আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রথম উইকেটের পর নটরাজন। ছবি টুইটার থেকে নেওয়া।
বিষাক্ত ইয়র্কারের নেপথ্যে নাকি করোনা অতিমারী আর লকডাউন!
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলে দিয়েছেন টি নটরাজন। বুধবার অভিষেক ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট। ডেথ ওভারে বাঁ-হাতি পেসারের ইয়র্কার যে কত মারাত্মক হতে পারে, তা অবশ্য আইপিএলেই টের পেয়েছে ক্রিকেটমহল। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সিতে ধারাবাহিকতা দেখে কপিল দেব তাঁকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘আমার হিরো’ বলে। আর বুধবারের পর প্রাক্তনরা উচ্ছ্বসিত তাঁর লড়াই নিয়ে। কারও কারও কাছে স্বপ্ন যে সত্যি হতে পারে, তার উদাহরণ তামিলনাডুর ২৯ বছর বয়সী এই পেসার।
শুধু স্বপ্ন নয়, তা সফল করার তীব্র জেদ আর তাগিদও ছিল নটরাজনের। চেন্নাইয়ের যে জলি রোভার্স ক্লাবের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, সেই ক্লাবের কর্ণধার, প্রাক্তন জাতীয় উইকেটকিপার ভরত রেড্ডি আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “৮ বছর আগে কোনও একটা জেলার ম্যাচে ওর মধ্যে প্রতিভার ঝলক দেখতে পেয়ে নিয়ে আসি। বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার তো একটু আলাদা কদর পায়। সেই জন্যই ভাল লেগেছিল। খুব দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছিল। তাই মাসে কিছু হাতখরচ দিতাম, যাতে ও আর্থিক সমস্যার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ক্রিকেটে পুরো মন দিতে পারে। আমাদের ক্লাবে ফিজিয়ো এবং ট্রেনারের থেকে ও অনেক সাহায্য পেয়েছে। এখানে যে ফিজিয়ো, সে আগে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে ছিল। এখন সে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। ফলে সর্বোচ্চ মানের ট্রেনিং পেয়েছে আগাগোড়া। আর ও খাটতও। আসলে একবার যখন ও নিশ্চিন্ত হল যে, পরিবারের জন্য আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না, তখন ও পুরোপুরি মন দিয়েছিল বোলিংয়ে।”
আরও পড়ুন: ১৩-১৪ বছর খেলার পর এই প্রত্যাবর্তনই প্রত্যাশিত: কোহালি
দুশ্চিন্তার কারণ অবশ্য ছিল। নটরাজনের বাবা ছিলেন দৈনিক মজুরির শ্রমিক। কখনও কুলির কাজ করতেন, কখনও বস্ত্রশিল্পে খাটতেন। মা রাস্তার ধারে দোকানে বসে পকোড়া বিক্রি করতেন। এই আবহে ৫ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় নটরাজন আঁকড়ে ধরেছিলেন ক্রিকেটকে। দারিদ্র্য এমনই ছিল যে, তাঁর পড়াশোনার জন্য নোটবুক-পেন্সিল কেনারও ক্ষমতা ছিল না। অগত্যা লাল বল হাতে অভাব ঘোচানোর লড়াই শুরু করেন তিনি।
সেখান থেকে এহেন উত্থান যেন অন্ধকার গলি থেকে আলো ঝলমলে রাজপথে পা রাখা!
সালেম থেকে ৩৫ কিমি দূরের চিন্নাপামপট্টি গ্রাম থেকে উঠে এসে দারিদ্র্যের যন্ত্রণা পেরোতে ক্রমাগত লড়তে হয়েছে। টপকাতে হয়েছে একের পর এক হার্ডলস। সেই দিনগুলোর কথাই উঠে এল ভরত রেড্ডির গলায়, “খুব কঠিন পরিস্থিতি থেকে এসেছে। এমনকী, একবেলার খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল না। এই ধরনের মানুষ সাধারণের থেকে বেশি খাটে। কারণ তাদিদ বেশি। ও প্রচণ্ড পরিশ্রমী ছিল। সব সময় শিখতে চাইত।”
নটরাজনের মারাত্মক ইয়র্কারের রহস্য কী? ভরত রেড্ডি শোনালেন, “কোভিডের সময় ও গ্রামে ফিরে গিয়েছিল। তখন চেন্নাইয়ে ক্রিকেট বন্ধ ছিল। সেখানে টানা অনুশীলন করেছে। এক্সারসাইজ করেছে, শক্তি বাড়াতে খেটেছে। একা একাই নেটে বল করেছে। মন দিয়েছে ইয়র্কারে। বলা হয়, একটা ইয়র্কার করা মানে ৪টে বলের সমান এনার্জি খরচ হওয়া। আমি যখন ওকে প্রথম দেখি, তখন ও এত ইয়র্কার দিত না। তামিলনাডুর হয়েও যখন খেলেছে তখন একটা ইনিংসে বড়জোর ৫-৬টা ইয়র্কার দিত। কিন্তু লকডাউনে ও ইয়র্কারের জন্য অনেক সময় দিয়েছে। নিজের শক্তি, ক্ষমতাও বাড়িয়েছে মারাত্মকভাবে। এখন তো ১০ ওভার বল করলে তার মধ্যে ২০-৩০টাই ইয়র্কার দিতে পারে।”
আরও পড়ুন: টানা ৮ বছর ভারতের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়লেন রোহিত
কেমন দেখলেন অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বোলিং? উত্তর এল, “ও এর চেয়েও জোরে বল করবে। হয়তো ক্লান্তি রয়েছে। স্পিড কমেছে মনে হল। তবে ওর গতি বাড়বে। বিশ্বাস রাখলে আরও ভাল করবে। দল কী ভাবে ব্যবহার করবে, তার উপর সব নির্ভর করছে। আমি আশাবাদী। আর আমাদের রাজ্যেরই ভরত অরুণ আছেন বোলিং কোচ হিসেবে। উনি নিশ্চয়ই গাইড করবেন।”
ভরত অরুণের কাছে আর এক ভরতের প্রত্যাশা একটাই, যেন ঠিকঠাক মর্যাদা পায় নটরাজনের এতদিনের লড়াই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy