Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
আইপিএল ট্রফি জিতে ইডেনে আসতে চান
IPL 2020

মরুভূমিতে ঘূর্ণির মরূদ্যানের আশা দেখছেন কুলদীপ

কুলদীপের ক্রিকেট স্বপ্ন শুরু হয়েছিল ওয়াসিম আক্রম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে।

মহড়া: আমিরশাহিতে ক্রিকেট প্রস্তুতিতে কুলদীপের ফুটবল। কেকেআর

মহড়া: আমিরশাহিতে ক্রিকেট প্রস্তুতিতে কুলদীপের ফুটবল। কেকেআর

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে বসে ইডেনের অভাব অনুভব করছেন কুলদীপ যাদব। কলকাতা নাইট রাইডার্সের ২৫ বছর বয়সি চায়নাম্যান তারকা মনে করেন, এ বারের আইপিএলে সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে যাচ্ছে এটাই— দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলা।

‘‘ইডেন আমার প্রিয় মাঠ। পয়মন্ত মাঠ। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে আমার হ্যাটট্রিক আছে ইডেনে। ম্যাচের দিন ওখানে যে রকম আবহ থাকে, অবিশ্বাস্য! যে কোনও ক্রিকেটারের রক্ত টগবগ করে ফুটিয়ে তুলতে পারে ইডেন,’’ আমিরশাহি থেকে বললেন কুলদীপ যাদব। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্টে যাঁর বোলিং দেখে স্বয়ং শেন ওয়ার্ন নীচে নেমে গিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছিলেন। যোগ করছেন, ‘‘ইডেনের ওই গর্জনের কোনও বিকল্প হয় না। সব সময় আমাদের সমর্থন করে গিয়েছে ইডেনের জনতা। এ বারে অতিমারির জন্য ফাঁকা মাঠে খেলতে হবে। চ্যালেঞ্জের জন্য আমরা তৈরি ঠিকই। কিন্তু দর্শক না থাকাটা বড় পার্থক্য হয়ে দাঁড়াতে পারে,’’ বলছেন তিনি।

কেকেআর এ বারে নতুন প্রচার শুরু করেছে ভক্তদের উদ্দেশে— ‘তু ফ্যান নহী, তুফান হ্যায়’। কুলদীপের নিজস্ব বার্তা আছে, ‘‘তুফান নাইটদের কাছে আবদার, তাঁরা যেন ইডেনে খেলছি মনে করেই আমাদের সমর্থন করে যান। যাতে অনুপ্রাণিত হয়ে খেলতে পারি আর আমার একটা বড় স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’’ কী সেই স্বপ্ন? দ্রুত তাঁর জবাব, ‘‘তুফান ভক্তদের জন্য আইপিএল ট্রফি জেতা। তার পর সেই ট্রফি নিয়ে গিয়ে দাঁড়াতে চাই ইডেনের সবুজ ঘাসে।’’

আরও পড়ুন: নস্টালজিয়ার শারজায় সৌরভ, পাক ক্রিকেটারদের ছবি ‘ব্লার’ করা ঘিরে সঙ্গী বিতর্কও

আর কুলদীপের ক্রিকেট স্বপ্ন শুরু হয়েছিল ওয়াসিম আক্রম হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। ছোটবেলার কোচ যখন বোঝালেন, এই শরীর আর উচ্চতা নিয়ে পেস বোলিং করতে যেয়ো না বাবা, বরং স্পিনটাই চেষ্টা করো, খুবই ভেঙে পড়েছিলেন। তবে কোচ-সহ সকলকে চমকে দিয়ে অ্যাকাডেমিতে স্পিনার হিসেবে জীবনের প্রথম বলটাই কুলদীপ করেছিলেন চায়নাম্যান। অর্থাৎ, যে বলটা বাঁ হাতির কব্জির মোচড়ে করা লেগস্পিন। ডান হাতি ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে শরীরের দিকে আসবে।

এখন যা বিরল প্রজাতির স্পিন বোলিং। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এলিস আচং ছিলেন প্রথম চায়নাম্যান বোলার। তাঁর জন্মসূত্রে চিনা যোগাযোগ ছিল বলেই ‘চায়নাম্যান’ নামকরণ। ইংল্যান্ডের জনি ওয়ার্ডলে, অস্ট্রেলিয়ার চাক ফ্লিটউড-স্মিথ, স্যর গ্যারি সোবার্স— এই গ্রহের বিখ্যাত সব নাম। আধুনিক প্রজন্মের দুই পরিচিত নাম পল অ্যাডামস এবং কেকেআরে খেলে যাওয়া ব্র্যাড হগ।

আরও পড়ুন: ‘নিলামে কেউ না নিলেও আমার কিছু যায় আসে না’

কুলদীপ অনেক দিন পর্যন্ত এই বিরল তালিকায় নাম লেখাতে চাননি। আক্রম হওয়ার স্বপ্নেই বুঁদ ছিলেন তিনি। অবশেষে অ্যাকাডেমিতে এক দিন এক অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান তাঁর চায়নাম্যানে সম্মোহিত হয়ে স্টাম্প্ড হলেন। অতঃপর স্বপ্নালোক থেকে আক্রমের বিদায়। শেন ওয়ার্নের প্রবেশ।

কিন্তু চায়নাম্যানের মতো কঠিন শিল্প নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং ঠ্যাঙাড়ে বাহিনির মোকাবিলা কী ভাবে করবেন তিনি? আগের বারেই তো বেদম প্রহৃত হয়েছেন। কুলদীপের সংলাপ শোলের গব্বর সিংহের মতো শোনায়। ‘‘স্পিনার আমি। ডর গয়া, মর গয়া,’’ বরাবর বলে এসেছেন তিনি। টিমের কোচেদের সঙ্গে প্রচুর আলোচনা করেছেন। টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ে আরও মশলা যোগ করার কথাও ভেবেছেন। মরুভূমিতে মরূদ্যানের আশায় আছেন তিনি। বলছেন, ‘‘আমিরশাহিতে আমি আগে খেলেছি। অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছি। এশিয়া কাপ খেলেছি। সাধারণত শুকনো উইকেট হয় এখানে। আমিরশাহির পিচ স্পিনারদের সাহায্য করবে।’’ যোগ করেন, ‘‘মরুভূমির গরমেরও প্রভাব পড়বে। লম্বা টুর্নামেন্ট। প্রত্যেক দিন ম্যাচ হবে বলে পিচের ক্ষয় হতে থাকবে। দেখবেন, টুর্নামেন্টের দ্বিতীয়ার্ধে বিশেষ করে স্পিনারদের ভূমিকা আরও বেড়ে যেতে পারে।’’

নেটে আন্দ্রে রাসেলের মতো শক্তিমানদের বিরুদ্ধে বল করে নিজেকে তৈরি রাখছেন কুলদীপ। যাতে টি-টোয়েন্টি নামক বোলার-নিধন যজ্ঞে কোনও ভীমের গদার ঘায়ে প্রাণ না দিতে হয়। যদিও তিনি নিজে মনে করেন, কেকেআর শিবিরে সব চেয়ে ভাল স্পিন খেলা ব্যাটসম্যানের নাম দীনেশ কার্তিক।

জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে দিনের পর দিন কাটাতে গিয়ে মনের অসুখ দেখা দিচ্ছে না? অনেক দল যার জন্য মনোবিদ সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে। কুলদীপের জবাব, ‘‘এখন হোটেলের রুম থেকে বেরিয়ে মাঠ ছাড়া আর কোথাও যাচ্ছি না। এমনকি, খাবারও খাচ্ছি হোটেলের ঘরে। মনঃসংযোগটা পুরো ক্রিকেটের উপর রয়েছে। ক্ষতি হবে ভাবব কেন? লাভও তো হতে পারে।’’

তিনি কুলদীপ যাদব— বরাবরই বোধ হয় ব্যতিক্রম। কেউ যেটা ভাবে না, তিনি ভাবেন। তবেই না বিরল ক্রিকেট শিল্প চায়নাম্যানের পতাকাবাহী! এ বার আইপিএলের মঞ্চে কে জেতে— শক্তি না শিল্প, তারই রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা!

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2020 KKR Kuldeep Yadav
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy