দুই-গ্রহ: গোলের পরে উচ্ছ্বসিত এটিকের ডেভিড উইলিয়ামস। (নীচে) রেফারির সঙ্গে তর্ক বেঙ্গালুরু এফসি অধিনায়ক সুনীল ছেত্রীর। আইএসএল
কোনও ম্যাচ জেতার পরে আন্তোনিয়ো লোপেস হাবাসকে কখনও এ ভাবে লাফিয়ে উঠতে কেউ দেখেছেন?
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ ইতিহাসে প্রথম বার বেঙ্গালুরুকে হারাল এটিকে। সেই চমকপ্রদ ঘটনার পরে স্পেনীয় কোচের উচ্ছ্বাস এতটাই মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল যে, তাঁর সব গাম্ভীর্য যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য খসে পড়ল।
হবে না-ই বা কেন? বড়দিনের রাতে গোল করে ডেভিড উইলিয়ামস এটিকে সমর্থকদের কাছে সান্তা ক্লজ হলেন ঠিকই, কিন্তু গতবারের চ্যাম্পিয়নদের হারানোর পিছনে কাজ করল হাবাসের নিখুঁত রণনীতি। তাঁর মগজাস্ত্রের সফল প্রয়োগে সুনীল ছেত্রীর মতো ফুটবলার যেমন নির্বিষ হয়ে গেলেন, তেমনই এটিকের আক্রমণাত্মক মনোভাবের সামনে নতজানু হল কার্লোস কুদ্রাতের দল।
গত দু’বছরে এটিকে চারটি ম্যাচ খেলেছে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে। কখনও জয়ের সরণিতে উঠতে পারেনি। বুধবারের রাতে উৎসবে ভেসে যাওয়া যুবভারতীতে সেই চাকা তো ঘুরলই, সঙ্গে বাইরের মাঠে সুনীল-উদান্তদের জয়রথের চাকাও বসে গেল। পাশাপাশি অক্ষত থাকল যুবভারতীতে এই মরসুমে এটিকে-র অপরাজিত থাকার রেকর্ডও। ম্যাচের পরে এটিকে কোচের মুখ থেকে তাই বেরিয়েছে, ‘‘চ্যাম্পিয়ন দলকে হারিয়েছি। ওদের হারানো সহজ ছিল না। ছেলেদের খেলায় আমি গর্বিত। এই মরসুমে এটা আমাদের সেরা ম্যাচ।’’ পাশাপাশি হাসতে হাসতে হাবাসের মন্তব্য, ‘‘ডেভিড একা নয়, আমাদের দলের সবাই সান্তা ক্লজ।’’
বড়দিনের মতো উৎসবের দিনে ম্যাচ। স্টেডিয়াম জুড়েই ছিল তার ছোঁয়া। ফুটবলারেরা মাঠে নামলেন ক্রিসমাস ট্রি দিয়ে সাজানো পথ দিয়ে। বলবয় থেকে শুরু করে দর্শক, সকলের মাথায় সান্তা ক্লজের লাল টুপি। নিক্কো পার্ক, ইকো পার্ক, সায়েন্স সিটিতে লাখো মানুষের ভিড়। সেই মেজাজের সঙ্গে পা মেলাল যেন যুবভারতীও। প্রায় সাড়ে আঠারো হাজার দর্শক এসেছিলেন সুনীল ছেত্রী বনাম রয় কৃষ্ণের দ্বৈরথ দেখতে। অসাধারণ একটি গতিময়, প্রাণবন্ত ম্যাচ দেখলেন তাঁরা। একবার গোলে বল ঢুকলেও ভারতীয় ফুটবল সাম্প্রতিককালে এ রকম চোখের সুখ দেওয়া ম্যাচ কমই দেখা গিয়েছে।
খেলা শুরুর পঞ্চাশ সেকেন্ডের মধ্যেই গ্যালারির উৎসবের মেজাজকে তুঙ্গে তুলে দিতে পারতেন কৃষ্ণ। একের বিরুদ্ধে এক অবস্থায় বেঙ্গালুরুর গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুকে পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। অফসাইড ভেবে প্রতিপক্ষের রক্ষণ দাঁড়িয়ে গিয়েছে দেখে তাঁর গতি শ্লথ করাই কাল হল। গোল করতে পারলেন না কৃষ্ণ। পরে তাঁর একটি গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হল। বেঙ্গালুরুও যে সুযোগ পায়নি তা নয়। উদান্ত সিংহ, সুনীল ছেত্রী, গিমাস দেলগাদো গোলের সুযোগ পেয়েছিলেন। সুনীল স্বীকার করলেন, ‘‘গোলের সুযোগ পেলেও আমরা তা কাজে লাগাতে পারেনি।’’ বেঙ্গালুরু অধিনায়ক যা উহ্য রাখলেন, তা হল ১১ ম্যাচে বেঙ্গালুরু মাত্র ১০ গোল করেছে।
দুই বনাম তিনের লড়াই। দু’দলেই একাধিক জাতীয় দলের খেলোয়াড়। ভাল মানের বিদেশি। দু’দলের স্পেনীয় কোচই অস্ত্রগুলো ব্যবহার করলেন একেবারে দাবার বোর্ডের রাজা, মন্ত্রীর মতো। এটিকে কোচ তিন ডিফেন্ডারের সঙ্গে দুই উইং মিডিয়োকেও কার্যত রক্ষণে ব্যবহার করলেন। প্রবীর দাশ আর সুসাইরাজকে তাই হাতে গোনা কয়েকবার প্রতিপক্ষ বক্সের কাছাকাছি দেখা গেল। উল্টোদিকে বেঙ্গালুরু কোচ সুনীলের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছিলেন উদান্ত এবং দেলগাদোকে। মাঝমাঠ মুঠোয় রাখতে দুই কোচের অস্ত্র ছিল তিন বিদেশি এবং এক স্বদেশী। হাবাস ব্যবহার করলেন তাঁর নতুন স্পেনীয় অস্ত্র মেন্দি সোসা এবং জয়েশ রানেকে। উল্টোদিকে কুদ্রাত মাঝমাঠের দায়িত্ব দিয়েছিলেন দুই বিদেশি এরিক পার্তালু এবং রাফয়েল আগুস্তোকে। হাবাসের অঙ্ক ছিল সহজ, বিপক্ষের উইংকে অকেজো করে দেওয়া। পাশাপাশি দ্বিতীয় বল ধরে তা বিপদমুক্ত করে দেওয়া। দুটো ক্ষেত্রেই কলকাতা কোচের রণনীতি সফল।
সুনীলকে পালা করে মার্কিং করছিলেন এটিকে ডিফেন্ডারেরা। বাংলার জামাই সেই চক্রব্যূহে পড়ে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। নয় ম্যাচে মাত্র পাঁচ গোল খাওয়া বেঙ্গালুরু রক্ষণকে এটিকে ভাঙল বিরতির দু’মিনিট পরেই। পার্তালুর পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে জয়েশ রানে তা বাড়িয়ে দেন উইলিয়ামসকে। জোরালো শটে গোল করেন তিনি। বর্ষশেষে লাল-সাদা জার্সি সবার উপরে। ১০ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট এটিকের। দ্বিতীয় স্থানে থাকা এফসি গোয়ার ৯ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট। কিন্তু গোল পার্থক্যে টেবলের শীর্ষ স্থানে উঠে এল হাবাস-বাহিনী।
এটিকে: অরিন্দম ভট্টাচার্য, প্রীতম কোটাল, অগাস্টিন গার্সিয়া, সুমিত রথি, প্রবীর দাশ, জয়েশ রানে (শেহনাজ সিংহ), জাভি হার্নান্দেস, মেন্ডি সোসা পেনা, সুসাইরাজ, ডেভিড উইলিয়ামস (জবি জাস্টিন) ও রয় কৃষ্ণ।
বেঙ্গালুরু: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, রাহুল ভেকে (আশিক কুর্নিয়ান), অ্যালবার্ট সেরান পোলো, জুয়ান গঞ্জালেস, নিশু কুমার, হরমনজিৎ সিংহ খাবরা, এরিক পার্তালু, উদান্ত সিংহ, রাফায়েল আগুস্তো (থোঙ্গোসিম হাওকিপ), দিমাস দেলগাদো ও সুনীল ছেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy