যুযুধান: মহড়ায় দু’দলের ভরসা। পিলকিংটন ও রয় কৃষ্ণ (ডান দিকে)। টুইটার
বাঙালির চিরকালীন আবেগের ডার্বির শতবর্ষ। আইএসএলে প্রথমবার মুখোমুখি এসসি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে-মোহনবাগান।
উত্তরের শ্যামবাজার থেকে দক্ষিণের গড়িয়াহাট, হাওড়া থেকে সল্টলেক। কোথাও জেজে লালপেখুলার কাট-আউট, লাল-হলুদ পতাকা। কোথাও আবার সন্দেশ জিঙ্ঘনের ছবি, সবুজ-মেরুন ব্যানার। করোনা আতঙ্কের মধ্যেও উত্তেজনার পারদ যখন ঊর্ধ্বমুখী, তখনই দুঃসংবাদ। বুধবার রাতে দিয়েগো মারাদোনার আকস্মিক প্রয়াণ ফুটবল মাঠে মহারণের আগে দু’ভাগ হয়ে যাওয়া বঙ্গজীবনকে যেন এক সারিতে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
অ্যান্টনি পিলকিংটন বনাম রয় কৃষ্ণ। রবি ফাওলার বনাম আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাস দ্বৈরথকে ঘিরে দুই প্রধানের সমর্থকদের চিরপরিচিত উন্মাদনা স্তিমিত। হুঙ্কারের বদলে শুধুই হাহাকার।
গোয়ায় দুই প্রধানের অন্দরমহলেও এক ছবি। বুধবার রাতেই লাল-হলুদ কোচ রবি ফাওলার টুইট করেছিলেন, ‘‘বড় হয়ে ওঠার সময় তুমিই সম্ভবত ছিলে সেরা। পরে বুঝেছি, তর্কাতীত ভাবে তুমিই সর্বকালের সেরা। দিয়েগো মারাদোনা, শান্তিতে থেকো।”
বৃহস্পতিবার সকালে অনুশীলনের পরে লাল-হলুদ কোচ রবি ফাওলার ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই বললেন, ‘‘মানসিক ভাবে আমি রীতিমতো বিপর্যস্ত। জানতাম নানা রকম শারীরিক সমস্যা ছিল দিয়েগোর। কিন্তু ভাবিনি এ ভাবে চলে যাবে। ফুটবলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ আরও বলেন, ‘‘ফুটবলের ইতিহাসে মারাদোনা সব সময় সেরার সেরাই থাকবে।’’
ডার্বি দিয়েই ভারতীয় ফুটবলে লিভারপুল কিংবদন্তির অভিষেক হবে। প্রতিপক্ষ কোচ এটিকে-কে দু’বার আইএসএলে চ্যাম্পিয়ন করা হাবাস। সব চেয়ে দেরিতে প্রস্তুতি শুরু করা এসসি ইস্টবেঙ্গল কতটা চাপে রয়েছে? লিভারপুলকে অসংখ্য কঠিন ম্যাচে জেতানো ফাওলার বলছেন, ‘‘সময় কম পেলেও আমরা সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত। ফুটবলারেরা তৈরি। কয়েক জনের সামান্য চোট রয়েছে। কিন্তু তা খুব বড় সমস্যা নয়।’’
কেরলের বিরুদ্ধে রয় কৃষ্ণদের ম্যাচ গত কয়েক দিনে একাধিক বার দেখেছেন ফাওলার-সহ এসসি ইস্টবেঙ্গলের মস্তিষ্করা। অনুশীলনে হাবাসের রক্ষণের চক্রব্যূহ ভাঙার মহড়ায় সব চেয়ে জোর দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচের কাছে একেবারেই অচেনা প্রতিপক্ষ এসসি ইস্টবেঙ্গল। তার উপরে চোটের কারণে মাইকেল সুসাইরাজ নেই। সমর্থকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেও হাবাস নির্লিপ্ত! বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁর জবাব, ‘‘আমার মনে হয় না এসসি ইস্টবেঙ্গল বাড়তি কোনও সুবিধে পাবে। ডার্বির আগে একটা ম্যাচ খেলতে পারা আমাদের জন্য ইতিবাচক। তবে এসসি ইস্টবেঙ্গলের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা খারাপ নয়। কারণ আমরা ওদের খেলা এখনও দেখিনি।’’ যোগ করলেন, ‘‘সুসাইরাজের ছিটকে যাওয়াটা দলের পক্ষে বড় ধাক্কা। জানি না ওকে এই প্রতিযোগিতায় আর পাব কি না।’’ সুসাইরাজের বিকল্প হিসেবে সবুজ-মেরুন কোচের ভাবনায় রয়েছেন শুভাশিস বসু। যদিও বলে দিলেন, ‘‘ম্যাচের দিন সকালেই আমি প্রথম একাদশ নির্বাচন করি। তাই এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় কারা খেলবে।’’ ডার্বিতেও যে রক্ষণ মজবুত করেই আক্রমণে ওঠার পরিকল্পা রয়েছে হাবাসের, তা অনেকটাই পরিষ্কার। স্পেনের কোচ হলেও তাঁর রণকৌশলে ইটালি ও জার্মান ঘরনার প্রভাব স্পষ্ট।
ফাওলার অবশ্য প্রথম থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ব্রিটিশ ঘরানার বদলে প্রাক্তন গুরু রাফায়েল বেনিতেসের মতো তিনিও পছন্দ করেন পাসের বন্যায় বিপক্ষেকে ভাসিয়ে দিতে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হওয়া এসসি ইস্টবেঙ্গলের থিম সং ‘এলো এলো’-র মধ্যেও যেন ফাওলারের দর্শনই ফুটে উঠছে। বৃহস্পতিবার সকালে অধিনায়ক হিসেবে ইপিএলে খেলা ড্যানি ফক্সের নাম ঘোষণা করে ফুটবলারদের উদ্দেশে ফাওলারের পরামর্শ, বিপক্ষের ডিফেন্ডারদের চাপে রাখতে নিজেদের মধ্যে দ্রুত পাস খেলে বার বার জায়গা বদল করতে হবে। রয় কৃষ্ণের দৌড় থামাতে সম্ভবত মাঠি স্টেনম্যানকে দায়িত্ব দিচ্ছেন তিনি। জেজে-কে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলের প্রাক্তন অধিনায়ক আই এম বিজয়ন ডার্বিতে কিছুটা হলেও এগিয়ে রাখছেন লাল-হলুদ শিবিরকে। বললেন, ‘‘অচেনা প্রতিপক্ষ সব সময়ই ভয়ঙ্কর। রবি ফাওলারের রণনীতি সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণাই নেই। এটিকে-মোহনবাগান কী ভাবে খেলে তা সকলেই জানে।’’ সবুজ-মেরুনের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য অবশ্য সতর্ক। তিনি বললেন, ‘‘ডার্বি নিয়ে বলা খুব কঠিন। এসসি ইস্টবেঙ্গলের সব চেয়ে বড় সমস্যা, কোনও রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ না খেলেই সরাসরি ডার্বিতে নামবে। বিদেশিদের সকলেই প্রথম বার ভারতে খেলবে। ফলে তাদের মানসিকতা কী রকম থাকবে জানি না। তাই আমার মতে এটিকে-মোহনবাগানই কিছুটা সুবিধে জনক জায়গায় রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy