বিপর্যয়: উইকেট দেখছেন কোহালি। আঙুলে উঠে এল মাটি। পিটিআই
সকালের দিকে সামান্য বৃষ্টি হওয়ার পরে সোনালি রোদের কিরণ সমর্থকদের মনে আশা জাগিয়েছিল। টসের সময়েও বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা দেখা যায়নি। কিন্তু ৬টা বেজে ৪৭ মিনিটে সমর্থকদের উৎসাহে জল ঢেলে শুরু হল বৃষ্টি।
প্রায় এক ঘণ্টা তিন মিনিট টানা বৃষ্টি হওয়ার পরে মাঠকর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয় আচ্ছাদন সরিয়ে নেওয়ার। কিন্তু আচ্ছাদনের উপরের জল সুপার সপারের সাহায্যে সরিয়ে দেওয়ার আগেই তা তুলে নিতে শুরু করেন মাঠকর্মীরা। বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে উপস্থিত ক্রিকেটপ্রেমীরা হয়তো ভেবেছিলেন, সুষ্ঠু ভাবেই ম্যাচ শুরু হবে। কিন্তু আচ্ছাদন সরাতেই দেখা যায়, রোলিং মিল প্রান্তের দিকের পিচ ভিজে গিয়েছে। জলের পরিমাণ এতটাই ছিল যে, অন্য প্রান্তে থাকা প্রেসবক্স থেকে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের নীচে কাপড়ের আচ্ছাদন দিয়েও ঢাকা ছিল পিচ। তবুও কী করে জল পড়ল তার সরকারি কারণ এখনও জানা যায়নি। অসম ক্রিকেট সংস্থার সূত্রে খবর, আচ্ছাদনে ছিদ্র ছিল। সেখান থেকেই জল গড়িয়ে পড়ে পিচে। এ বিষয়ে জানতে অসম ক্রিকেট সংস্থার সচিব দেবজিৎ সইকিয়াকে ফোন করা হলে তিনি অদ্ভুত উত্তর দেন। বলেন, ‘‘রাত ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। তার জন্যই ম্যাচ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা ছিল সন্ধে ৭টা থেকে। শেষ হওয়ার কথা ছিল রাত ১০টা বেজে ১৫ মিনিটে। বৃষ্টির জন্য পুরোটাই ভেস্তে গেল।’’
এসিএ সচিব আসলে বিষয়টি এড়িয়ে গেলেন। ধারাভাষ্যকার আকাশ চোপড়া মাঠে দাঁড়িয়েই ঘোষণা করেন, ‘‘আচ্ছাদনে ছিদ্র ছিল। সেখান দিয়ে জল ঢুকেছে। এমন শিশুসুলভ ভুল প্রত্যাশিত নয়।’’ বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামের প্রত্যেক সমর্থক সাক্ষী, বৃষ্টি শেষ হয়েছিল ৭টা বেজে ৫০ মিনিটে। কারণ, এক বার আচ্ছাদন সরিয়ে নেওয়ার পরে আর তা ফিরিয়ে আনা হয়নি। তবুও সচিব বলে গেলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে! সচিবকে ফের জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘টিভিতে ঘোষণা করা হচ্ছে পিচ ভেজা থাকার জন্য ম্যাচ পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। তা হলে আপনি কী করে বলছেন বৃষ্টির জন্যই ম্যাচ পরিত্যক্ত?’’ দেবজিৎ সইকিয়ার উত্তর, ‘‘আমার কোনও ধারণা নেই। কিউরেটর ও মাঠকর্মীদের সঙ্গে আমার কথা হয়নি। তবে আচ্ছদনে জল জমে যাওয়ার কারণে পিচ স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছিল।’’ তা বলেই ফোন কেটে দেন সচিব। সচিব ম্যাচের আগের দিন পর্যন্ত বলেছিলেন, ‘‘এই ম্যাচটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কী ভাবে আয়োজন করছি, তার উপরে নির্ভর করবে আইপিএল-এ আমরা ম্যাচ পাচ্ছি কি না।’’ এই পরিস্থিতির পরে অসম ক্রিকেট সংস্থা আইপিএল ম্যাচ পাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।
বৃষ্টি কমে যাওয়ার পরে ৮টা বেজে ১৫ মিনিটে প্রথম বার মাঠ পরিদর্শন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনিল চৌধুরী ও নীতীন মেনন পিচের অবস্থা দেখে সময় পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন। রাত ৯টায় প্রথম পরীক্ষা করে দেখা যায় পিচ শুকোয়নি। ভেজা ভাব রয়েই গিয়েছে। বিরাট কোহালি এসে উইকেট দেখে অবাক। আম্পায়ারদের উদ্দেশ্য করে তিনি জিজ্ঞাসা করেন পিচের এই অবস্থা কী করে হল। পিচ টিপে পরীক্ষা করে বিরাট দেখেন, তাঁর আঙুলে মাটি উঠে আসছে। এই অবস্থায় ম্যাচ পরিচালনা করলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। দ্বিতীয় বার শিখর ধওয়ন ও ঋষভ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে আসেন বিরাট। হতাশ হয়ে ফিরে যান ড্রেসিংরুমে।
ঠিক ৯টা বেজে ৩০ মিনিটে দ্বিতীয় বার মাঠ পর্যবেক্ষণে আসেন আম্পায়ারেরা। পরীক্ষা করে দেখেন আউটফিল্ড একেবারে শুকনো। কিন্তু পিচ তখনও ভেজা। ম্যাচ শুরু হওয়ার শেষ সময় ছিল ৯-৪৬ মিনিট। তার মধ্যেও খেলা শুরু করা সম্ভব হয়নি। একরাশ হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়েন বর্ষাপাড়া স্টেডিয়ামে আসা ভক্তেরা।
পিচের পপিং ক্রিজ ও গুড লেংথ অঞ্চলেই জল গড়িয়ে পড়ে। যেখানে সুপার সপার ব্যবহার করার নিয়ম নেই। তাই পিচ প্রস্তুতকারক আশিস ভৌমিকের নির্দেশে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এনে পিচ শুকোনোর চেষ্টা করেন মাঠকর্মীরা। বুঝতে পারেন, একটি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পিচ শুকোনো সম্ভব নয়। ফলে চেষ্টা করা হয় পিচে কাপড় পেতে তার উপরে রোলার চালিয়ে। কাপড়কে দু’টি ভাঁজ করে ভেজা জায়গায় রাখা হয়। তার উপরে ইস্ত্রি করে ছোট রোলার দিয়ে পিচ শুকোনোর চেষ্টা করা হয়। হেয়ারড্রায়ারও ব্যবহার করা হল। তাতেও কোনও লাভ হয়নি।
২০১৭ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে আধঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছিল। ৬টা বেজে ৩০ মিনিটে বৃষ্টি বন্ধ হলেও ৪৫ মিনিটের বেশি সময় লাগেনি মাঠ শুকোতে। কারণ, এই মাঠ তৈরি করা হয়েছে বালির স্তরের উপরে। যতই বৃষ্টি পড়ুক, দ্রুতই জল টেনে নেয় মাটি। এ দিনও ম্যাচ শুরু হতে সমস্যা হত না। আউটফিল্ড একেবারেই শুকিয়ে গিয়েছিল। ভিজে পিচই স্বপ্নে ঢেলে দিল জল।
এ দিকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে প্রতিবাদের আতঙ্কে মাঠে পোস্টার, প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন ও অসমিয়া গামছা নিয়ে সমর্থকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পোস্টার নিয়ে মাঠে না ঢুকলেও অসমিয়া গামছা আটকাতে পারেনি পুলিশ। গামছা নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে সর্বঅসম ছাত্র সংগঠনের সদস্যেরা মাথায় গামছা বেঁধে মাঠে আসেন। সমর্থকদের অনেকেই অসমের ঐতিহ্য ক্রিকেটবিশ্বের সামনে তুলে ধরার জন্য গামছা নিয়ে এসেছিলেন। শেষে এই গামছা মাথায় দিয়ে বৃষ্টির হাত থেকে মাথা বাঁচালেন কেউ কেউ। অসম ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি মণ্টু দাস বলছিলেন, ‘‘আমাদের ঐতিহ্যই গামছা। কী করে অসম ক্রিকেট সংস্থা এই গামছা নিষিদ্ধ করে, জানা নেই। তার প্রতিবাদেই আমরা মাথায় গামছা পরে মাঠে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’
গামছায় ‘জয় আই অসম’ লিখেও ক্যামেরার উদ্দেশে দেখাচ্ছিলেন কেউ কেউ। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়াও শুরু হয় ব্রহ্মপুত্র প্রান্তের আপার টিয়ারে। পুলিশের অনুরোধে স্লোগান দেওয়া বন্ধ করেন সমর্থকেরা। ছিঁড়ে ফেলা হয় মাঠে আনা কালো পতাকাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy