Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Wriddhiman Saha

উইলিয়ামসন, ওয়ার্নারদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে ঋদ্ধিমান জানিয়ে দিলেন, এবার ওপেন করতে চান

গত আইপিএলে তাঁকে ম্যাচের পর ম্যাচ ডাগ আউটে বসিয়ে রেখেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তবে এতে ভেঙে পড়েননি।

কিপিংয়ের সঙ্গে ব্যাটেও ঝড় তুলতে মরিয়া ঋদ্ধি।

কিপিংয়ের সঙ্গে ব্যাটেও ঝড় তুলতে মরিয়া ঋদ্ধি। ফাইল চিত্র

সব্যসাচী বাগচী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ১৮:০৭
Share: Save:

ক্রিকেট জীবনের বেশির ভাগ সময় নিজেকে প্রমাণ করতে করতেই কাটিয়ে দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা। গত আইপিএলে তাঁকে ম্যাচের পর ম্যাচ ডাগ আউটে বসিয়ে রেখেছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ। তবে এতে ভেঙে পড়েননি। বরং অল্প সুযোগেই ব্যাট হাতে বাইশ গজে বিস্ফোরণ ঘটান। শেষের দিকে চোট পেয়ে আইপিএল থেকে ছিটকেও যেতে হয়েছিল। যদিও এ বার ফের নতুন ভাবে শুরু করতে চলেছেন। আগামী ২৮ মার্চ দলে যোগ দেবেন। তারপর ফের কঠিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হবে। নতুন অভিযান শুরু করার আগে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ‘সুপার ম্যান’ বুঝিয়ে দিলেন আগের বার কোথায় কোথায় ভুল করেছিল দল। জানিয়ে দিলেন, এবার দলকে ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, ওপেন করতে চান।

প্রশ্ন: গতবার আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ প্লে-অফে উঠেছিল। তারপর অল্পের জন্য ফাইনালে যেতে পারেনি। এবার কোন কোন জায়গায় মেরামত করা প্রয়োজন?

ঋদ্ধি: গতবার সানরাইজার্স হায়দরাবাদ মিডল অর্ডারে একাধিক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছিল। আইপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় এত পরীক্ষা করলে ক্রিকেটারদের উপর চাপ বাড়ে। কেউ দুটো ম্যাচ ব্যর্থ হলেই তাক বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার জন্য বেশ কিছু ম্যাচ আমাদের হারতে হয়েছে। এই ভুলগুলো যাতে না হয়, খেয়াল রাখতে হবে।

প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আপনি ওপেনিংয়ে বরাবর সফল। আইপিএলে সেটা বারবার প্রমাণ করেছেন। এবার ওপেন করতে চান?

ঋদ্ধি: এই ফরম্যাটে ওপেন করতেই আমি বরাবর স্বচ্ছন্দ বোধ করেছি। যে দলেই খেলেছি, তাদের হয়ে সাফল্য পেয়েছি। সেটা আমার পরিসংখ্যান ঘাঁটলেই বোঝা যাবে। বাংলা হোক কিংবা আইপিএলের দল, সব কোচকেই সেটা জানিয়েছি। এ বারও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ শিবিরে সেই বার্তা দিয়েছি। বাকিটা তাদের ব্যাপার।

প্রশ্ন: গত আইপিএল, অস্ট্রেলিয়া সফর, কিংবা ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে টেস্ট সিরিজের দলে থাকলেও বেশি খেলার সুযোগ পাননি। একজন পেশাদার হিসেবে এটা কতটা চাপের?

ঋদ্ধি: শুধু খেলাধুলা নয়, পেশাদার জগতে সবাই নিজেদের তুলে ধরতে চায়। কিন্তু আমি কী চাইলাম সেটা বড় কথা নয়। ক্রিকেট কিংবা ফুটবলে দল শেষ কথা। তাই অধিনায়ক ও কোচ যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আর তাই এটা চাপ নয়। কারণ ক্রিকেটে সবাইকে শূন্য থেকে শুরু করতে হয়।

প্রশ্ন: ভারতীয় শিবিরের মতে টেস্টে ব্যাটিংয়ে আপনার আরও উন্নতি করা উচিত ছিল। আপনারও কি সেটা মনে হয়?

ঋদ্ধি: এটা সত্যি যে টেস্টে শুরুতে ব্যাটসম্যান হিসেবে তেমন সাফল্য পাইনি। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সাফল্য পেয়েছি। তবে এটাও সত্যি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অ্যাডিলেড টেস্ট বাদ দিলে বেশিরভাগ ম্যাচেই আমার ব্যাট করার সময় ইনিংস ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তখন তো নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরের মতো ব্যাট করা সম্ভব নয়। সেই সময় ব্যাট চালাতে হবেই। আর তাতে অনেক বার আউট হয়েছি। তবে এতে আফসোস নেই। কারণ আমি দলের স্বার্থ অনুসারে ব্যাট করেছি। সেটা শুধু ভারতের ক্ষেত্রে নয়, আইপিএলেও এই মানসিকতা নিয়ে ব্যাট করি। গতবার দিল্লি ক্যাপিটালসের বিরুদ্ধে ৪৫ বলে ৮৭ রান করে আউট হয়ে যাই। আমি যখন আউট হই, তখন ১৫ ওভার চলছে। ইচ্ছে করলেই নিজের শতরানের জন্য ক্রিজে টিকে যেতে পারতাম। তবে আমি কিন্তু স্বার্থপরের মতো খেলিনি। এমন উদাহরণ অনেক আছে।

প্রশ্ন: মহেন্দ্র সিংহ ধোনি থেকে শুরু করে ঋষভ পন্থ, আইপিএল দলে জনি বেয়ারস্টো। কোনও না কোনও নাম কিন্তু আপনাকে সব জায়গায় তাড়া করে বেড়াচ্ছে?

ঋদ্ধি: এটা তো আমার কাছে নতুন নয়। ব্যাপারটায় আমি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। গত বার শেষ তিন ম্যাচে ভাল ব্যাট করেছিলাম। তবে এ বার ভারতের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজের প্রথম ম্যাচে বেয়ারস্টো রান পেল। এ বার হায়দরাবাদের হয়ে কে কিপিং করে সেটা দলের ব্যাপার।

কয়েক মাস আগেও ঋদ্ধিকে আগলে রাখতেন ভারত অধিনায়ক। ফাইল চিত্র।

কয়েক মাস আগেও ঋদ্ধিকে আগলে রাখতেন ভারত অধিনায়ক। ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: গত ছয় বছর আপনি বেশিরভাগ সময় চোট পেয়েছেন। এ বার কি চোট ছাড়া পুরো প্রতিযোগিতা খেলতে পারবেন?

ঋদ্ধি: ব্যাপারটা আমিও জানি। এটা নিয়ে পরিবারের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছি। কিন্তু কেউ তো ইচ্ছে করে চোট পেতে চায় না। তবে আমি কিন্তু চোটের পরোয়া না করেও কিপিংয়ে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি। পুরনো কিংবা নতুন জায়গায় চোট লাগতে পারে বলে একটুও চিন্তা করিনি। কেউ চোট এড়াতে ৮০ শতাংশ মাঠে দেয়। সেটা নিয়ে কোনও আলোচনা হয় না। আবার কেউ দলের স্বার্থে চোটের পরোয়া না করে খেললেও নজরে আসে না। কিন্তু কিছু করার নেই। এটা নিয়ে চলতে হবে।

প্রশ্ন: রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাডেজা, রশিদ খান। কার বোলিংয়ে কিপিং করা সবচেয়ে কঠিন?

ঋদ্ধি: রশিদ খান। আসলে বলের গতি হল রশিদের মূলধন। সঙ্গে রয়েছে লেগ স্পিন ও গুগলি। রাতে খেলা হওয়ার জন্য অনেক সময় ওর বল গ্লাভস বন্দি করা কঠিন হয়ে যায়। তাই তো ওর বোলিংয়ের সময় নেটে চলে যাই। ওর বলে অনুশীলন না করলে কিপিং করা অসম্ভব।

প্রশ্ন: নিজেকে উজ্জীবিত করার জন্য পুরনো ইনিংসের ভিডিয়ো দেখেন?

ঋদ্ধি: মাঝেমধ্যেই দেখি। তবে সেটা শুধু সময় কাটানোর জন্য। এতে উজ্জীবিত হওয়া গেলেও বাড়িত কিছু সুবিধা হয় বলে আমার মনে হয় না। কারণ একজন বোলার আমার বিরুদ্ধে যে ভুল করেছে সে তো পরের ম্যাচে একই ভুল নাও করতে পারে। কিংবা আমি যে পুরনো ভিডিয়ো দেখে পরের ম্যাচে দেদার রান করতে পারব এমন নিশ্চয়তা কোথায়!

আসন্ন আইপিএলে ফের এমন ক্যাচ ধরতে মরিয়া ঋদ্ধি। ফাইল চিত্র।

আসন্ন আইপিএলে ফের এমন ক্যাচ ধরতে মরিয়া ঋদ্ধি। ফাইল চিত্র।

প্রশ্ন: গত আইপিএলে জৈব বলয়ে থেকেছেন। একাধিকবার কোভিড পরীক্ষা করাতে হয়েছে। এটা কি বাড়তি চাপ? না ব্যাপারটা গা সওয়া হয়ে গিয়েছে?

ঋদ্ধি: চাপ হিসেবে দেখলেই নিজের খেলার উপর প্রভাব পড়বে। তাই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। নিয়ম যখন সবার জন্য সমান তখন সেটা মেনে নেওয়া আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাছাড়া যে কোনও বড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে থাকে অনেক মানুষের জীবন। তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে এই প্রতিযোগিতাগুলোর ওপর। সবদিক চিন্তা করেই জৈব সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হচ্ছে, এত অর্থ করা বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন: করোনার জন্য গত এক বছরে খেলোয়াড়দের জীবন কতটা বদলে গিয়েছে?

ঋদ্ধি: অনেকের কাছে ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি বলে মনে হলেও আবার বলছি এটা আমার কাছে স্কুলে, অফিসে যাওয়া কিংবা নিয়মিত স্নান করার মতোই নিয়ম। তাছাড়া আমি খুবই ঘরকুনো ছেলে। খেলার মাঠ থেকে হোটেলে ফিরে বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে না। তাই আমার কাছে অন্তত হাঁফিয়ে ওঠার কোনও প্রশ্ন নেই।

প্রশ্ন: দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার হার বাড়ছে। আপনার দুই ছোট সন্তান আছে। একজন পারিবারিক মানুষ হিসেবে এটা আপনার কাছে কতটা চিন্তার?

ঋদ্ধি: এটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। কিন্তু কিছু তো করার নেই। সব সবময় মাস্ক ও স্যানিটাইজার সঙ্গে রাখতে হবে। এর বাইরে তো আমাদের কাছে কোনও উপায় নেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy