারে। সেক্ষেত্রে সদ্য চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী চেলসির জর্জিনহো, ইন্টার মিলানের নিকোলা বারেলা এবং ম্যানুয়েল লোকাতেল্লি— এই ত্রয়ীর উপর নির্ভর করতে হতে পারে়। বলে রাখা যাক, এই তিন জনও মোটেও খারাপ বিকল্প নন।

ইটালির ফুটবল ভক্তদের জন্য নতুন আশার আলো নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন রবের্তো মানচিনি। ২০১৮ থেকে অপরাজেয় এই দল। শেষ ২৭টি ম্যাচে হারেনি। অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ছুটছে। টানা আটটি ম্যাচ জিতে খেলতে নামছে তারা। আক্রমণে লোরেঞ্জো ইনসিনিয়ে, চিরো ইমমোবিলে এবং দোমেনিকো বেরার্দি— যে কোনও প্রতিপক্ষের মনে ভয় ধরানোর মতো ত্রয়ী। চেক প্রজাতন্ত্রে বিরুদ্ধে ইউরোর শেষ প্রস্তুতি ম্যাচেও চার গোলে জিতেছে ইটালি। তবে তুরস্কও চমক দেখাতে পারে। তাই সতর্ক থাকছেন কোচ মানচিনি। বলে দিচ্ছেন, ‘‘তুরস্ককে সম্মান করতেই হবে। ওদের দলটা প্রতিভায় ভর্তি। তা ছাড়া প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন।’’ করোনা-বিধ্বস্ত পৃথিবীতে ঘরের মাঠে ইউরোপ সেরার প্রতিযোগিতা। মানচিনি জানেন, কত বড় মঞ্চে খেলতে নামছেন তাঁর ফুটবলারেরা। যোগ করতে ভুলছেন না, ‘‘আবেগ থাকবে। কিন্তু আবেগে ভেসে গেলে চলবে না। বাঁধনহারা না হওয়াই ভাল।’’

নজরে: অনুশীলনের ফাঁকে কোচ রবের্তো মানচিনি।

নজরে: অনুশীলনের ফাঁকে কোচ রবের্তো মানচিনি। গেটি ইমেজেস।

সদ্য ফরাসি লিগ জয়ী লিলের তিন সদস্য রয়েছে তুরস্ক দলে। সব চেয়ে বড় নাম অবশ্যই অধিনায়ক এবং স্ট্রাইকার বুরাক ইলমাজ়। তুরস্কের কোচ সেনল গুনেস প্রতিপক্ষের নাম দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার লোক নন। বরং তাঁর মন্ত্রই হচ্ছে, ফুটবল খেলতে নামো শাসন করার জন্য। শাসিত হওয়ার জন্য নয়। তিনি বলে দিচ্ছেন, ‘‘প্রথম ম্যাচের ফল গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের শক্তিটা বুঝে নিতে চাই। হারলেও ভাল খেলা জরুরি।’’ যোগ করছেন, ‘‘ইউরোর মূল পর্বে আসা অবশ্যই তুরস্কের জন্য প্রাপ্তি। কিন্তু সেখানেই না থেমে আরও অনেকটা এগোতে পারি আমরা।’’

ইটালীয় ঘরানা ভেঙে পাসিং, প্রেসিং, পজ়েশন ফুটবল নিয়ে এসেছেন মানচিনি। যা ফুটবলভক্তদের মন তো জয় করে নিচ্ছেই, ইউরোতে আজ়ুরিদের অন্যতম প্রধান ফেভারিটের তকমাও পাইয়ে দিচ্ছে।

ইউরোতে নতুন ইটালিকে দেখার জন্য তৈরি থাকুন!

অন্য বিষয়গুলি:

Italy Euro Cup
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy