Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Asian Games

পাকিস্তানের বদলে চিন, ক্রিকেট মাঠ শান্ত হলেও ভারত-চিন কূটনীতির দূরত্ব এখন এশিয়ান গেমসে

খেলার মাঠে রাজনীতির প্রভাব নতুন নয়। গোটা বিশ্বেই দেখা যায় কম-বেশি। ভারতীয় ক্রীড়াপ্রেমীরাও অত্যন্ত পরিচিত এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে। এ বারের এশিয়ান গেমসও বাদ থাকল না।

picture of Neeraj Chopra

চিনের অফিসিয়ালের কাছে প্রতিবাদী নীরজ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৯:১৩
Share: Save:

খেলার মাঠে রাজনীতির প্রভাব নতুন নয়। অন্তত ভারতীয় উপমহাদেশে অত্যন্ত পরিচিত ঘটনা। ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রভাব ফেলেছে বার বার। যে সম্পর্কের প্রভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ক্রিকেটের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ়। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপের মতো প্রতিযোগিতা ঘিরেও তৈরি হয় উত্তেজনা। তবে ক্রিকেটারদের কল্যাণে এই উত্তপ্ত সম্পর্ক এখন প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রিকেটের মঞ্চ ছাড়িয়ে এ বার কূটনৈতিক শীতল সম্পর্কের প্রভাবে এশিয়ান গেমসে। এ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের বদলে আসরে চিন।

ইঙ্গিতটা পাওয়া গিয়েছিল মাস দেড়েক আগেই। বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসের জন্য ভারতের তিন ক্রীড়াবিদকে স্টেপল ভিসা (আলাদা কাগজে অনুমতি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে সেই কাগজ ছিঁড়ে দিয়ে ভ্রমণের প্রমাণ নষ্ট করে দেওয়া যায়) দিয়েছিল চিন। অরুণাচল প্রদেশের তিন খেলোয়াড়কে নিয়ে সমস্যা তৈরি করেছিলেন চিনের অভিবাসন দফতরের আধিকারিকেরা। প্রতিবাদে বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয় গেমসে উশু দল পাঠায়নি ভারত। একই ঘটনা ঘটেছে এশিয়ান গেমসের ক্ষেত্রেও। এ বারও অরুণাচল প্রদেশের তিন উশু খেলোয়াড়ের ভিসার আবেদন মঞ্জুর করেনি চিন। প্রতিবাদে এশিয়ান গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বয়কট করেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। পরে চিনা কর্তৃপক্ষ সাফাই দিয়ে বলেন, ওঁরা আমাদের পরিবারের সদস্য। তাই ভিসার কোনও প্রয়োজন নেই।

ভারতের অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দারা চিনের জনগণের পরিবারের সদস্য! এতটা মহানুভব কবে থেকে হল শি জিংপিংয়ের সরকার? একদমই নয়। আসলে এটা চিনের এক কূটনৈতিক চাল। ১৯৬২ সালের যুদ্ধ ছাড়াও সীমান্ত নিয়ে ভারত-চিন বিবাদ প্রায় ধারাবাহিক। গলওয়ানের সেনা সংঘর্ষ যার অন্যতম প্রমাণ। সীমান্ত বিবাদের অনেকটা জুড়ে রয়েছে অরুণাচল প্রদেশ। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যকে নিজেদের অংশ বলে দাবি করে থাকে চিন। দীর্ঘ দিন ধরে চিনের দাবি, ঐতিহাসিক ভাবে অরুণাচলের ভূখণ্ড নাকি তাদের অংশ! তাই চিন সরকার অরুণাচলের বাসিন্দাদের ‘সাদরে’ স্বাগত জানায়। সেই স্বাগত জানানোর পদ্ধতিই হল ভিসা না দেওয়া। অর্থাৎ, চিন সরকার প্রশাসনিক ভাবে অরুণাচল প্রদেশের নাগরিকদের ‘বিদেশি’ মানতে চায় না। বরং নিজেদের দেশের লোক হিসাবেই দেখে। ভারতের নাগরিক বলে মান্যতা দিতে চায় না বলেই অরুণাচল প্রদেশের বাসিন্দাদের ভিসায় স্ট্যাম্প দেয় না চিন।

Picture of Annu Rani

অন্নু রানি। — ফাইল ছবি।

ভারত-চিন সীমান্ত সম্পর্ক শুধু অরুণাচল প্রদেশকে কেন্দ্র করেই শীতল নয়। লাদাখ, হিমাচল প্রদেশের বেশ কিছু অংশ নিয়েও বিবাদ রয়েছে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন এলাকাকে নিজেদের বলে দাবি করে থাকে চিন। সীমান্তে দু’দেশের জওয়ানদের মধ্যে মাঝে মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। ভারতকে চাপে রাখতে চিন প্রশাসনের প্রচেষ্টা বহুমুখী। সীমান্ত পর্যন্ত উন্নত সামরিক পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ আগেই শুরু করেছে তারা। পাশাপাশি, রোড অ্যান্ড বেল্ট প্রজেক্টের মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলিতে প্রভাব বৃদ্ধি করে নয়াদিল্লিকে কূটনৈতিক ভাবে ঘিরে ফেলতে চাইছে চিন। শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, মলদ্বীপে বিপুল বিনিয়োগ করছে চিনা সংস্থাগুলি। পিছিয়ে নেই সে দেশের সরকারও। সাফ দেশগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে নয়াদিল্লির প্রভাব কমাতে সক্রিয় তারা। আবার পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বিবাদে বেজিং সব সময়ই ইসলামাবাদের পক্ষে থেকেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের স্থায়ী সদস্য পদের ক্ষেত্রে প্রধান বাধাও চিন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণ পরিবর্তনের উপরেও বিভিন্ন সময় নির্ভর করেছে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সীমান্তে সামরিক প্ররোচনা বা চোখরাঙানি তো আছেই।

ভারত-চিনের এই আকচাআকচির প্রভাব এ বার সরাসরি দেখা যাচ্ছে এশিয়ান গেমসে। তিন উশু খেলোয়াড়কে ভিসা না দেওয়ার পর অ্যাথলেটিক্সের একাধিক ইভেন্টে ভারতীয়দের মনোবল নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন চিনের রেফারি, আম্পায়ারেরা। যেমন মহিলাদের জ্যাভলিনে অন্নু রানির প্রথম থ্রোয়ের মাপ নেওয়া হয়নি। পুরুষদের জ্যাভলিনে নীরজ চোপড়ার প্রথম থ্রোয়ের পর প্রযুক্তিগত কারণে দূরত্ব না মাপতে পারার কথা জানিয়েছেন রেফারিরা। অন্নু এবং নীরজকে ছয়ের বদলে সাত বার করে জ্যাভলিন ছুড়তে বাধ্য করা হয়েছে। আবার কিশোর জেনার একটি বৈধ থ্রোকে অবৈধ বলে ঘোষণা করার চেষ্টা হয়েছে। মহিলাদের ১০০ মিটার হার্ডলসে জ্যোতি ইয়ারাজ্জিকে শুরুতেই বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টার মতো ঘটনা নিয়েও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে ভারতীয় শিবিরে। অথচ এই চার জনই পদক জিতেছেন।

বৃহস্পতিবারও সেপাকটাকরোয় তাইল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতকে বৈধ পয়েন্ট না দেওয়ার অভিযোগ উঠল। ভারতের কোচ রেগে আগুন হয়ে যান চিনের অফিসিয়ালদের উপর। তাঁরা পয়েন্ট ঘোষণার সময় কখনও মুখে বলছেন, কখনও শুধু নির্দেশ দিচ্ছেন। ভারতীয় খেলোয়াড়দের জন্য সেটাই বিপদের হয়ে যাচ্ছিল। তারা বুঝতে পারছিলেন না কখন পয়েন্ট ঘোষণা হচ্ছে। এ রকমই একটি পয়েন্টের পর ভারতীয় দলের কোচ আর থাকতে না পেরে সোজা চেয়ার ছেড়ে উঠে অফিসিয়ালদের কাছে চলে যান। বার বার বোঝাতে থাকেন তাঁকে। তীব্র বচসা শুরু হয়।

প্রতি ক্ষেত্রেই ভারতীয়দের তীব্র প্রতিবাদের ফলে সুবিধা করতে পারেননি গেমসের আয়োজকেরা। গেমসের ইভেন্টগুলির সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে। মাঠ বা কোর্টের বিভিন্ন দিক থেকে প্রতি সেকেন্ডের ছবি তোলা হচ্ছে। ফলে চিনের জোচ্চুরি ধরা পরে যাচ্ছে। পিছু হটতে হচ্ছে আয়োজকদের। ভারতও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আয়োজক চিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অঞ্জু ববি জর্জের মতো প্রাক্তন খেলোয়াড়, নীরজের মতো বিশ্বের প্রথম সারির অ্যাথলিটেরা প্রকাশ্যেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন।

ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জটিলতার প্রভাব যেমন বার বার খেলার ময়দানে পড়েছে, তেমনই ঘটছে এশিয়ান গেমসেও। ভারত-চিনের ক্রিকেট সম্পর্ক নেই। অন্য খেলাতেও দু’দেশ খুব বেশি মুখোমুখি হয় না। তাই দু’দেশের শীতল সম্পর্কের প্রভাব খুব একটা বোঝা যায় না। এশিয়ান গেমসে কিন্তু বিষয়টা যথেষ্টই প্রকট।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy