আগ্রাসী: ওভালে মারমুখী মেজাজে শার্দূল ফাইল চিত্র
শেষ দিনে ভারতের চাই ১০ উইকেট। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ২৯১। ম্যাচ আকর্ষণীয় একটা মোড়ে এসে দাঁড়িয়ে। যদিও এখনও আমি বলব, জয়ের বড় দাবিদার ভারতই।
রবিবার ওভাল টেস্ট চলার সময় টিভি-তে একটা পরিসংখ্যান দেখলাম। ১৯৯০ সিরিজ়ে এই ওভালেই শেষ দিনে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা দিক থেকে টানা ৫৯ ওভার বল করেছিল লেগস্পিনার নরেন্দ্র হিরওয়ানি! ম্যাচটা অবশ্য ড্র হয়ে যায়। ওই টেস্টে ভারত দুই স্পিনারে খেলেছিল। হিরওয়ানির সঙ্গে ছিল বর্তমান হেড কোচ রবি শাস্ত্রী। এবং, ওই শেষ দিনে মহম্মদ আজ়হারউদ্দিনের জায়গায় ভারতকে নেতৃত্ব দিয়েছিল শাস্ত্রীই!
এই ওভাল টেস্টে বিরাট কোহলীর হাতে দ্বিতীয় কোনও স্পিনার নেই। আছে একা রবীন্দ্র জাডেজা। চতুর্থ দিনের শেষ দিকের খেলা দেখে মনে হল, স্পিন অল্প হলেও ধরতে শুরু করেছে উইকেটে। কয়েকটা বল বাউন্সও করেছে বাঁ-হাতি স্পিনার জাডেজার। শেষ দিনে ওকে কিন্তু একেবারে নিখুঁত হতে হবে। উইকেটে ‘স্পট’টা খুঁজে নিয়ে সেখানে ধারাবাহিক ভাবে বল ফেলতে হবে। সমস্যা হল, ডান-হাতি এবং বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে দুটো ‘স্পট’ আলাদা হবে। সেই দুটো ‘স্পট’ জাডেজাকে খুব তাড়াতাড়ি খুঁজে নিতে হবে। যেখানে পড়ে বল ঘুরবে, আবার বাউন্সও করবে। গোটা তিনেক উইকেট কিন্তু চাই ওর কাছ থেকে।
প্রশ্ন হচ্ছে, তার বর্তমান কোচ যা করেছিল ৩১ বছর আগে, সেটা কি করবে কোহলী? অর্থাৎ, একটা প্রান্ত থেকে জাডেজাকে টানা বল করিয়ে যাওয়া। আমার মনে হয়, তার প্রয়োজন হবে না। জাডেজা ছাড়াও ভারতের পেসারদের ক্ষমতা আছে উইকেট নেওয়ার। দুটো ব্যাপার ভারতের পক্ষে যেতে পারে। এক, ভারতীয় পেসারদের বলে গতি আছে। বিশেষ করে যশপ্রীত বুমরা-উমেশ যাদবের। দুই, ভারতীয় পেস-আক্রমণের মধ্যেও একটা বৈচিত্র আছে। বুমরা এক রকম ভাবে বলটা ছাড়ে, উমেশ অন্য রকম ভাবে। মহম্মদ সিরাজ সবসময় উইকেট পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে থাকে। শার্দূল ঠাকুর চেষ্টা করে সুইং পাওয়ার।
ম্যাচের ফল যা-ই হোক না কেন, এই ওভাল টেস্টে ভারতের বড় প্রাপ্তি হয়ে থাকবে অলরাউন্ডার শার্দূল ঠাকুর। গত কয়েক বছর ধরে টেস্টে ভারত এক জন ভাল অলরাউন্ডারের খোঁজে ছিল। হার্দিক পাণ্ড্যকে চোট অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। এক জন ভাল পেসার-অলরাউন্ডার না থাকার কারণে জাডেজার ব্যাটিংকে প্রাধান্য দিতে হচ্ছে ভারতীয় দল পরিচালন সমিতিকে। সেই যুক্তিতে বাইরে রাখা হচ্ছে আর অশ্বিনের মতো স্পিনারকে। যার খেসারত না ওভালের শেষ দিনে দিতে হয়! প্রথম ইনিংসে শার্দূল শুরু থেকেই পাল্টা আক্রমণের রাস্তা নিয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ও কিছুটা সংযত ছিল। নিখুঁত রক্ষণাত্মক ব্যাটিং করতেও দেখলাম এ দিন। পাশাপাশি মনে রাখার মতো কয়েকটা ড্রাইভও মেরেছে। এ সবই বুঝিয়ে দিচ্ছে, ব্যাটসম্যান হিসেবে কতটা পরিণত হয়ে উঠছে শার্দূল (৭২ বলে ৬০)।
ছন্দহীন ব্যাটসম্যানদের কাছে ওভালের এই পিচটা রানে ফেরার আদর্শ মঞ্চ। সুযোগটা দারুণ ভাবে কাজে লাগাল ঋষভ পন্থও (১০৬ বলে ৫০)। এর আগে ও বেশিরভাগ সময়ই অফস্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাটটা বাড়িয়ে উইকেটের পিছনে খোঁচা দিয়ে আউট হচ্ছিল। এ ছাড়া বার দুয়েক ক্রিজ় ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়েও উইকেট ছুড়ে দিয়েছে। এ দিন দুটোর একটাও করেনি। যে কারণে এই ইংল্যান্ড সফরে প্রথম বার সাবলীল ভঙ্গিতে ব্যাট করতে দেখা গেল ঋষভকে।
অফস্পিনার মইন আলির বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পরে টিভি-তে দেখলাম, ড্রেসিংরুমে গিয়ে রাগের চোটে হাত ছুড়ছে কোহলী। রাগটা স্বাভাবিক। ৪৪ রান করে জমে যাওয়ার পরে এই পিচে সেঞ্চুরি না করে ফিরে আসার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না ভারত অধিনায়ক। শুধু রান পেল না অজিঙ্ক রহাণে। রান না পাওয়াই নয়, ওর আউটের ভঙ্গিটাও ভাল লাগল না। কয়েকটা বল আগে ভিতরে আসা ডেলিভারিতে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেয় রাহানেকে। কিন্তু ভারতীয় সহ-অধিনায়ক ‘ডিআরএস’ নিয়ে বেঁচে যায়। সেখান থেকেও শিক্ষা নিতে পারল না রাহানে। ক্রিস ওক্সের স্টাম্পের উপরে একটা সোজা বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে আসে।
কোহলীর কাছে ওভালের শেষ দিনটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। শুধু সিরিজ়ে এগিয়ে যাওয়ার পরীক্ষার ফলই নয়, আরও একটা প্রশ্নের জবাব পাওয়া যাবে সোমবার। অশ্বিনকে বাদ দেওয়াটা ঐতিহাসিক ভুল হয়ে থাকবে কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy