Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
KKR

বিতর্কিত সব সিদ্ধান্তেও বাজিগর সেই নাইটরাই

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্য ক্ষণিকের জন্য বয়সকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। বিস্ময় ক্যাচের পিছনে সেই মাহি মগজাস্ত্র।

মোক্ষম: নারাইনের বিস্ময় স্পিনে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিতল কেকেআর।

মোক্ষম: নারাইনের বিস্ময় স্পিনে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে জিতল কেকেআর।

কলকাতা
সুমিত ঘোষ  শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২০ ০৬:০৯
Share: Save:

আবু ধাবির গ্যালারিতে বসে থাকা টিম মালিকের সেই বিখ্যাত সংলাপটার মতো— ‘হার কর জিতনে ওয়ালে কো বাজিগর কহতে হ্যায়’! হারা ম্যাচ অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে জিতে নেওয়ার এর চেয়ে ভাল উদাহরণ আর কী হতে পারে! কেকেআরের ১৬৭ রান তাড়া করতে নেমে মাঝপথে সিএসকে এক উইকেটে ৯০ তুলে অটোপাইলটে চলে গিয়েছে। দীনেশ কার্তিকের অধিনায়কত্ব দেখে ফের কথা উঠতে শুরু করেছে যে, বিশ্বকাপজয়ী অইন মর্গ্যান থাকতে এই লোকটা কেকেআরের ক্যাপ্টেন কেন?

চেন্নাই রান তাড়া করার সময়ে এগারো ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সুনীল নারাইনের দেখা নেই। অথচ, শেন ওয়াটসনের বিরুদ্ধে সব চেয়ে সফল ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনারই। এর আগে পনেরো ইনিংসে আট বার ওয়াটসনকে তুলেছেন নারাইন। এখনকার দিনে একটা দলে যত জন ক্রিকেটার থাকেন, তার প্রায় সমান সংখ্যক সাপোর্ট স্টাফ ঘোরেন। ভিডিয়ো বিশ্লেষণের জন্য থাকেন একাধিক বিশেষজ্ঞ, সফ্টওয়্যার, অ্যাপ। তার পরেও এমন সাধারণ তথ্য ক্যাপ্টেনের ল্যাপটপ গুলিয়ে ফেলে কী করে!

কার্তিক ১২তম ওভারে আক্রমণে আনলেন নারাইনকে। তত ক্ষণে ওয়াটসন ক্রিজে থিতু হয়ে গিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান স্পিনার আসার পর থেকেই কিন্তু খেলা ঘুরল। ওয়াটসনকেও তিনিই তুললেন। কার্তিক তাই যতই বাজি জিতে বেরিয়ে যান পর্দার বাজিগরের সামনে, বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে তর্ক চলতেই যাবে। শাহরুখের চেন্নাই এক্সপ্রেসেই কাটা পড়ল সিএসকে, এতটা গলা উঁচিয়ে বলা যাবে না। বরং কিছুটা যেন সিএসকে নিজেরাই সেমসাইড গোল খেয়ে ফিরল।

অধিনায়ক কার্তিকের অবশ্য একতরফা সমালোচনা নয়, প্রশংসাও প্রাপ্য। অবশেষে সুনীল নারাইনকে সরিয়ে রাহুল ত্রিপাঠীকে দিয়ে ওপেন করালেন। নাইটদের পাওয়ার প্লে অন্ধকারও কাটল। পুণে সুপারজায়ান্টের অধিনায়ক থাকার সময়ে ট্রায়ালে দেখে রাহুলকে বেছেছিলেন ধোনি। পুণের হয়ে কয়েকটা উত্তেজক ইনিংসও খেলেছিলেন তিনি। এ দিন ধোনিকে হারিয়ে ‘গুরুদক্ষিণা’ সম্পূর্ণ করে গেলেন রাহুল। ৫১ বলে ৮১ (আটটি চার, তিনটি ছয়, স্ট্রাইক রেট ১৫৮.৮২) রানের ইনিংসে সব চেয়ে বেশি করে চোখে পড়ল ভয়ডরহীন মনোভাব। এত বড় মঞ্চে নেমেও বুক কাঁপছে না। যা তিনি পেয়েছেন ক্রিকেট মাঠ থেকে নয়, কাশ্মীরে বাবা কর্তব্যরত থাকার সময়ে। ২০০১-এ সংসদে জঙ্গি হানার পরেই ভারতীয় সেনায় কর্মরত অজয় ত্রিপাঠীকে চলে যেতে হয়েছিল কাশ্মীরে। সীমান্তে মাইন নিষ্ক্রিয় করার ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল তাঁর। কত সেনা কর্মী এই কাজ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন! ভূস্বর্গ তখন রীতিমতো ভয়ঙ্কর। রাহুল, তাঁর বোন এবং মা রোজ বাবার ফেরার প্রার্থনায় বসে থাকতেন। বাবা ফিরতেন বাসে করে। দু’দিক থেকে উড়ে আসছে গোলাগুলি। পুরো যাত্রা বাসের মধ্যে মাথা নিচু করে বসে ফিরতে হত। শ্রীনগরে থাকার সেই সময়টাতে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে ক্রিকেট খেলাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল রাহুলের। সাড়ে তিন বছর পরে বাবা বদলি হয়ে পুণে আসার পরে শুরু হয় নতুন যাত্রা। আইপিএলের অভাবনীয় সব উত্থানের কাহিনিতে আরও এক নতুন সংযোজন রাহুল ত্রিপাঠী!

দুঃসাহসিক সেনা অফিসারের ছেলের দুঃসাহসিক ব্যাটিং আর নারাইন-বরুণের স্পিন যুগলবন্দিতে ১০ রানে জয় শাহরুখের মুখে হাসি ফিরিয়ে নাইটদের আইপিএল অভিযানকে ফের চাঙ্গা করে তুলল। কিন্তু অইন মর্গ্যানকে রোজই নতুন জায়গায় পাঠিয়ে ছন্দ নষ্ট করা হবে কেন? মর্গ্যান আইপিএলের শুরুর দিকেও কেকেআরে ছিলেন। একা-একা বসে থাকতেন বাইপাসের ধারের হোটেলের কফি শপে। কিন্তু সেই মর্গ্যান আর এই মর্গ্যান সম্পূর্ণ দুই পৃথিবী। গত কয়েক বছরে সাদা বলে মর্গ্যান ইংল্যান্ড ক্রিকেটে বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন। যে বিপ্লবের স্রোতে প্রথম বার বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড। এ বারে কেকেআরের হয়েও দারুণ ফর্মেও রয়েছেন। তাঁর আরও বেশি সম্মান, স্থায়িত্ব প্রাপ্য।

মহেন্দ্র সিংহ ধোনি অবশ্য ক্ষণিকের জন্য বয়সকে থামিয়ে দিয়েছিলেন। বিস্ময় ক্যাচের পিছনে সেই মাহি মগজাস্ত্র। যেই বুঝলেন, এক চেষ্টায় বল দখলে রাখতে পারবেন না, চাপড় মেরে থামালেন। তার পরে ঝাঁপিয়ে পড়ে দ্বিতীয় চেষ্টায় তুলে নিলেন ক্যাচ। কারও কারও নিশ্চয়ই মনে পড়ে গেল ছোট শহরের লম্বা চুলের সেই দামাল ছেলেটিকে। স্কুল জীবনে যে কি না গোলকিপার ছিল। কিন্তু উইকেটকিপার ধোনির আবেগ বুদবুদের মতোই ভেসে উঠে মিলিয়ে গেল। ১২ বলে ১১ ফের প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল, মহেন্দ্রক্ষণ এখন কি শুধুই অতীত অ্যালবামের অঙ্গ? আইপিএলে এত বছরে নারাইনকে তিনি একটিও বাউন্ডারি মারতে পারেননি! অবিশ্বাস্য! এ দিন নাইট রাইডার্সের নতুন বিস্ময় বোলার সি বরুণ তাঁর উইকেট তুলে ম্যাচের পরে নিজস্বী তুলে রাখলেন। বিশ্বকাপে ছক্কা মেরে জেতানো কিংবদন্তির উইকেট! বরুণের সারা জীবনের সংগ্রহশালায় থাকার মতো কোহিনুর এই ছবি! একটা যুগ শেষ হয়ে আসছে। কে জানে, আর কত দিন নিজস্বী তোলার সুযোগ হবে!

অন্য বিষয়গুলি:

IPL 2020 KKR CSK
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy