স্বস্তি: গরমের হাত থেকে রেহাই পেতে পুলে নারাইনরা। কেকেআর
কেউ যদি মনে করে থাকেন, বাংলার জামাই বলে তিনি কলকাতার প্রতি বিশেষ ভাবে সদয়, আদৌ নয়। ক্রিকেট মাঠে তো নয়ই। সাক্ষী সিংহ ধোনির সঙ্গে তাঁর যে কলকাতার পাঁচতারা হোটেলেই আলাপ হয়েছিল, মরুশহরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে মহারণে নামার আগে তাঁর স্বামীর মনে রাখার দায় নেই।
বরং বরাবর বিপক্ষে কলকাতা নাইট রাইডার্স মানে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি কেমন যেন সত্যিই সিংহ হয়ে ওঠেন। ২০১০-এর আইপিএলের সেই ম্যাচের স্মৃতি আজও কেকেআর ভক্তদের মনে দগদগে। ইডেনে শেন বন্ডের বলে কনুই ভেঙে যাওয়া অবস্থায় তাঁকে পিটিয়ে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন ধোনি।
বন্ড তখন সবে কেকেআরে সই করেছেন। সেই সময়ে বিশ্বের দ্রুততম পেসারদের এক জন। কেকেআর ভক্তদের মুখে মুখে ঘুরছে ‘দ্য নেম ইজ় বন্ড’। ধোনির কনুইয়ে বন্ডের গোলা আছড়ে পড়ল। তার পরেও ৬৬ অপরাজিত করলেনই শুধু নয়, ড্রেসিংরুমে সামান্য শুশ্রূষা করিয়ে উইকেটকিপিং করতে চলে এলেন, দুর্দান্ত ক্যাচ নিলেন, দুঃসাহসিক অধিনায়কের মতো নেতৃত্ব দিয়ে কলকাতাকে হারিয়ে তবেই শান্ত হলেন। ম্যাচের পরে জানা গেল, কনুইয়ের হাড়ে চিড় ধরেছে। দশ দিনের জন্য আইপিএলের বাইরে। মাঠে তাঁর সিংহ বিক্রম দেখে কে বুঝবে!
সেই ধোনি এগারো বছর আগের। যিনি ছিলেন জঙ্গলের রাজা। যৌবনের সেই প্রতাপ এখন না দেখা যায় ব্যাটে, না পদচারণায়। কিন্তু তাতেও মস্তিষ্কের বাণে যে কত তফাত গড়ে দিতে পারেন, তা রোহিত থেকে বিরাট— অনুজরাও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। শেষ ম্যাচেও বিরাটের আরসিবি দুর্ধর্ষ টেক-অফ করেছিল। ধোনি তখনও সেই ‘কুল’। তাঁর দুই বিশেষজ্ঞ টি-টোয়েন্টি বোলার ডোয়েন ব্র্যাভো আর শার্দূল ঠাকুরকে নিয়ে এসে আরসিবির রথের চাকা বসিয়ে দিলেন। কেকেআরের বিরুদ্ধে ‘বুড়ো’ ধোনির রেকর্ড? শেষ পাঁচটি ম্যাচের চারটিতে জিতেছেন। তাঁর ঘনিষ্ঠ এক জন বলছিলেন, ‘‘শেষ বারের মতো আইপিএল জিতে মুকুট তুলে রাখতে পারলে ওর মতো অধিনায়কের জন্য আদর্শ ফেয়ারওয়েল হবে।’’ না হলে ‘মেন্টর’ হিসেবে জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে ঢুকে পড়তে চলা কারও এ রকম তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় অশ্বমেধের ঘোড়া ছুটিয়ে যাওয়ার উদাহরণ বিরল।
তেমনই উল্টো দিকে নবজাগরণের কেকেআর। তরুণ রক্তের তেজে ভয়ডরহীন কেকেআর। চেন্নাইয়ের মতোই যারা টানা দু’টো ম্যাচ শাসকের মতো জিতে খেলতে নামবে। যাদের হাতে বেঙ্কটেশ আয়ার, শুভমন গিল, রাহুল ত্রিপাঠীদের মতো টগবগে তরুণ রক্ত রয়েছে। রক্তাল্পতায় ভোগা ধুকপুক বাড়িয়ে তোলা ব্যাটিং যাঁরা পাল্টে দিয়ে নানা রংয়ের শটের রামধনুতে ইনিংস সাজাচ্ছেন। সুনীল নারাইন আবার পুরনো ঝলক দেখাচ্ছেন, দোসর বিস্ময় স্পিনার সিভি বরুণ। যিনি সাত রকম বলের ডালি নিয়ে উদয় হতে পারেন ব্যাটসম্যানের সামনে। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, লকি ফার্গুসনের মতো দেশি-বিদেশি পেস জুটি রয়েছে। যারা গতি এবং সুইংয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন।
আন্দ্রে রাসেলের মতো পাওয়ারহিটার আছেন। যাঁর সব চেয়ে প্রিয় প্রতিপক্ষ চেন্নাই সুপার কিংস। ধোনির দলের বিরুদ্ধে প্রায় পঞ্চাশের কাছে গড়, অবিশ্বাস্য সব ইনিংস রয়েছে ক্যারিবিয়ান তারকার। এই আইপিএলের প্রথম পর্বেই সিএসকে ম্যাচে ২২ বলে ৫৪ করে প্রায় জিতিয়েই দিয়েছিলেন। স্যাম কারেনের বলে আউট হয়ে ওয়াংখেড়ের প্যাভিলিয়নে ওঠার সিড়িতে বিধ্বস্ত হয়ে বসে থাকার সেই করুণ দৃশ্য এখনও অনেকে ভুলতে পারেননি। রাসেল নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন সে দিনের অপ্রাপ্তির হিসাব চোকাতে। কলকাতার চিন্তার জায়গা বলতে মিডল অর্ডার। অধিনায়ক অইন মর্গ্যানের ব্যাটে রান নেই। দীনেশ কার্তিককে কোথায় ব্যবহার করা উচিত, তা নিয়ে বিভ্রান্তি কেটেও কাটছে না। নাইট সংসারে খুবই জরুরি হয়ে ওঠা পরিবর্তনের ছোঁয়ায় ব্রেন্ডন ম্যাকালামের হাতে দলের শাসন ভার। ড্রেসিংরুমে কর্তাদের বকবক করতে শোনা যাচ্ছে কম, ক্রিকেটীয় মস্তিষ্করাই কথা বলছেন। ম্যাকালামদের কি চোখে পড়ল, কী ভাবে সিএসকে রণনীতিতে নিঃশব্দে বিবর্তন ঘটাচ্ছেন ধোনি?
এত কাল ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ‘ফিনিশার’ হিসেবে সকলে দেখেছে ধোনিকে। তিনি ক্রিজ়ে আসা মানেই ম্যাচ যাবে গভীরে, শেষ ওভার পর্যন্ত খেলা গড়াবে, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পরিস্থিতি থেকে প্রত্যাঘাত আছড়ে পড়বে। এই চেন্নাই তা করছে না। শেষের জন্য কাজ ফেলে রাখছে না। আরসিবিকে তারা হারিয়েছে ১১ বল বাকি থাকতে। ‘ফিনিশার’ ধোনির রমরমার যুগে ভাবাই যেত না।
সরে যাওয়ার আগে হলুদ জার্সিধারীদের নতুন রঙে সাজিয়ে দিতে চাওয়া মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। নতুন রক্তের ছোঁয়ায় ফুটতে থাকা কেকেআর। মহারণের জন্য তৈরি তো?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy