রোহিত শর্মা। ছবি: এএফপি।
কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ। প্রথমটা যদি কে এল রাহুল সম্পর্কে বলা যায়, দ্বিতীয়টা অবশ্যই ঋষভ পন্থ।
কয়েক মাস আগেও ছবিটা সম্পূর্ণ অন্য রকম ছিল। তখন রাহুল ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের নিন্দিত চরিত্র। একে তো ব্যাটে রান আসছিল না। টেস্টে ওপেনারের জায়গা হারিয়েছিলেন। তার উপরে কর্ণ জোহরের কফি শো-তে গিয়ে প্রবল আপত্তিকর মন্তব্য। সব দিক দিয়েই টিআরপি নামতে শুরু করেছিল কর্নাটকের নতুন রাহুলের। বিশ্বকাপ থেকে ঘুরে দাঁড়ানো শুরু। আর রাজকোটে পাঁচ নম্বরে নেমে দুরন্ত ইনিংসের পাশাপাশি দস্তানা হাতে সাফল্য তাঁর জগতটাকেই যেন রাতারাতি পাল্টে দিয়ে গেল।
রাজকোটে ম্যাচের সেরা হয়ে ঘরের মাঠ বেঙ্গালুরুতে নামবেন রাহুল। এখানে লোকের মুখে মুখে ফিরছে একটা কথা— তুমি যদি কর্নাটকের ক্রিকেটার হও, তোমার নাম যদি রাহুল হয়, তা হলে কোনও না কোনও সময় তোমাকে ভারতের হয়ে কিপিং করতে দেখা যাবে। অবশ্যই রাহুল দ্রাবিড়কে টেনে নিয়ে এসে বলা। সৌরভের টিম ইন্ডিয়ায় দ্রাবিড়ও উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমনকি, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২০০৩ বিশ্বকাপেও কিপারের দায়িত্বে ছিলেন দ্রাবিড়।
এই রাহুলও দেখা যাচ্ছে ব্যাটিংয়ের মতোই আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন কিপার হিসেবে। যাঁর বিরুদ্ধে কিপিং করা সব চেয়ে কঠিন হওয়া উচিত, সেই কুলদীপ যাদব পর্যন্ত আলাদা করে অভিনন্দন জানিয়ে গিয়েছেন রাহুলকে। বিশেষ করে অস্থায়ী কিপার হয়েও স্পিনারদের যে ভাবে সামলেছেন তিনি, তাতে মুগ্ধ দলের অনেকেই। কোহালি তো রাজকোটেই ম্যাচের পরে বলে দিয়েছেন, ‘‘রাহুল দারুণ ব্যাটিং তো করেইছে। পাশাপাশি, চমকে দিয়েছে ওর কিপিং। অনেক দরজাই খুলে দিয়ে গেল ও।’’
অনেক দরজা বলতে ধরে নেওয়া যায়, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানের দৌড়েও ঢুকে পড়া। এত দিন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা এবং তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে ঋষভ পন্থকে নিয়ে নাটক চলছিল। ধোনির ভবিষ্যৎ নিয়ে জট ছাড়ে না, পন্থের ফর্মও আর খোলে না। একটাও ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারেননি দিল্লির তরুণ বাঁ-হাতি। অথচ, টেস্টে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া বড় সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ততোধিক খারাপ কিপিং। এর মধ্যেই মুম্বইয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে ছিটকে গেলেন। এখন ক্রিকেটে মস্তিষ্কে ঘাত জনিত নতুন নিয়ম হয়ে গিয়েছে। হেলমেট-হীন যুগে মাথায় বল লাগলে হাসপাতাল ঘুরে ফের ব্যাট করতে চলে আসতেন ক্রিকেটারেরা। অনেক ক্ষেত্রে তা-ও করার সুযোগ হয়নি। মাথায় বরফ-টরফ ঘষে আবার দাঁড়িয়ে পড়তে হচ্ছে। এখন আঘাতপ্রাপ্ত ব্যাটসম্যানের মাথায় লাগার পরে সামান্য অস্বস্তি হলেই আর মাঠে নামতে দেওয়া হবে না। তাঁর জায়গায় রিজার্ভ থেকে পরিবর্ত খেলোয়াড়ও নামানো যাবে। ফিল হিউজের মৃত্যুর পরেই আইসিসি এই সতর্কতা নিয়ে চলছে। যা সকলকে মানতেই হবে।
মস্তকে আঘাত কার্যসিদ্ধির লক্ষণ— পন্থের ক্ষেত্রে অবশ্য বলা যাবে কি না সন্দেহ। এই বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতেই তাঁকে পাঠানো হয়েছিল রিহ্যাব করার জন্য। শুনে অনেকে অবশ্য হাসবেন না কাঁদবেন, ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না। মাথায় পেসারের বল লাগার কী রিহ্যাব হতে পারে? যদি না তাঁর ঘাড়ের দিকে কোনও আঘাত লাগে। কামিন্সের বল সোজা এসে লেগেছিল পন্থের কপালের জায়গায়। এমন আজগুবি সব রিহ্যাবের জন্যই কি জাতীয় অ্যাকাডেমির এত ‘সুনাম’ ছড়িয়ে পড়ছে? যাই হোক, ‘মাথার রিহ্যাব’ করে পন্থ রবিবার সকালে চিন্নাস্বামীতে আসতে পারেন টিমের সঙ্গে যোগ দিতে। তখনই তাঁর পরীক্ষা নিয়ে দেখা হবে, ঠিক আছেন কি না। যদি সব ঠিক থাকে, তিনি প্রথম একাদশে ঢোকার দৌড়ে থাকবেন।
যদি ফিটনেস টেস্টে পাশ না করেন পন্থ? এমন প্রশ্ন নিয়ে দলের মধ্যে কারও ঘুম চলে যাচ্ছে বলে তো মনে হচ্ছে না। তার কারণ, হাতে বিকল্প এসে গিয়েছে। কে এল রাহুল। এমনই চিত্রনাট্য পাল্টে দিয়েছে তাঁর রাজকোটের পারফরম্যান্স যে, এখন পাঁচ নম্বরেই তাঁকে নিয়মিত ভাবে নামানোর কথা হচ্ছে। তাতে নাকি নীচের দিকের মিডল অর্ডার অনেক পোক্ত হবে। সঙ্গে কিপিংয়ের হাত রয়েছে। পন্থ যদি না-খেলতে পারেন, রাহুলই কিপিং করবেন এবং সম্ভবত একই একাদশ নামাবে ভারত। কামিন্সের বলে পাঁজরে আঘাত পাওয়া শিখর ধওয়ন ঠিক হয়ে গিয়েছেন। রোহিত শর্মার কাঁধের চোটও গুরুতর কিছু নয়। আর বেঙ্গালুরুতে অস্ট্রেলিয়া মানে রোহিত আধা-ফিট থাকলেও খেলতে চাইবেন। এখানেই অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি আছে তাঁর। চিন্নাস্বামীতে তিনটি ওয়ান ডে ইনিংসে তাঁর সংগ্রহ ৩১৮ রান। স্ট্রাইক রেট প্রায় ১২২। ইডেনের মতোই চিন্নাস্বামী পয়মন্ত মাঠ তাঁর কাছে। আর এখানকার ব্যাটিং স্বর্গের মতো বাইশ গজ এবং ছোট বাউন্ডারি রোহিতদের আনন্দে রাখবে। তেমনই বোলারদের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে। গত দু’টি ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে এখানে মোট রান উঠেছে যথাক্রমে ৭০৯ এবং ৬৪৭। রবিবারও বড় স্কোরের হাইওয়ে ধরেই গাড়ি চলবে বলে
স্থানীয়দের পূর্বাভাস।
যদিও কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, পিচকে শেষ মুহূর্তে মন্থর করে দেওয়ার মতো ভোজভাজি কিছু প্রয়োগ করা হবে কি না। যাতে অস্ট্রেলীয় রানমেশিনদের থামাতে ভারতীয় স্পিন মন্ত্রকে কাজে লাগানো যায়। অতিথিদের উপরের দিকে প্রায় সবাই রান পেয়েছেন। মুম্বইতে রান করেছেন ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ। রাজকোটে তাঁরা ব্যর্থ হলেও স্টিভ স্মিথ রান পেয়েছেন। মার্নাস লাবুসেনের ব্যাটিং দেখে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট মহন মুগ্ধ। বলাবলি শুরু হয়ে গিয়েছে, ওয়ার্নার-স্মিথের পরে এমন এক জন ব্যাটসম্যান এসেছে, যে কি না সব ধরনের ক্রিকেটে সফল হতে পারবে। এ রকম শক্তিশালী ব্যাটিং থাকা দলকে একেবারে ফাঁকা মাঠে কি খেলতে দেওয়া ঠিক হবে? নাকি ভারতীয় দাওয়াই প্রয়োগ করা হবে? তা নিয়ে মত-পাল্টা মত চলছে।
পিচ শেষ পর্যন্ত কী রকম দাঁড়াবে, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে ক্রিকেট কত দ্রুত যে পাল্টে যাচ্ছে, তা এ দিনই দেখে নেওয়া গেল। সিরিজ ফয়সালার ম্যাচ হতে যাচ্ছে রবিবার আর তার আগের দিন কি না প্র্যাক্টিসেরই সুযোগ হল না দু’দলের। এমনই নিংড়ে নেওয়া ক্রীড়াসূচি। রাজকোটে শুক্রবার রাতে খেলে এ দিন দুপুরে বেরিয়ে পড়ার কথা ছিল কোহালি, স্মিথদের। কিন্তু বিমান বিলম্বিত হওয়ায় সন্ধের আগে বেঙ্গালুরু পৌঁছতে পারলেন না তাঁরা। আগে পৌঁছলেও অবশ্য প্র্যাক্টিস হত না কারণ সকলেই ক্লান্ত। এখানেই শেষ নয়। ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা এই ‘ফাইনাল’ খেলে রবিবার রাতেই নিউজ়িল্যান্ডের উড়ান ধরবেন। ভারতীয় বোর্ড এ রকম সূচি পাশ করল কী ভাবে, সেটাই রহস্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy