বিশ্বকাপ কি উঠবে প্রিয়ম গর্গের হাতে? ফাইল ছবি।
জীবনটা সরলরেখায় চলেনি প্রিয়ম গর্গের। দেখেছেন কঠিন সময়। সেই কঠিন সময়ের আঘাতে ভেঙে যাওয়া নয়, বরং সাধনায় ডুব দিয়েছেন তিনি। আর সেই সাধনার স্বীকৃতি হল ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের অধিনায়ক ঘোষিত হওয়া। পরের বছর জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় বসছে বিশ্বকাপের আসর। তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন এখনই। এরই মধ্যে বুধবার এসেছিলেন মেরঠে। শনিবার থেকে বেঙ্গালুরুতে ফের জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চলবে প্র্যাকটিস। তারই মধ্যে আনন্দবাজার ডিজিটালের সঙ্গে কথা বললেন সদ্য উনিশে পড়া ভারতীয় ক্রিকেটের ভাবী তারকা।
অনূর্ধ্ব বিশ্বকাপে ভারতের রেকর্ড দুর্দান্ত। বিরাট কোহালি থেকে পৃথ্বী শ, সবাই বিশ্বকাপ হাতে তুলেছেন। আপনিও কি বিশ্বকাপ হাতে তোলার স্বপ্ন দেখছেন?
প্রিয়ম গর্গ: আমার স্বপ্ন দেশের হয়ে খেলা। ভারতের জার্সিতে মাঠে নামা। ছোটবেলা থেকে এই একটা স্বপ্নই দেখে আসছি। এই একটা স্বপ্ন পূরণ করতেই পরিশ্রম করছি। বিশ্বকাপে জিততে পারলে অবশ্যই ভাল লাগবে। বিশ্বকাপে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করব। যে পরিস্থিতিই থাকুক না কেন, লড়ে যাব।
ছোটবেলার কোচ সঞ্জয় রাস্তোগির মতে, যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটেই আপনি দায়িত্ব নিতে ভালবাসেন। দায়িত্ব নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসার তাগিদ কি নিজের মধ্যে টের পান?
প্রিয়ম গর্গ: হ্যাঁ। দলের হয়ে যখনই মাঠে নামি, তখনই এটা ভিতর থেকে আসে। দলের হয়ে ভাল খেলতে হবে, দলকে টানতে হবে, বড় ইনিংস খেলতে হবে। এই তাগিদ আমাকে সবসময় তাড়া করে।
আরও পড়ুন: মায়ের মৃত্যু, তীব্র অনটন, দেশের অনূর্ধ্ব ১৯ ক্যাপ্টেন যেন জীবনকে হারিয়ে দেওয়া ক্রিকেটার
বাইশ গজে দলকে ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়াই তা হলে আপনার মোটিভেশন। জীবনেও তো প্রচুর খারাপ দিন দেখেছেন। মায়ের মৃত্যু, আর্থিক সমস্যা, সংসারের জন্য বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম, নিজের স্ট্রাগল... এগুলো কি মনের জোর বাড়িয়েছে?
প্রিয়ম গর্গ: স্ট্রাগল তো প্রত্যেকের জীবনে আসবেই। এটাই স্বাভাবিক। এটাকে অতিক্রম করে চলতে হয়। সামলাতেই হবে, টপকাতেই হবে, পেরিয়ে যেতেই হবে কঠিন দিনগুলো। না হলে এগনো যাবে না। আটকে পড়তে হবে।
আপনার বাবা বলেছিলেন, সংসারের আর্থিক সমস্যা নিয়ে একদম চিন্তা না করতে। শুধু ক্রিকেটে ডুবে যেতে। কতটা কঠিন ছিল সেই সময়?
প্রিয়ম গর্গ: আমাদের পরিবার বড়। পরিবারের সব খরচ মিটিয়ে আমার ক্রিকেটের সব চাহিদা মেটানো সহজ ছিল না। বাবার খুব কষ্ট হত। কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি আমার ভালবাসা দেখে বাবা নানা রকম কাজ করে সংসার চালিয়েছে। কখনও বন্ধুর থেকে টাকা ধার করেছে, কখনও দুধ বিক্রি করেছে, কখনও স্কুলবাস চালিয়েছে, কখনও ট্রাকে মালপত্র লোডিং করেছে। এত কষ্ট করেছে শুধু আমার ক্রিকেটের প্রতি ভালবাসা জিইয়ে রাখতে। মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি যেন দেশের হয়ে খেলি। মায়ের মৃত্যু আমাদের কাছে বিশাল আঘাত ছিল। বাবা অবশ্য মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি। আমাকে ক্রিকেটার করে তোলার জন্য পরিশ্রম করে গিয়েছে। এখন খারাপ লাগে যে, আমার দেশের ক্যাপ্টেন হওয়া মা দেখতে পারল না।
আপনি তো সচিন তেন্ডুলকরের ভক্ত। ছোটবেলায় সচিনের খেলা দেখতে বন্ধুর বাড়ি, প্রতিবেশীর বাড়ি চলে যেতেন। সচিনের খেলা দেখে শেখার চেষ্টা করতেন।
প্রিয়ম গর্গ: সচিন আমার আইডল। বাড়িতে টিভি ছিল না। তাই বাইরে বেরিয়ে অন্য কোথাও খেলা দেখতে হত। আমি অবশ্য সুযোগ ছাড়তাম না। টিভিতে দেখতে দেখতেই সচিনের খেলা শটগুলো আয়ত্তে আনার চেষ্টা করতাম। খুব ভাল লাগত সচিনের মতো কোনও শট মারতে পারলে।
কোচের মতে, ব্যাকফুট পাঞ্চে নাকি সচিনের সঙ্গে আপনার মিল রয়েছে।
প্রিয়ম গর্গ: ছোটবেলা থেকে কোচ আমায় দেখে আসছেন। আমার ব্যাটিং নিয়ে তিনিই সবচেয়ে বেশি জানেন। আমার এই পর্যায়ে আসার জন্য কোচের অবদান বিশাল। তাই উনি যদি বলেন আমার ব্যাকফুট পাঞ্চ সচিনের মতো, তবে তা প্রশংসা হিসেবেই নিচ্ছি। গর্ব বোধ করছি। এখনও সচিনের সঙ্গে দেখা হয়নি। যদি কখনও দেখা হয়, অবশ্যই টিপস নেব।
রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গে তো অনেকবার দেখা হয়েছে। আপনার ক্রিকেট জীবনে রাহুল দ্রাবিড়ের ভূমিকাও তো মস্ত বড়।
প্রিয়ম গর্গ: হ্যাঁ, উনি সব সময় মানসিক জোর জুগিয়ে গিয়েছেন। সব সময় মোটিভেট করে গিয়েছেন। খারাপ সময়েও ভেঙে পড়তে দেননি। লম্বা ইনিংস খেলতে বলেছেন। ধৈর্য ধরতে বলেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy