একাগ্র: রাজকোটে ভারতের নেটে কোহালি ও বুমরা। এএফপি, পিটিআই
নেট প্র্যাক্টিসে যদি কোনও স্কোরকার্ড থাকত, তা হলে হয়তো ভারতের স্কোর দেখাত ০ রানে তিন উইকেট!
বৃহস্পতিবারের বারবেলায় ভারতের অনুশীলনের শুরুতেই দেখা গেল এক, দুই এবং তিন নম্বর নেটে ব্যাট করছেন বিরাট কোহালি, শ্রেয়স আইয়ার এবং কেদার যাদব। তা হলে মুম্বইয়ের ম্যাচে যাঁরা প্রথম তিনটে জায়গায় আলো করে নেমেছিলেন, সেই রোহিত শর্মা, শিখর ধওয়ন এবং কে এল রাহুল কি নেট শুরু হওয়ার আগেই ‘আউট’ হয়ে গেলেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ঐচ্ছিক প্র্যাক্টিস থাকায় রোহিত, শিখর এবং রাহুলের কেউ এ দিন মাঠে আসেননি।
কিন্তু মুম্বইয়ে যিনি চার নম্বরে নেমেছিলেন, তাঁকে দেখা গেল অনুশীলনে ডুবে থাকতে। তিনটে নেট জুড়ে ব্যাট করে গেলেন কোহালি। কোথাও থ্রো ডাউনের সামনে, কোথাও নবদীপ সাইনির আগুনে গতির বিরুদ্ধে, আবার কোথাও ডুবে থাকলেন স্পিন সামলাতে। কোহালিকে দেখে মনে হচ্ছিল, ওয়াংখেড়ের লজ্জার হারটা যেন কোথাও নিজের মর্যাদায় আঘাত হিসেবে নিয়ে ফেলেছেন ভারত অধিনায়ক।
আরও পড়ুন: কান্না ভুলে দিদির কাছে নতুন শপথ মরিয়া জাডেজার
কোহালি এ দিন একটু বেশি সময় দিলেন শ্রীলঙ্কার এক প্রাক্তন বাঁ-হাতি ক্রিকেটারকে। গাট্টাগোট্টা চেহারার এক সময়কার এই ক্রিকেটারের নাম নুয়ান সেনেভিরত্নে। ক্রিকেট ছাড়ার পরে যাঁর কাজই হয়ে গিয়েছে নেট প্র্যাক্টিসে বল ছোড়া, অর্থাৎ ব্যাটসম্যানদের থ্রো ডাউন দেওয়া। যখনই বিপক্ষ দলে ভাল বাঁ-হাতি পেসার থাকে, তখনই ভারতীয় নেটে উদয় হন নুয়ান। এ দিন কোহালিকে যে ভাবে ১৬-১৮ গজ থেকে বল ছুড়ে মারছিলেন, দেখে আঁতকে উঠতে হয়। কোহালি কিছু ছাড়লেন, কিছু ডিফেন্স করলেন। মনে হল, নেটেই যেন অস্ট্রেলিয়ার বাঁ-হাতি পেসার মিচেল স্টার্ককে খেলার অভ্যাসটা ঝালিয়ে নিলেন। বোধ হয় ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বরে ফেরার সিদ্ধান্তটা নিয়ে ফেলারই আভাস মিলল নেটে।
আরও পড়ুন: শ্রীনির সওয়াল উপেক্ষা করে চুক্তিপত্র থেকে ছাঁটাই ধোনি
কিন্তু বিরাট-রথ থামাতে অস্ট্রেলিয়ার বাজি মোটেই স্টার্ক বা কামিন্স হতে যাচ্ছে না। অ্যারন ফিঞ্চদের নীল নকশায় সেই নামটা হল অ্যাডাম জ়াম্পার। অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্ক ট্যাঙ্ক আবিষ্কার করেছে, শুরুতে কোহালি নাকি লেগস্পিনের বিরুদ্ধে সে রকম সচ্ছ্বন্দ থাকেন না। তাই ফিঞ্চদের রণনীতি হল— কোহালি এলেই জ়াম্পা আনো।
অস্ট্রেলিয়ার তরুণ লেগস্পিনারও এই দায়িত্ব নিতে তৈরি। বৃহস্পতিবার নেট প্র্যাক্টিসে নামার আগে জ়াম্পা বলছিলেন, ‘‘কোহালি অতুলনীয়। কিন্তু আমরা দেখেছি, শুরুতে লেগস্পিনের বিরুদ্ধে ওর একটু সমস্যা হচ্ছে। তাই প্রথম ম্যাচে আমাদের গেমপ্ল্যান ছিল তাড়াতাড়ি লেগস্পিনার নিয়ে আসা। এটুকু বলতে পারি, কোহালিকে আমি চার বার আউট করেছি। শুরুতেই ওকে বল করতে আমি তৈরি।’’
তিন ম্যাচের এই সিরিজ ঘিরে উত্তেজনার পারদ যে এতটা চড়তে পারে, তা প্রথমে বোঝা যায়নি। ওয়াংখেড়েতে ভারতের ভরাডুবি হঠাৎ করে সিরিজের রং পাল্টে দিয়েছে। ২৫৫ রানে ইনিংস শেষ হওয়ার পরে ১০ উইকেটে হার জন্ম দিয়েছে নানা অপ্রীতিকর প্রশ্নের। কোহালির ব্যাটিং অর্ডার পাল্টানো কি বড় ভুল? যশপ্রীত বুমরা কি পুরো ফিট হয়ে উঠতে পারেননি? কুল-চা (কুলদীপ যাদব-যুজবেন্দ্র চহাল) জুটি ভেঙে যাওয়ায় কি মাঝের ওভারগুলোয় উইকেট উঠছে না? শেষ দুটো ম্যাচে এই সব প্রশ্নের জবাব না মিললেই সমস্যা।
অস্ট্রেলিয়ার কাছেও এই সিরিজ অন্য একটা মাত্রা পাচ্ছে। এর আগে ভারত থেকে পরপর দুটো ওয়ান ডে সিরিজ কোনও দল জিতেছে বলে কারও মনে পড়ছে না। এই সিরিজ জিততে পারলে অস্ট্রেলিয়ার কাছে তা ‘বার্নল’-এর মতো কাজ করবে। ফিঞ্চরা ভাবছেন, পরপর দুটো সিরিজে ভারতকে হারাতে পারলে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল থেকে ছিটকে যাওয়ার জ্বালায় অন্তত কিছুটা মলম পড়বে। জ়াম্পাও বলে গেলেন এই কথা।
ভারতের কাছে এটা আবার সম্মানরক্ষার লড়াই। মুম্বই ম্যাচের পরে কোহালি বলেছিলেন, ‘‘এখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানোটা আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।’’ এ দিন শ্রেয়স আইয়ার এসে বলে গেলেন, ‘‘ড্রেসিংরুমে এই নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা জানি, আমাদের ক্ষমতা আছে ফিরে আসার। এর আগে বেশ কয়েকটা সিরিজে পিছিয়ে থেকেও আমরা জিতেছি।’’
শ্রেয়সকে নিয়ে আবার নেটে বিশেষ ভাবে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেল হেড কোচ রবি শাস্ত্রীকে। বারবার বোঝাচ্ছিলেন, কী ভাবে বল ছাড়তে হবে। কী ভাবে শর্ট বল এলে মাথা সরাতে হবে। দেখিয়ে দিচ্ছিলেন বাঁ-পায়ের পাতা কোথায় থাকবে। শোনা যাচ্ছে, এই ভাবেই শাস্ত্রী নাকি খানিকটা বদলে দিয়েছেন রোহিত শর্মার স্টান্স। বাঁ-হাতি পেসারদের বিরুদ্ধে খেলার সময় তাই রোহিতের বাঁ-পায়ের পাতা এবং কাঁধ এখন একটু মিডঅনের দিক ঘেঁষা। কেউ কেউ বলছেন, ওয়াসিম আক্রমদের মতো বাঁ-হাতি পেসারদের খেলার অভিজ্ঞতা থেকেই শাস্ত্রীর এই পরামর্শ।
সিরিজ জেতার এই লড়াইয়ে ভারত যেমন শ্রীলঙ্কার সাহায্য নিচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া তেমন নিচ্ছে ভারতেরই সাহায্য। স্পিন বোলিং পরামর্শদাতা শ্রীধরন শ্রীরাম তো আছেনই। আছেন তাঁর এনে দেওয়া দুই ভারতীয় স্পিনার— চায়নাম্যান বোলার কে কে জিয়াস এবং লেগস্পিনার প্রদীপ সাহুও। জিয়াসের বিরুদ্ধে এ দিন অনেকটা সময় ব্যাট করতে দেখা গেল স্টিভ স্মিথকে। তবে প্রথম ম্যাচের নায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ঐচ্ছিক অনুশীলনে আসেননি। ছিলেন না বোলিংয়ের দুই জোড়া ফলা— মিচেল স্টার্ক এবং প্যাট কামিন্সও।
রাজকোটের লড়াইয়ে ভারতীয় দল বাধ্য হচ্ছে একটা অন্তত পরিবর্তন করতে। চোট পাওয়া ঋষভ পন্থের জায়গায় বিকল্প ক্রিকেটার আনা হয়নি। তাই উইকেটকিপার কে এল রাহুল। ছ’নম্বরে মণীশ পাণ্ডে বা কেদার যাদবের এক জন। তবে নেটে কেদার যেমন এ দিন অতি উৎসাহে ব্যাট করলেন, কোহালিকে বল করলেন, তাতে মনে হচ্ছে অধিনায়কের ভোটটা তাঁর দিকে পড়লেও পড়তে পারে। ঠিক যেমন রাজকোটের হাল্কা সবুজ পিচে সাইনির পক্ষে ভোট দিতে পারেন অধিনায়ক।
কোহালিদের সামনে লক্ষ্য একটাই। রাজকোটে জিতে সিরিজ বাঁচাও। তার পরে ঝাঁপাও বেঙ্গালুরুতে। লক্ষ্যপূরণ হয় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy