ইডেনে পুনর্মিলন।ছবি: উৎপল সরকার।
ভারত-পাক ম্যাচ ইডেনে আসার খবর পাওয়ার পর তিনি বলেছিলেন, এই ম্যাচ খেলার চেয়ে আয়োজন করাটা তাঁর কাছে অনেক সোজা। শুক্রবারের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখে ও তাঁর সারা দিনের রুটিন শুনে অবশ্য তা মনে হওয়ার উপায় নেই।
সারা দিন ধরে সৌরভের দৌড় দেখার পর ময়দানের এক কোচকে হেসে বলতে শোনা গেল, ‘‘উসেইন বোল্টের চেয়ে একটু কম গতিতে দৌড়চ্ছেন আমাদের সিএবি প্রেসিডেন্ট। ওঁর কাছে আজ পৌঁছনো যাবে না।’’
সকালে ঘন্টা তিনেক ‘দাদাগিরি’-র শুটিং। ভারতীয় দলের নেটে বিরাট কোহালির সঙ্গে সেশন। এককালের সতীর্থ যুবরাজ, নেহরা, হরভজন, রায়নাদের সঙ্গে আড্ডা। ক্লাব হাউসে অপেক্ষমান ব্যক্তিদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক। তাঁদের টিকিটের চাহিদা সামলানো। নিউজ চ্যানেলের লাইভ শোয়ে শনিবারের মহাম্যাচের আগাম বিশ্লেষণ— এ সবই সামলালেন। তাঁর সহচরদের কথায়, যে ভাবে অনায়াসে অফে ড্রাইভ করতেন, সে ভাবেই।
সৌরভ যখন এই অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে দাপাচ্ছেন, তখন ক্লাব হাউসের অন্যান্য ঘরের মালিকদেরও ফর্ম তুঙ্গে। টিকিটের হাহাকারের মধ্যে হঠাৎ দেখা গেল আশার আলো। জানা গেল বিসিসিআই ও আইসিসি-কে দেওয়া বেশ কিছু টিকিট ফেরৎ নিয়ে আসা সম্ভব। তাদের বহু অতিথিই শেষ পর্যন্ত আসছেন না। সেই টিকিটগুলির কী ভাবে সদ্ব্যবহার করা যেতে পারে, বিকেল থেকে শুরু হয়ে গেল সেই অঙ্ক কষা। সারা দিন ইডেনের বাইরে থেকে যাবতীয় কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করার পর সন্ধ্যায় তাই ঢুকে পড়লেন যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। সুবীরবাবুর বক্তব্য, ‘‘এই অঙ্কটা কষার জন্যই তো সিএবি-তে এলাম। কিছু লোকের মুখে তো হাসি ফোটানো গেল।’’
সিএবির অন্দরমহলে কিছু মানুষের মুখে হাসি ফুটলেও ইডেনের বাইরে কুখ্যাত বটতলা বা মহমেডান মাঠের টিকিট কাউন্টারের আশপাশের অঞ্চলে এ দিনও দেদার কালোবাজারি হয়েছে বলে শোনা গেল। যেখানে ক্লাব হাউসের টিকিটের দাম নাকি চড়েছিল কুড়ি হাজার টাকাতেও।
সিএবি কর্তারা বলছেন, ইডেনের ম্যাচে টিকিটের এমন হাহাকার শেষ দেখা গিয়েছিল ২০১২-র আইপিএলে। সৌরভের পুণে ওয়ারিয়র্স বনাম কলকাতা নাইট রাইডার্স ম্যাচে। তার পরের বছর ভারত-পাকিস্তান ওয়ান ডে-তেও না কি এত মারাত্মক চাপ ছিল না টিকিটের। যা এই ম্যাচে সহ্য করতে হল সিএবি কর্তাদের। যদিও যুগ্মসচিবের আসনে সদ্য বসা অভিষেক ডালমিয়া বলছেন, ‘‘এর চেয়ে অনেক বেশি চাপ আইসিসি-র সভায় সামলাতে হয়েছে। এটা তার তুলনায় কিছুই নয়।’’
মহাম্যাচের অপেক্ষায় শুধু যে সৌরভের শহর ও শহরতলীর মানুষ ফুটছেন, তা নয় ভারতীয় ক্রিকেট তারকাদের মোবাইলও ভরে উঠেছে তাঁদের আত্মীয়-বন্ধুদের আবদারে। তাই সৌরভের কাছ থেকে টিকিট চেয়ে নিলেন তাঁরাও। ধোনির স্ত্রী সাক্ষী। যুবরাজ সিংহর মা শবনম। হরভজনের জীবনসঙ্গিনী গীতা বসরা। বিরাট কোহালির দাদা বিকাশ। আশিস নেহরার পরিবারও আসছে বলে শোনা গেল। দলের প্র্যাকটিস শুরুর আগে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান শোয়েব মালিক ঘুরে যান সৌরভের ঘরে। তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের জন্য টিকিটের খোঁজে। হাসিমুখেই বেরোতে দেখা যায় তাঁকে। ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকেও এ দিন সিএবি প্রেসিডেন্টের চেম্বারের সামনে দেখা যায় টিকিটের জন্য।
ইডেন ও তার আশপাশে টিকিটের হাহাকারের রেশ আছড়ে পড়ল যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনেও সেখানে ভারত-পাক ম্যাচের টিকিট না পেয়ে বিক্ষোভ দেখান রাজ্যের ক্রীড়া দফতরের গোল্ডেন কার্ড হোল্ডাররা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ক্রীড়া দফতর থেকে যে টিকিট দেওয়া হয়, সেই টিকিট দেওয়ার কাউন্টারে এ দিন তালা লাগানো ছিল। আর তাতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন গোল্ডেন কার্ডের গ্রাহকরা। প্রশাসন না কি বিক্ষাভকারীদের জানিয়েছে, সিএবি টিকিট দেয়নি বলেই এই অবস্থা। সিএবি যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় কিন্তু বলে দেন, ‘‘সিএবি টিকিট দিয়েছে। ওরা যদি তা ঠিকমতো বন্টন না করে, তাতে সিএবি-র কী করার আছে?’’ এই নিয়ে বচসায় বিক্ষোভকারীদের একাংশ স্টেডিয়ামের মধ্যে ভাঙচুর করে বলেও অভিযোগ ওঠে। তবে বিধাননগর পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি তর্কাতর্কির বেশি এগোয়নি।
শনিবার ইডেনে অমিতাভ বচ্চন ও শফকত আমানত আলি দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার আগে যখন টস করতে নামবেন ধোনি ও আফ্রিদি, তখনও হয়তো ইডেনের বাইরে এই হাহাকারের রেশ থেকেই যাবে। তবু এই মহাযজ্ঞে চলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy