Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

টেস্ট বিশ্বকাপে পয়েন্ট প্রথা নিয়ে সওয়াল বেঙ্গসরকরদের

সম্প্রতি কোহালিরা যে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছেন, সেটা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। বরাবরই বিদেশে গিয়ে ভাল করাকে সব খেলায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।

প্রশ্ন উঠছে, প্রাথমিক শর্তই টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট সিস্টেমে লুপ্ত হচ্ছে কি না?  

প্রশ্ন উঠছে, প্রাথমিক শর্তই টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট সিস্টেমে লুপ্ত হচ্ছে কি না?  

ইন্দ্রজিৎ সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

বিরাট কোহালিদের নতুন অভিযান শুরুর দিনেই তীব্র বাদানুবাদ এসে পড়ল টেস্টের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট সিস্টেম নিয়ে। দেখা যাচ্ছে, দেশের মাঠে অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলকে দুই টেস্টের সিরিজে ২-০ হারালে পাওয়া যাবে ১২০ পয়েন্ট। অথচ, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পাঁচ টেস্টের সিরিজে ৪-০ হারালে মিলবে ১০৪ পয়েন্ট। কে না জানে, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোটা অনেক বেশি কৃতিত্বের!

সম্প্রতি কোহালিরা যে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতেছেন, সেটা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম। বরাবরই বিদেশে গিয়ে ভাল করাকে সব খেলায় বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ফুটবলে যেমন বিপক্ষের মাঠে এক গোল করা মানে দু’গোলের সমান ধরা হয়। ক্রিকেটে সব সময় সেরার লড়াইয়ে বিদেশের মাঠে পারফরম্যান্সকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, সেই প্রাথমিক শর্ত টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট সিস্টেমে লুপ্ত হচ্ছে কি না?

ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটারদের মধ্যে অনেকে এখনও বিষয়টি বুঝে উঠতে পারেননি। কিন্তু যাঁরা বুঝতে পেরেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন পয়েন্ট ভাগের প্রথা নিয়ে। প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক এবং ‘লর্ডসের লর্ড’ বলে পরিচিত দিলীপ বেঙ্গসরকর এই পয়েন্ট সিস্টেম মেনে নিতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনন্দবাজারকে তিনি বললেন, ‘‘আমার কাছে এই পয়েন্ট ভাগের নিয়ম একেবারেই পরিষ্কার নয়। যদি আমি ইংল্যান্ডের পরিবেশে ইংল্যান্ডকে হারাই, তা হলে কি না কম পয়েন্ট পাচ্ছি। কেন? না, আমি বেশি টেস্টের সিরিজ খেলছি।’’ বেঙ্গসরকর যোগ করছেন, ‘‘যদি ঘরের মাঠে বাংলাদেশকে হারাই তা হলে হয়তো ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংল্যান্ডকে বা অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর চেয়ে বেশি পয়েন্ট পাব। এটা আবার কেমন নিয়ম হল?’’

বরাবর ইংল্যান্ডে দারুণ সফল হয়েছেন বেঙ্গসরকর। বার বার তাঁর মুখে উঠে আসছে ইংল্যান্ডের উদাহরণ। এখনও সব দল যেখানে গিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। এই মুহূর্তে অ্যাশেজে অস্ট্রেলিয়া যেমন লড়ছে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। জোফ্রা আর্চারের গতি এবং বাউন্সের সঙ্গে অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানদের দ্বৈরথ ক্রিকেটের সেরা আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। আর্চারের বাউন্সারে মাথায় আঘাত পেয়ে লিডস টেস্ট থেকেই ছিটকে গিয়েছেন স্টিভ স্মিথ। বেঙ্গসরকর সাফ বলছেন, ‘‘ইংল্যান্ডের পরিবেশে টেস্ট খেলা বরাবরই বড় পরীক্ষা। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ম্যাচ জেতার মূল্যও অনেক বেশি। সে ক্ষেত্রে ঘরের মাঠ ও বাইরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ জেতার তফাতটা বোঝানো যেতে পারত পয়েন্টের হেরফের করে। দেশের বাইরে টেস্ট সিরিজ জিতলে অবশ্যই যে বেশি পয়েন্ট পাওয়া উচিত।’’

অ্যাশেজ যে-হেতু পাঁচ টেস্টের সিরিজে ইংল্যান্ডে গিয়ে প্রথম টেস্ট জেতার জন্য অস্ট্রেলিয়া পেয়েছে ২৪ পয়েন্ট। অথচ নিজেদের দেশে নিউজিল্যান্ডকে প্রথম টেস্টে হারানোর জন্য শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ৬০ পয়েন্ট। তার কারণ এই জয় এসেছে দুই টেস্টের সিরিজে। কেন এতটা তফাত? আইসিসি গবেষকদের মত হচ্ছে, প্রত্যেক সিরিজে ১২০ পয়েন্ট করে রাখা হয়েছে। সেই পয়েন্ট অনুযায়ী প্রত্যেকটি টেস্টের প্রাপ্ত পয়েন্ট হিসাব করা হবে। যেমন দু’টি টেস্টের সিরিজ হলে ১২০ পয়েন্টকে ভাগ করে প্রত্যেক টেস্টের জন্য ৬০ নম্বর। আবার পাঁচ টেস্টের সিরিজ হলে ১২০ পয়েন্টকে ভাগ করা হবে পাঁচ দিয়ে। আইসিসি-র বক্তব্য, এ রকম ভাবে বন্টন না করা হলে হিসাব রাখা সম্ভব হত না কারণ টেস্ট বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের দু’বছরের মেয়াদে সবাই সমান সংখ্যক টেস্ট খেলছে না।

প্রাক্তন ভারতীয় বাঁ-হাতি স্পিনার মনিন্দর সিংহ বলছেন, ‘‘হোম এবং অ্যাওয়ে সিরিজে সমান পয়েন্ট না রাখলেই ভাল হত। কারণ, অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো বা নিউজ়িল্যান্ডের পরিবেশে ম্যাচ জেতা কঠিন। সে রকমই নিউজ়িল্যান্ড বা ইংল্যান্ড দলের কাছে ভারতে এসে জেতাও সহজ নয়। বিদেশের চ্যালেঞ্জকে আলাদা নম্বর দিতেই হবে।’’

অরুণ লাল বরাবরই ক্রিকেটের হিসাবনিকাশে মাস্টার। টেস্টের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট ভাগ নিয়েও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের সব নিয়ম তিনি ইতিমধ্যেই পড়ে ফেলেছেন। অরুণ বলছেন, ‘‘আইসিসি যে নিয়ম বানিয়েছে, তা শুরুতে আমারও বুঝতে অসুবিধা হয়েছিল। কিন্তু ভাল করে পড়ে নিয়ে বুঝলাম, প্রত্যেক দলই ছ’টি করে সিরিজ পাবে। তিনটি ঘরের মাঠে, তিনটি বিদেশের মাঠে। র‌্যাঙ্কিংয়ে যারা পিছনের দিকের দল, তাদের সঙ্গে উপরের দিকের দল কম ম্যাচের সিরিজ খেলবে। যেমন বাংলাদেশ-ভারত বা ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ভারত সিরিজে দু’টি ম্যাচের সিরিজ। কিন্তু উপরের দিকের দু’টি দল খেললে সেই সিরিজে ম্যাচের সংখ্যা বেশি থাকবে।’’ অরুণের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘২০২১ সালে ভারতে খেলতে আসছে ইংল্যান্ড। তখন পাঁচ ম্যাচের সিরিজ হবে। তার আগেই অস্ট্রেলিয়ায় চার টেস্টের সিরিজ খেলে ফিরবে ভারত।’’ অরুণের বক্তব্য, পয়েন্ট সিস্টেমের সমস্যাটা এ ভাবেই মেটাতে চেয়েছে আইসিসি। তবু ঘরে আর বাইরে জেতার জন্য আলাদা পয়েন্ট না থাকা নিয়ে তর্ক থেকেই যাচ্ছে।
প্রাক্তন ভারতীয় ওপেনার ওয়াসিম জাফর এই পয়েন্ট সিস্টেম একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। সদ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ব্যাটিং কোচ হয়েছেন তিনি। এ বছর নভেম্বরেই ভারতে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে আসছে বাংলাদেশ। সে দলের সঙ্গেই ভারতে আসবেন জাফর। বলছিলেন, ‘‘ভারতে যদি বাংলাদেশ একটি টেস্ট জেতে তা হলে ৬০ পয়েন্ট পাবে। এই বাংলাদেশই ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালে সমান পয়েন্ট পাবে। এটা কেন? দেশের বাইরে জিতলে অবশ্যই বেশি পয়েন্ট পাওয়া উচিত।’’
কিংবদন্তি স্পিনার বিষাণ সিংহ বেদী পয়েন্ট ভাগের বিপক্ষে মন্তব্য করতে চাননি। বরং তিনি ধন্যবাদ দিতে চান আইসিসি-কে টেস্ট ম্যাচের আকর্ষণ ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করার জন্য। বেদী বলছেন, ‘‘টেস্ট নিয়ে আবারও উত্তেজিত ক্রিকেটবিশ্ব। এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। আইসিসি-কে ধন্যবাদ এই প্রতিযোগিতা শুরু করার জন্য। কয়েকটা ম্যাচ হতে দিন, না হলে পয়েন্ট সিস্টেমের ব্যাপারটা বোঝা যাবে না।’’ আর এক প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার বেঙ্কটপতি রাজু আইসিসি-র পাশেই দাঁড়াচ্ছেন। বলছিলেন, ‘‘শুরুতে সব কিছুই মনে হয় অনৈতিক। কয়েক দিন পর থেকে বোঝা যায়, কেন এ ধরনের নিয়ম বানানো হয়েছে। আমার মনে হয়, আইসিসি অনেক ভাবনা-চিন্তা করেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নিয়ম গঠন করেছে। আশা করি, ভবিষ্যতে কোনও অসুবিধা হবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Test Cricket Test Cricket Point Table Cricket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy