উচ্ছ্বাস: দ্বিতীয় ইনিংসে ফের বিধ্বংসী মেজাজে মহম্মদ শামি। পিটিআই
মিড-অফ অঞ্চলে পিছনের দিকে দৌড়ে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ চেতেশ্বর পুজারা তালুবন্দি করতেই গর্জে উঠল হোলকার স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে শুরু হল নাগিন ডান্স। স্টেডিয়ামের পাঁচশো মিটার দূর থেকেও হয়তো শোনা যাবে পরিচিত জয়ধ্বনি, ‘ইন্ডিয়া জিতেগা, ইন্ডিয়া জিতেগা।’
টেস্টে এ রকম উন্মাদনা শেষ কবে ভারতীয় ক্রিকেট দেখেছে, তা বলা যাচ্ছে না। যা দেখে উচ্ছ্বসিত ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। শেষ মুহূর্তে তাতাতে শুরু করলেন সমর্থকদের। কানে হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বোঝানোর চেষ্টা করলেন, আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। যেন টিভির রিমোট কন্ট্রোলের মতো কাজ করল এই ইঙ্গিত। গর্জে ওঠা হোলকার স্টেডিয়ামের গ্যালারি তখন সময় গুনছে শেষ উইকেটের অপেক্ষায়।
অবশেষে দিনের ৭০তম ওভারে এবাদত হোসেন ফিরতেই টানা ষষ্ঠ টেস্ট জয় নিশ্চিত করল ভারত। ইনিংস ও ১৩০ রানে চূর্ণ বাংলাদেশ। অধিনায়ক হিসেবে ৫২টি টেস্টের মধ্যে ১০টি টেস্ট ইনিংসে জিতে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রেকর্ড (৯টি) ভাঙলেন বিরাট। টেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ তালিকায় আরও ৬০ পয়েন্ট যোগ হয়ে ভারতের মোট পয়েন্ট দাঁড়াল ৩০০। বাকি দলগুলি যার ধারে কাছেও নেই। কিন্তু বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ল এক রাশ উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা নিয়ে। মুশফিকুর রহিমকে বাদ দিলে বাকিদের দেখে মনে হবে, প্রথম শ্রেণির ছাত্রদের দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। ভারতীয় পেসারদের সুইংয়ের কোনও দিশা খুঁজে পেলেন না। স্পিনারের বিরুদ্ধেও একই ভাবে রান করতে ব্যর্থ।
শুক্রবার ৩৪৩ রানে এগিয়ে থাকার পরে শনিবার আর ব্যাট করেনি ভারত। ৪৯৩-৬ স্কোরে ডিক্লেয়ার করে সকালের দু’ঘণ্টা বিপক্ষ ওপেনারদের পরীক্ষায় ফেলতে চেয়েছিলেন কোহালি। তার ফলও পেলেন হাতে নাতে। লাঞ্চে বাংলাদেশের রান চার উইকেট হারিয়ে ৬০। তখনই আন্দাজ পাওয়া গিয়েছে, এই টেস্ট শেষ হয়ে যাবে তিন দিনের মধ্যেই। মুশফিকুর ও মাহমুদুল্লা ক্রিজে থাকলেও ফিরে গিয়েছেন ইমরুল কায়েস (৬), শাদমান ইসলাম (৬), মোমিনুল হক (৭) ও মহম্মদ মিঠুন (১৮)। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যাটিং লাইন-আপের মেরুদণ্ড এক বার ভেঙে গেলে আর সোজা হওয়া সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের সঙ্গেও সেটাই হয়েছে। দুই বাঁ-হাতি ওপেনারের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ইশান্ত শর্মা রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে বল করতে শুরু করলেন। যাতে দুই বাঁ-হাতির শরীরের সামনে থেকে বল বাইরে নিয়ে যাওয়ার কাজ করতে পারেন। উমেশ চেষ্টা করে গেলেন দু’জনের ব্যাট ও পায়ের মধ্যে ফাঁক খোঁজার। দিনের ষষ্ঠ ওভারেই সেই প্রয়াসে সফল উমেশ। সামনের পায়ের বল লোভ সামলাতে না পেরে স্ট্রেট ড্রাইভ করতে গেলেন কায়েস। তাঁর ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটে আছড়ে পড়ল উমেশের ডেলিভারি।
ইশান্ত যে বলে শাদমানকে ফেরালেন, তা যে কোনও পেসারের কাছে স্বপ্নের ডেলিভারি। এমনিতে ইনসুইং বোলার ইশান্ত। বাঁ-হাতির ক্ষেত্রে যা শরীরের বাইরের দিকে যায়। ক্রমাগত শাদমানের শরীরের সামনে থেকে বাইরের দিকে সুইং করিয়ে ব্যাট ও পায়ের মধ্যে ফাঁক তৈরি করলেন। সপ্তম ওভারের শেষ বলটি ইচ্ছাকৃত এলোমেলো সিমে বল করলেন ইশান্ত। শাদমানের ব্যাট ও প্যাডের ফাঁক দিয়ে স্টাম্প ভেঙে দিল বল। সাংবাদিক সম্মেলনে এসে ভারতীয় দলের বোলিং কোচ বি অরুণ বলছিলেন, শুক্রবার প্রথম এই বৈচিত্রের অনুশীলন করেন ইশান্ত। তিনি বললেন, ‘‘শাদমানের উইকেট পাওয়ার পরে ইশান্তের উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ আছে। গত কালই প্রথম বার অনুশীলনে এই বৈচিত্র এনেছিল ও। আজ ফলও পেল।’’ ইডেনে গোলাপি বলের টেস্টে নামার আগে ভারতীয় পেসারের হাতে এখন নতুন অস্ত্র। দ্বিতীয় ইনিংসে একটিই উইকেট পেয়েছেন ইশান্ত। দু’টি উইকেট উমেশের। চারটি মহম্মদ শামির। অশ্বিনের ঝুলিতে দু’টি। এ ম্যাচেও পাঁচ উইকেট পাওয়ার সুযোগ ছিল শামির। কিন্তু ম্যাচের ১৭তম ওভারে তাঁর বলে মুশফিকুরের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রোহিত শর্মা দ্বিতীয় স্লিপে। দিনের শেষে মুশফিকুরের নামের পাশে ৬৪ রান। তিনিই শুধু লড়াই করলেন।
রোহিত যদিও ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করলেন লাঞ্চের পরে মাহমুদুল্লার ক্যাচ নিয়ে। শামির আউটসুইংয়ে ব্যাট বাড়িয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন সে দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। যত দিন যাচ্ছে, ততই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছেন শামি। কী করে এত সফল ভারতীয় পেসার? অরুণের ব্যাখ্যা, ‘‘গতি ও সিম পজিশন শামির অস্ত্র। ক্রিকেটবিশ্বে অন্যতম সেরা সিম পজিশন ওর। তবে ফিটনেসে জোর দিয়েই নিজের পারফরম্যান্স ধরে রেখেছে শামি।’’ যোগ করেন, ‘‘শামি, উমেশদের সঙ্গেই বর্তমানে ভারতীয় দলের কাছে পাঁচ জন বিশ্বমানের পেসার রয়েছে। ওয়ার্কলোড বুঝে ব্যবহার করা হলে, এই পারফরম্যান্স নিয়মিত দেখা যাবে।’’
ইনদওরে তিন দিনে শেষ ম্যাচ। ইডেনে নৈশালোকে গোলাপি বলে টেস্ট। ক্রিকেটারদের দাবি, লাল বলের চেয়ে অনেক বেশি সুইং করে গোলাপি বল। ইডেনের সবুজ উইকেটে ঐতিহাসিক দিনরাতের টেস্ট তিন দিনও গড়াবে তো!
স্কোরকার্ড
বাংলাদেশ ১৫০ এবং ২১৩
ভারত ৪৯৩-৬ ডি.
ভারত (প্রথম ইনিংস)
(শুক্রবার ৪৯৩-৬ এর পরে)
জাডেজা ন. আ. ৬০n৭৬
উমেশ ন. আ. ২৫n১০
অতিরিক্ত ৭
মোট ৪৯৩-৬ ডি. (১১৪)
পতন: ২-১০৫ (পুজারা, ২৯.৫), ৩-১১৯ (কোহালি, ৩১.৫), ৪-৩০৯ (রাহানে, ৮৫.৪), ৫-৪৩২ (মায়াঙ্ক, ১০৭.৩), ৬-৪৫৪ (ঋদ্ধিমান, ১১০.৫)।
বোলিং: এবাদত হোসেন ৩১-৫-১১৫-১, আবু জায়েদ ২৫-৩-১০৮-৪, তাইজুল ইসলাম ২৮-৪-১২০-০, মেহদি হাসান মিরাজ় ২৭-০-১২৫-১, মাহমুদুল্লা ৩-০-২৪-০।
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)
শাদমান বো ইশান্ত ৬n২৪
ইমরুল বো উমেশ ৬n১৩
মোমিনুল এলবিডব্লিউ বো শামি ৭n২০
মিঠুন ক মায়াঙ্ক বো শামি ১৮n২৬
মুশফিকুর ক পুজারা বো অশ্বিন ৬৪n১৫০
মাহমুদুল্লা ক রোহিত বো শামি ১৫n৩৫
লিটন ক ও বো অশ্বিন ৩৫n৩৯
মেহদি বো উমেশ ৩৮n৫৫
তাইজুল ক ঋদ্ধিমান বো শামি ৬n৪৩
জায়েদ ন. আ. ৪n৯
এবাদত ক উমেশ বো অশ্বিন ১n৩
অতিরিক্ত ১৩
মোট ২১৩ (৬৯.২)
পতন: ১-১০ (ইমরুল, ৫.১), ২-১৬ (শাদমান, ৬.৬), ৩-৩৭ (মোমিনুল, ১২.৫), ৪-৪৪ (মিঠুন, ১৪.১), ৫-৭২ (মাহমুদুল্লা, ২৬.৩), ৬-১৩৫ (লিটন, ৩৯.২), ৭-১৯৪ (মেহদি, ৫৪.৫), ৮-২০৮ (তাইজুল, ৬৬.৩), ৯-২০৮ (মুশফিকুর, ৬৭.৫), ১০-২১৩ (এবাদত, ৬৯.২)।
বোলিং: ইশান্ত শর্মা ১১-৩-৩১-১, উমেশ যাদব ১৪-১-৫১-২, মহম্মদ শামি ১৬-৭-৩১-৪, রবীন্দ্র জাডেজা ১৪-২-৪৭-০, আর অশ্বিন ১৪.২-৬-৪২-৩।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy