চার উইকেট নিয়ে নাইট ব্যাটিংকে শেষ করে দিলেন দীপক চাহার। ছবি - টুইটার
পাড়ার ক্রিকেটে একটা কথা খুব চালু আছে, ‘ওকে মারতে দে। একটা সময় ক্লান্ত হয়ে নিজেই আউট হয়ে যাবে।’ আন্দ্রে রাসেল যখন ঝড় তুলছিলেন তখন ওঁর দলের ডাগআউট করতালি দিলেও, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি একেবারেই চাপে ছিলেন না। কারণ তিনি জানতেন যে রাসেল যতই ঝড় তুলুন, সেটা কালবৈশাখী ছাড়া আর কিছুই নয়। ‘দ্রে রাস’ কোনও ভাবেই আমপানের মতো তাঁর দলের উপর আছড়ে পড়বেন না।
কারণ শুরুতেই দীপক চাহার যে মোক্ষম ধাক্কা দিয়েছিলেন সেখান থেকে বেঁচে ফেরা সম্ভব ছিল না। আর সেটাই হল। বল হাতে ৪ ওভারে ৫৮ রান দিয়েছিলেন। তাই শেষ দিকে ৩৪ বলে ৬৬ রানে অপরাজিত থেকে একটা শেষ চেষ্টা করেছিলেন প্যাট কামিন্স। তবে এতে লাভ হয়নি। ফলে কলকাতা নাইট রাইডার্সকে ১৮ রানে হারিয়ে যেমন ধোনির চেন্নাই সুপার কিংস জয়ের হ্যাটট্রিক করার সঙ্গে লিগ তালিকার মগ ডালে চেপে বসল, তেমনই এ বার হারের হ্যাটট্রিক করল অইন মর্গ্যানের দল। পাওনা বলতে ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও ২০২ পর্যন্ত রানকে টেনে নিয়ে যাওয়া।
প্রতি ম্যাচেই কলকাতাকে নিত্য নতুন লজ্জা উপহার দিচ্ছে নাইট রাইডার্স। ব্যাটিং,বোলিং,ফিল্ডিং সব বিভাগে প্রতিদিন ব্যর্থ হচ্ছে অইন মর্গ্যানের দল। ২২০ রান তাড়া করে এই দলটা জিততে পারবে, সেটা হয়তো বেগুনী বাহিনীর অতি বড় সমর্থক পর্যন্ত ভাবতে পারেননি। কিন্তু একটা লড়াই তো থাকবে! নেতিবাচক বোলিং ও ফিল্ডিং দেখে ব্যাটসম্যানরাও যেন হারার আগেই হেরে বসেছিলেন। সেটা তো স্কোর বোর্ড দেখলেই বোঝা যায়। মাত্র ৩১ রানে চলে গেল ৫ উইকেট। এর মধ্যে দীপকের দখলে ৪ ও এনগিডি ১ উইকেট নিয়ে নাইটদের আইসিইউতে পাঠিয়ে দিলেন।
গত ১৬ এপ্রিল ১৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে পঞ্জাব কিংসকে শেষ করে দিয়েছিলেন দীপক। বুধবার রাতে ২৯ রানে ৪ উইকেট। যদিও সেটা ৩ ওভারে ১৬ রানে ৪ উইকেট ছিল। নিজের শেষ ওভারে কার্তিক ও রাসেল তাঁর বিরুদ্ধে ১৩ রান নেন। দুজন মিলে অসম লড়াই লড়লেন। তবে সেটা দীর্ঘ স্থায়ী হল না। রাসেল ২২ বলে ৫৪ রানে স্যাম কারেনের বলে ফিরতেই ভাঙল ৮১ রানে জুটি। কার্তিক ফিরলেন ৪০ রানে।
এ তো গেল ব্যাটিংয়ের কথা। অসহায় আত্মসমর্পণের উপাখ্যান তো বোলিং থেকে শুরু হয়েছিল। শুধু প্রথম একাদশে কিছু খেলোয়াড় বদল করলেই ভাল ফল পাওয়া যায় না। ভাল ফল করতে হলে আগুনে মানসিকতা থাকা দরকার। সেটাই তো মর্গ্যানের দলের নেই। মারাকাটারি আগুনে মেজাজের বড্ড অভাব। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে খারাপ বোলিং ও জঘন্য ফিল্ডিং। আর সেটা ধারাবাহিক ভাবে চলছেই। ফলে নাইট বোলিংকে আরব সাগরে ফেলে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২২০ রান তুলে দিল চেন্নাই।
শুরুটা করলেন দুই ওপেনার ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ও ফ্যাফ দু’প্লেসি। নাইটদের ছাল ছাড়িয়ে ১২.২ ওভারে প্রথম উইকেটে দুজন তুলে দিলেন ১১৫ রান। এরপর ঋতুরাজ ৪২ বলে ৬৪ রান করে বরুণ চক্রবর্তীর বলে আউট হলেন। চলতি আইপিএল-এর শুরুতে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। পরপর তিন ম্যাচে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তবুও ধোনি এই তরুণের উপর ভরসা রাখেন। অবশেষে অধিনায়কের ভরসার দাম দিয়ে আইপিএল-এ পঞ্চম অর্ধ শতরান করলেন। এই ইনিংসে মারলেন ৬টি চার ও ৪টি ছয়।
তবে তিনি ফিরলেও চেন্নাইয়ের রানের গতি কমেনি। মইন আলিকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে চোখের নিমেশে ৫০ রান যোগ করলেন ফ্যাফ দু’প্লেসি। দুজন যখন ক্রিজে ঝড় তুলছেন, ঠিক তখন সাজঘর থেকে বার্তা পাঠালেন মুখ্য প্রশিক্ষক স্টিফেন ফ্লেমিং। ১৬৫ রানের মাথায় মইন আউট হতেই ক্রিজে এলেন ধোনি। দু’প্লেসি তো মারমুখী মেজাজে ছিলেনই এ বার তাঁর সঙ্গে যোগ দিলেন এম এস। ৮ বলে ২টো চার ও ১টা ছয় মেরে ধোনি যখন ১৭ রানে ফিরছেন, তখন চেন্নাই ৩ উইকেটে ২০১ রান তুলে বেশ ভাল জায়গায়। এরপর নাইটদের বোলিংকে একেবারে গুঁড়িয়ে দেওয়ার বাকি কাজ সারলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন অধিনায়ক। অপ্লের জন্য শতরান না করতে পারলেও, ৬০ বলে ৯৫ রানে অপরাজিত রইলেন। মারলেন ৯টি চার ও ৪টি ছয়। ফলে ৩ উইকেটে ২২০ রান তুলে নাইটদের চাপ বাড়িয়ে দেয় চেন্নাই।
সেই ২০০৮ থেকে নাইটদের দেখলেই জ্বলে ওঠেন ধোনি ও তাঁর দল। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম গম্ভীর, দীনেশ কার্তিক কিংবা অইন মর্গ্যান বিপক্ষের অধিনায়কের নাম বদলে যায়। তবে ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই অভ্যাস বজায় রেখে চলেছে চেন্নাই সুপার কিংস ও অধিনায়ক ধোনি।
মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে লজ্জাজনক হারের পর দলের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন শাহরুখ খান। বিরাট কোহলীর বিরুদ্ধে হারের পর সবাই আশা করেছিল তিনি হয়তো টুইটারকে হাতিয়ার করে ফের মর্গ্যানদের ধমক দেবেন। তবে চুপ ছিলেন ‘কিং খান’। এ বার কি তিনি জোরালো বার্তা দেবেন? নাইট রাইডার্স কর্তার বার্তা দেখার অপেক্ষায় নেট মাধ্যমে সজাগ নজর রাখছে কলকাতা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy