Advertisement
E-Paper

রোহিত রোশনাই, শামির ইয়র্কারে দুরন্ত প্রত্যাঘাত নতুন ভারতের

দেখে সব গুলিয়ে যাবে! কোনটা অস্ট্রেলিয়া আর কোনটা ভারত!

 অপ্রতিরোধ্য: ট্রফি নিয়ে উল্লসিত ভারতীয় দল। রবিবার। পিটিআই

অপ্রতিরোধ্য: ট্রফি নিয়ে উল্লসিত ভারতীয় দল। রবিবার। পিটিআই

সুমিত ঘোষ 

শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৫৬
Share
Save

জশ হেজ্লউডকে মাথার উপর দিয়ে সপাটে বাউন্ডারি মারলেন মণীশ পাণ্ডে। ব্যাট নয়, যেন চাবুক চালালেন। ম্যাচ ও সিরিজ ভারতের। আর তার পরেই সেই দৃশ্য।

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাঠ ছাড়ছেন ভারতীয় দলের দুই তরুণ সদস্য— মণীশ এবং শ্রেয়স আইয়ার। আর ডেভিড ওয়ার্নারকে দেখা গেল মণীশের ব্যাট হাতে তুলে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখছেন। ভাবখানা এমন যেন, এত জোরে মারলে যে ব্যাটটা দিয়ে, সেটা দেখি তো!

দেখে সব গুলিয়ে যাবে! কোনটা অস্ট্রেলিয়া আর কোনটা ভারত! এই ওয়ার্নারকেই তো বলা হয় দুনিয়ার সব চেয়ে নির্মম ব্যাটসম্যান। এমন নির্দয় প্রহার করেন বোলারদের যে, রীতিমতো আতঙ্ক সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাঁকে দ্রুত না ফেরাতে পারলে ম্যাচও হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যাবে। আর ক্রিকেট দুনিয়ায় আলোচিত হয় তাঁর গদার মতো ব্যাট নিয়ে। তিনিই কি না ভারতীয় ব্যাটসম্যানের হাতিয়ার পরখ করে দেখছেন!

শ্রেয়স যে রকম মিচেল স্টার্ককে তুলোধনা করলেন, এমন ঔদ্ধত্য নিয়ে বাঁ-হাতি অস্ট্রেলীয় পেসারকে ক’জনই বা খেলতে পেরেছেন। মুম্বইয়ে স্টার্ক, কামিন্সরা আবিষ্কার করেন, শ্রেয়সের বাউন্সারে সমস্যা আছে। তার পর থেকে তাঁকে পাঁজর আর মাথা লক্ষ্য করা মিসাইল ছুড়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ দিন পাল্টা প্রত্যাঘাত করলেন শ্রেয়স। লেগের দিকে সরে গিয়ে জায়গা বানিয়ে একের পর এক কাউন্টার অ্যাটাক করে গেলেন শ্রেয়স। কোনও সন্দেহ নেই অস্ট্রেলিয়ার ২৮৬-৯ স্কোর তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে দিয়েছিলেন রোহিত শর্মা, কে এল রাহুল। তাঁর আইপিএল ‘হোম’ মাতিয়ে দিয়ে গেলেন চেজমাস্টার কোহালি, এটাও ঠিক। কিন্তু শ্রেয়সের ৩৫ বলে ৪৪ এবং স্টার্কের মতো এক্সপ্রেস গতির বোলারকে বেদম প্রহারই আসলে এখনকার টিম ইন্ডিয়ার ছবি। যাঁরা ভয়ঙ্করের সামনে দাঁড়িয়েও নির্ভীক, পাল্টা জবাব দিতে সদা তৈরি। শ্রেয়সকে টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পেলে স্টার্ক নিশ্চয়ই ভাজাভাজা করার সুযোগ পাবেন কিন্তু আপাতত সাদা বলের দ্বৈরথে ভারতীয় তরুণ জিতে গেলেন।

আসলে বেঙ্গালুরুতে রাতটাই ছিল ওলটপালট করে দেওয়ার রাত। না হলে টসে জিতে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিলেন! দেখে মনে হল, ফয়সালার ম্যাচে, স্নায়ুর লড়াইয়ের ম্যাচে রান তাড়া করার ঝক্কি নিতে চাইছেন না। আগে থেকেই কেমন যেন মিইয়ে থাকার মতো। রাতের দিকে যে শিশির পড়তে পারে, সেই কথাটাও কি ভুলে গেলেন ফিঞ্চ? শোনা গেল, দল প্র্যাক্টিস না করলেও অস্ট্রেলীয় ম্যানেজমেন্টের সদস্যরা নাকি শনিবার রাতে চিন্নাস্বামী অভিযানে এসেছিলেন, শিশির কেমন পড়ে তা দেখতে। তা দেখে তাঁদের মনে হয়েছে, শিশির কোনও প্রভাব ফেলবে না। যাই হোক চেজমাস্টারকে তাঁর আইপিএল ‘হোমে’ কেউ রান তাড়া করার সুযোগ করে দেয়? টসের পরেই দেখা গেল, কোহালির মুখে তখনই এক গাল হাসি।

ভারতীয় দল ওয়াংখেড়েতে দুরমুশ হওয়ার পরে যে ভাবে ফিরে এসেছে, তা নিয়েও দেখা যাচ্ছে ধন্য ধন্য। ভক্তদের অনেকে সোশ্যাল মিডিয়াতেও লিখতে শুরু করেছেন, আগেকার অস্ট্রেলিয়া দলের মতোই হার-না-মানা মনোভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে কোহালির এই দলটার মধ্যে। আগে যেমন অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে বলা হত, প্রথম ম্যাচ হেরে গেলে ওরা খোঁচা খাওয়া বাঘের মতো খেপে ওঠে, তা এখন কোহালিদের ক্ষেত্রেও মানা হচ্ছে। ম্যাচ জেতার পরেও চিন্নাস্বামীতে অনেক মানুষ থেকে গেলেন। পুরস্কার বিতরণী দেখে, আরও কয়েক বার ভারতীয় দলের নামে, অধিনায়ক কোহালির নামে, রোহিত শর্মার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে তবেই মাঠ ছাড়লেন। কোহালিও হাত নেড়ে নেড়ে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে গেলেন। এ ছাড়া এমন একটা সিরিজ জিতে বিরাট কোনও উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ নেই। এক বারই শুধু কোহালিকে দেখা গেল এক ফটোগ্রাফারের অনুরোধে দু’হাতে দু’টো ট্রফি নিয়ে বেশ স্টাইল করে পোজ দিলেন। যদিও ক্রিকেট ভক্তদের অনেক বেশি করে মনে থাকবে মাঠের মধ্যে তাঁর একটি পোজ। একটা স্ট্রেট ড্রাইভ মেরে তিনি যেটা দিয়েছিলেন।

রোহিত শর্মা ব্যাট করার সময়েও বার বার এমন শটের ফুলঝুরি দেখা গেল। ১২৮ বলে ১১৯। আটটা চার, ছ’টি ছক্কা। স্টিভ স্মিথের লড়াইকে টেক্কা দিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করে দিল রোহিতের ব্যাট। ফের সেই বেঙ্গালুরু এবং ফের সফল হিটম্যান। রান তাড়া করার ক্ষেত্রে কোহালির রেকর্ড এমনই অবিশ্বাস্য যে, আশেপাশের মণিমুক্তো ঢাকা পড়ে যায়। তাই কেউ খেয়ালই হয়তো করেনি, রান তাড়া করার ক্ষেত্রে রোহিতও কম সফল নন। এ দিনেরটা নিয়ে রান তাড়ার সময় একাদশ সেঞ্চুরি হয়ে গেল। গড় প্রায় ৬৩। কোহালিকে বাদ দিলে রান তাড়া করার ক্ষেত্রে একমাত্র সচিন তেন্ডুলকরের তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে। এবং, ব্রায়ান লারার তাঁর চেয়ে বেশি গড় আছে। ওয়ান ডে-তে ৯ হাজার রান করে ফেললেন, সেঞ্চুরি নম্বর ২৯ হয়ে গেল। যে ভাবে কামিন্সকে হেলায় তিনি ফ্লিক করে মিডউইকেট দিয়ে ছক্কা মারলেন, বিশ্বব্যাপী বোলারদের মনে আতঙ্ক তৈরি হয়ে যাওয়া উচিত।

সাত উইকেটে জয়ের জন্য অবশ্য সবার আগে জয়ধ্বনি দেওয়া উচিত বোলারদের নামে। স্লগ ওভারে বুমরা এবং শামি যে রকম বোলিং করে গেলেন, তাতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার। ৪৩তম ওভারে বুমরা দিলেন মাত্র ১ রান। সব মিলিয়ে দশ ওভারে দিলেন মাত্র ৩৮। অন্য দিকে শামি নতুন, পুরনো সব রকম বলেই উইকেট নিয়ে গেলেন। চতুর্থ ওভারে যে বলে তিনি ওয়ার্নারকে তুললেন, যে কোনও ফাস্ট বোলারের স্বপ্নের ডেলিভারি। বাঁ-হাতি ওয়ার্নারের দিকে প্রথমে হাওয়ায় সুইং করে ভিতরের দিকে আসছিল। পিচে পড়ার পরে কাট করে বাইরের দিকে গেল। ওয়াংখেড়েতে ওয়ার্নার মারছিলেন, শামি অসহায় ভাবে দেখছিলেন। এখানে শামির জাদুর সামনে ওয়ার্নার সম্মোহিত ভাবে ব্যাট বাড়িয়ে দিলেন। স্লগ ওভারে তাঁর এবং বুমরার ইয়র্কার বৃষ্টি মনে করিয়ে দিচ্ছিল ওয়াসিম আক্রম-ওয়াকার ইউনিস জুটিকে। তখন পাকিস্তানের হাতে ফাস্ট বোলার ছিল, ইয়র্কার ছিল। রিভার্স সুইং ছিল। এখন ভারতের হাতে সে সব অস্ত্রই এসে গিয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস যখন থিতু হওয়ার দিকে এগোচ্ছে, ফিঞ্চ রান আউট হলেন স্টিভ স্মিথের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। তখন অস্ট্রেলীয় অধিনায়ককে এতটাই ক্ষুব্ধ দেখাচ্ছিল যে, মনে হচ্ছিল, ইনিংস শেষে ড্রেসিংরুমে না গৃহযুদ্ধ বেধে যায়! স্মিথ সেখান থেকে লাবুশেনকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস গড়তে থাকলেন। সাধকের মতো তিনি যা করে যান। ১৩২ বলে ১৩১ করলেন তিনি। ধোনির কায়দায় হেলিকপ্টার শটে ছক্কা মারলেন। কিন্তু শেষ দশ ওভারে ২১ বলে ৩৬ রানের বেশি করতে দিলেন না ভারতীয় বোলাররা। এর পরে অস্ট্রেলীয় শিবিরে জোর আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং মার্কাস স্টোয়নিস, দুই সেরা অলরাউন্ডারকে দেশে রেখে কেন খেলতে এসেছ তোমরা?

তবু অস্ট্রেলিয়া মোটামুটি ভাবে তাদের সেরা দলই নিয়ে এসেছিল। ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, স্মিথ রয়েছেন। দুর্ধর্ষ বোলিং আক্রমণ রয়েছে। আর কী চাই? বেঙ্গালুরুতে রাতটাই আসলে শামিদের প্রত্যাঘাতের রাত ছিল!

Cricket India Australia ODI Virat Kohli Aaron Finch

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।