জয়সূচক গোল করে উচ্ছাস ওমানের রাবিয়া আল মান্ধারের(ডান দিক থেকে দুই নম্বর)।—ছবি পিটিআই।
সুনীল ছেত্রীরা এই ম্যাচটা জিততে পারল না দেখে খারাপ লাগছে।
এত প্রাধান্য নিয়ে খেলে, মাঝমাঠ এত ভাল সংগঠিত করে, একের পর এক গোল করার সুযোগ পেয়েও ইগর স্তিমাচের দল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে শেষ পর্যন্ত জিততে পারল না। হেরে গেল শেষ দিকে দু’টো গোল খেয়ে। ম্যাচের শেষ পনেরো মিনিটের ওমান-ঝড় ওলটপালট করে দিয়ে গেল সবকিছু। আরও একটু পরিষ্কারভাবে লিখতে হলে আট মিনিটের ব্যবধানে করা ওমানের রাবিয়া আল মান্ধারের অসাধারণ দুটো গোলের সৌজন্যে মাথা নত করতে বাধ্য হল উদান্ত সিংহ, শুভাশিস বসুরা। ওমানের জয়ের গোলটা তো এক কথায় বিশ্বমানের। তবে আল মান্ধারের প্রথম গোলটার জন্য আমি ভারতের গোলকিপার গুরপ্রীত সিংহ সাঁধুকে দায়ী করব। তরুণ বসু বা ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কেউ থাকলে এই গোল বাঁচিয়ে দিত। চার বছর আগের পুনরাবৃত্তিও হত না। সে বারও তো একই ব্যবধানে হেরেছিল সুনীলরা। পার্থক্য শুধু একটাই যে, ভারত ম্যাচের বেশিরভাগ সময় এগিয়ে থেকেও শেষরক্ষা করতে পারল না।
আমরা যখন খেলতাম তখন কাতার, ওমান এই দলগুলোর নাম শুনিনি। দু’বার এশিয়ান গেমসে খেলেছি। সেখানে ইরান, ইরাকের মতো দেশকে শক্তিধর দল হিসাবে সামনে পেয়েছি। আসলে সারা বিশ্বের মতো এশিয়াতেও ফুটবল শক্তির অনেক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে দেখছি ওমান আমাদের দেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ওমান ৮৭, ভারত ১০৩।
কিংস কাপ, আন্তমর্হাদেশীয় কাপে ইগর স্তিমাচ সফল হতে পারেননি। কারণ তখন জাতীয় দলের কোচ হিসাবে সদ্য দায়িত্ব নিয়েছিলেন ইগর। এ বার অনেক সুযোগ পেয়েছিলেন। বলতে দ্বিধা নেই সেটা কিন্তু কাজে লাগিয়েছেন। ভারত শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি ঠিকই, কিন্তু সুনীল-উদান্তরা যা গোল নষ্ট করেছে তাতে আমার হিসেবে ৩-২ গোলে জেতা উচিত ছিল। এত ভাল সংগঠিত ফুটবল বহু দিন দেখিনি।
নেপালের কোচ হিসাবে ওমানের মুখোমুখি হয়েছি। জানি ওরা কতটা শক্তিশালী। দ্রুত গতির ফুটবল খেলতে অভ্যস্ত। সেটা ইগরও জানতেন। সে জন্যই শুরু থেকে পাল্টা আক্রমণ নির্ভর ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল সন্দেশ ঝিঙ্ঘানরা। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন ইগর। আদতে সেটা ছিল ৪-৩-২-১। সামনে শুধু সুনীলকে রেখে দুটো উইং এমনভাবে ব্যবহার করলেন ইগর, যাতে দলে ভারসাম্য থাকে। উদান্ত আর আশিক কুরিয়নরা দুই প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যাচ্ছিল। আবার ওমান পাল্টা আক্রমণে এলে ওরা নেমে আসছিল মাঝমাঠে। এতে শুরুতেই সাফল্য পেল ভারত। উদান্তর দুর্দান্ত শট ওমান গোলকিপারকে বোকা বানিয়ে ক্রসবারের ভিতর দিকে লেগে ফিরল। আমি নিশ্চিত ছিলাম, ভারত যা খেলছে, তাতে গোল আসবেই। সেটাই হল। ওমান বক্সের ডান দিক থেকে ব্র্যান্ডনের ফ্রি-কিকটা এল গড়িয়ে। ঠিক ওমান বক্সের মাথায়। আর সেই বলেই ম্যাচের চব্বিশ মিনিটে দুর্দান্ত গোলটা করে ফেলল সুনীল। এই ছেলেটাকে যতবার দেখি, ততবার নতুন করে চিনি। এই দলটার মধ্যে ও সবথেকে সিনিয়র। কিন্তু অন্যদের মতোই সমান খিদে এখনও ছেলেটার। ১১২ নম্বর ম্যাচে ৭২ টা গোল হয়ে গেল সুনীলের। নিজে তো স্ট্রাইকার ছিলাম। ভারতের জার্সি গায়ে এক জন স্ট্রাইকার এত গোল করছে ভেবে ভাল লাগছে ।
ভারত কেন ৮২ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও হেরে গেল সেটা ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ভাবতে বসে একটা কথা মনে হচ্ছে, ক্লান্তিটাই হয়তো শেষ পর্যন্ত হারিয়ে দিয়ে গেল ইগরের ছেলেদের। শুরু থেকেই সুনীল-আদিল-রওলিনরা নিজেদের এতটাই উজাড় করে দিল যে একটা সময়ের পর তারা আর পারছিল না। গুয়াহাটির স্টেডিয়ামে ভারতের ম্যাচ দেখতে এসেছিলেন প্রচুর সমর্থক। সারাক্ষণ চিৎকার করে গেলেন সুনীলদের উৎসাহ দিতে। তাতে যেন আরও তেতে গিয়েছিল পুরো দলটা। শেষরক্ষা হয়তো হল না। স্বপ্নভঙ্গ হল আমাদের। ম্যাচ মুঠোয় পুরেও ওমানকে হারানোর সুযোগটা হাতছাড়া হল বলে। তবুও বলব, সুনীল তোমাদের খেলা দেখে গর্ব হচ্ছে।
ভারত: গুরপ্রীত সিংহ সাঁধু, রাহুল ভেকে, সন্দেশ জিঙঘ্নান, আদিল থান, শুভাশিস বসু (সাহল আব্দুল সামাদ), অনিরুধ থাপা, ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ (লালিনজুয়ালা চাংতে), রাওলিন বর্জেস, আশিক কুরিয়ন (মনভীর সিংহ), উদান্তা সিংহ, সুনীল ছেত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy