Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Cricket

আমিরশাহিতে কম পড়বে না ক্রিকেট আর শাহরুখ প্রেম

এটাও আরও এক বার বুঝে গিয়েছিলাম যে, কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের সব চেয়ে বড় সুপারস্টার অবশ্যই দলের মালিক শাহরুখ খান।

হাতিয়ার: ব্যাটে লেখা ‘ডেঞ্জার-রাস’। ঝড় তুলতে প্রস্তুত রাসেল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

হাতিয়ার: ব্যাটে লেখা ‘ডেঞ্জার-রাস’। ঝড় তুলতে প্রস্তুত রাসেল। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

লক্ষ্মীরতন শুক্ল
শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ০৬:৩৪
Share: Save:

সংযুক্ত আরব আমিরশাহি মানেই আলিশান বিল্ডিং, দুর্দান্ত সব স্থাপত্যশিল্প, পরিষ্কার রাস্তা আর প্রচণ্ড গরম। আইপিএল খেলার সুবাদেই মরুদেশে পা রাখার সুযোগ পাই ২০১৪-তে। ভারতের বাইরে আগেও আইপিএল খেলেছি দক্ষিণ আফ্রিকায়। কিন্তু আমিরশাহির উন্মাদনার সঙ্গে অন্য কারও তুলনাই চলে না। দুবাই বা আবু ধাবিতে কর্মরত অনেক ভারতীয় আছেন। যাঁরা সব সময় দেশে আসতে পারেন না, তাঁদের কাছে আইপিএল দেখতে পাওয়াটা একটা বড় প্রাপ্তি, সে বারই খেলতে গিয়ে বুঝেছিলাম।

আর এটাও আরও এক বার বুঝে গিয়েছিলাম যে, কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের সব চেয়ে বড় সুপারস্টার অবশ্যই দলের মালিক শাহরুখ খান। নাইটদের ম্যাচের দিন মাঠ একেবারে ভর্তি হয়ে যেত। অন্য কোনও দলের জন্য এ রকম উন্মাদনা লক্ষ্য করিনি। সমর্থকেরা মাঠে আসতেন প্রিয় তারকাদের সঙ্গেই তাঁদের স্বপ্নের বলিউড নায়ককে এক ঝলক দেখার জন্য।

মনে আছে, সে বার খেলতে রওনা আগে শাহরুখের হাতে অস্ত্রোপচার হয়। কা সত্ত্বেও আমাদের সঙ্গে দুবাই উড়ে যেতে এক বারও দ্বিধাবোধ করেনি। মরুদেশে পৌঁছনোর পরে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শহর ঘোরাতে। বুর্জ খলিফার উচ্চতা থেকে বুর্জ-আল-আরবের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। আর আমাদের সে দিনের সেই ভ্রমণে বাসের একেবারে সামনের আসনে বসেছিল শাহরুখ। আমাদের দলের প্রচারের জন্য ও নিজে সমর্থকদের উদ্দেশে হাত নাড়িয়ে অভ্যর্থনা গ্রহণ করেছিল। শুধুমাত্র নাইটদের সমর্থন

বাড়ানোর তাগিদে।

প্রথম ম্যাচ ছিল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে আবু ধাবিতে। মাঠে গিয়ে দেখলাম দর্শকাসনে বেগুনি স্রোত বয়ে যাচ্ছে। মুম্বইয়ের নীল পতাকা একেবারে হারিয়ে গিয়েছে সোনালি, বেগুনি রংয়ে। মনে হচ্ছিল না, ভারতের বাইরে এসেছি। মাঠে আমরা একটা উইকেট নিচ্ছিলাম বা আমাদের ব্যাটসম্যানেরা বাউন্ডারি মারছিল আর স্টেডিয়ামে উঠছিল নাইট সমর্থকদের গর্জন। সব চেয়ে বেশি গর্জন শোনা যাচ্ছিল মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে শাহরুখের মুখ ভেসে ওঠায়।

যে পাঁচটি ম্যাচ কেকেআর খেলেছিল, তার মধ্যে চারটেতেই আমরা হেরেছিলাম। একমাত্র জিতেছিলাম রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচের পরে রাত দেড়টার সময় হোটেলের কাফেতে বসে চা খাচ্ছিল শাহরুখ। আমি কিছু একটা আনতে গিয়েছিলাম। আমাকে ডেকে পাশে বসাল। বলল, আমরা হারার মতো একটি ম্যাচও খেলিনি। আজ যে ভাবে সবাই সেরাটা দিয়েছে, এ ভাবেই প্রত্যেক ম্যাচে দিচ্ছে। তবুও কেন হারছি? নিজেই বলে উঠল, এই পরিস্থিতি থেকে কেকেআর যে চ্যাম্পিয়ন হতে পারে, সেটা আমরা দেখাতে পারি তো লক্ষ্মী? সে বারই কিন্তু টানা ন’টা ম্যাচ জিতে আমরা ফাইনালে উঠি। আর ট্রফিও জিতি। ফাইনালে আমরা হারাই কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে। দুবাইয়ের সেই রাতে এসআরকে-র সঙ্গে সেই কথোপকথন তাই ভোলা যাবে না।

মরুশহরের গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার প্রভাব পড়ে পিচের উপরেও। ওখানে ঘাসের উইকেট কখনও হয় না। বল সুইংও করে না। মানে ব্যাটসম্যানদের শাসন দেখার জন্য তৈরি থাকুন সবাই। আগে কলকাতা ও ঢাকার উইকেটের চরিত্র যে রকম ছিল, আমিরশাহিতে ঠিক তেমনই থাকে। শারজা, আবু ধাবি, দুবাই— এই তিনটি শহরেই আন্তর্জাতিক মানের মাঠ রয়েছে। ভারতের মতো আট-দশটি শহর জুড়ে ম্যাচ হওয়ার সুযোগ নেই। তাই পিচ ভেঙে গেলে তা সারিয়ে তোলার সময় পাওয়া যায় না। তাই প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ভাগে স্পিনারদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

গরমের জন্যই দুপুরে কখনও অনুশীলন করা যেত না। বিকেলের পরে প্র্যাক্টিস করতাম। ওখানে নেটে বল করার বোলার খুব একটা পাওয়ায় যেত না। যে কেউ আমাদের নেটে বল করতে চলে আসত। দুবাইয়ের শেখদেরও দেখেছি বেদুইনদের মতো পোশাক পরে আমাদের বল করেছে। তাঁদের অনেকেই কোটিপতি ব্যবসায়ী। কিন্তু কোনও অহঙ্কার নেই। প্রকৃত ক্রিকেটপ্রেমী। আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে দলের ‘অ্যান্থেম’ও গেয়েছেন তাঁরা ‘করব, লড়ব, জিতব রে।’

এ বারের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম। ক্রিকেটারেরা গিয়ে দুবাইয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে না। অতিমারির কারণে জৈব সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে। ৭৫ দিন এ ভাবে টানা এক জায়গাটাই বড় পরীক্ষা। আসলে আইপিএল মানে ক্রিকেটের সঙ্গেই অনেক আনন্দ, উল্লাস, সমর্থকদের ভিড়, চাকচিক্য। সে সব হয়তো দেখার সুযোগ থাকবে না। তবু একটা কথা বলতে পারি, ক্রিকেটপ্রেম আর বাজিগরের দল নাইট রাইডার্স নিয়ে সমর্থনের অভাব পড়বে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Cricket Cricketer KKR IPL 2020 UAE
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy