প্রতীক্ষা: অস্ট্রেলিয়ায় দিনরাতের টেস্ট খেলতে রাজি বিরাটরা। ফাইল চিত্র
ইডেনে সফল উৎক্ষেপণের পরে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম বার দিনরাতের টেস্ট খেলতে তাঁরা তৈরি বলে ঘোষণা করে দিলেন বিরাট কোহালি। ভারত অধিনায়কের ‘হ্যাঁ’ বলে দেওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এত দিন ধরে তাঁরা অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ডের অনুরোধকে প্রত্যাখান করেই এসেছেন। এক বছর আগে শেষ সফরেও অ্যাডিলেডে প্রথম টেস্টই দিনরাতের করতে চেয়েছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। কোহালিরা রাজি হননি। তাঁরা বলেন দেন, গোলাপি বলে দিনরাতের টেস্ট খেলার যথেষ্ট প্রস্তুতি তাঁদের নেই।
শেষ সফরে কোহালির সঙ্গে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক টিম পেনের প্রায়ই বাগ্যুদ্ধ বাধছিল। সেই পেন ক’দিন আগে ভারত অধিনায়ককে খোঁচা দেন, দিনরাতের টেস্ট খেলা নিয়ে। দেশে বসে অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকদের পেন বলেন, ‘‘দেখি কোহালিকে জিজ্ঞেস করে, ও কোথায় দিনরাতের টেস্ট খেলতে রাজি হয়।’’ এ দিন পেনের নাম না করে পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েননি কোহালি। বলে দেন, ‘‘যেখানে খুশি দিনরাতের টেস্ট হোক, আমরা সেই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য তৈরি। গাব্বা, পার্থ, যেখানেই হোক।’’ ইডেনে ভারতের মাটিতে প্রথম দিনরাতের ঐতিহাসিক টেস্টে সেঞ্চুরি করা কোহালির গলায় এখন গোলাপি বলের রহস্য জয় করার প্রত্যয় শোনা যাচ্ছে। বলে গেলেন, ‘‘নিজেদের দেশে যে গোলাপি বলের টেস্ট খেলেছি, তা নিয়ে বেশ খুশি আমরা। তা ছাড়া আমাদের দলে এখন এমনই নৈপুণ্য রয়েছে যে, বিশ্বের যে কোনও জায়গায় গিয়ে যে কোনও পরিবেশে আমরা খেলার ক্ষমতা রাখি। লাল বলে হোক কী সাদা বলে কী গোলাপি বলে।’’
অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম বার টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন কোহালিরা। এ বার স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নারেরা ফিরে আসায় সেই হারের জবাব দিতে চাইবে অস্ট্রেলিয়া। এখন থেকেই তাই বছরের শেষের টেস্ট সিরিজ নিয়ে শিঙা ফোঁকাফুঁকি শুরু হয়ে গিয়েছে। কোহালি দু’বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়েই প্রথম ঘোষণা করেছিলেন, তাঁরা নির্ভীক ক্রিকেট খেলতে এসেছেন। পিচ নিয়ে অভিযোগ জানাবেন না, বিদেশকে দেশের মতো আপন করতে চাইবেন। অস্ট্রেলিয়ায় যে কোনও জায়গায় দিনরাতের টেস্ট খেলতে আমরা তৈরি, সেই মন্ত্রেরই প্রতিফলন। এমন এক দল তিনি গড়ে তুলতে চাইছেন, যারা কোনও জায়গাতে গিয়ে খেলতেই ভয় পাবে না। গাব্বায় গত বার টেস্টই রাখেনি অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। তা নিয়ে তাদের ক্রিকেটারদের একাংশের অসন্তোষ ছিল। ঐতিহাসিক ভাবে গাব্বা আর পার্থেই সব চেয়ে গতিসম্পন্ন আর বাউন্সের পিচ হয়। গাব্বায় অনেক দিন ধরে কোনও টেস্ট হারেনি অস্ট্রেলিয়া। বরাবর এই দু’টো জায়গাতেই সফরকারী ব্যাটসম্যানদের ‘চিন মিউজিক’ শোনানোর হুঙ্কার ছেড়েছে তারা। বছরের শেষ দিকের সফরে তাই, ‘এসো না হে, গাব্বার কড়াইয়ে এ বার তোমাদের তেলেভাজা করব’ গোছের একটা মনোভাব দেখাতে শুরু করে দিয়েছেন পেনরা। ওয়াংখেড়েতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজ শুরুর আগে কোহালি যেন টেস্টের পাল্টা রণহুঙ্কারটাও দিয়ে রাখলেন।
যদিও ওয়াকিবহাল মহলে শোনা যাচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় এ বারের সফরসূচি কেমন হবে, দিনরাতের টেস্ট থাকবে কি না, এ সব নিয়ে দুই বোর্ডের মধ্যেও কথাবার্তা চলছে। মাঠে যতই প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের স্রোত চলুক, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ভারতীয় বোর্ডের সঙ্গে এখন অস্ট্রেলীয় বোর্ডের সম্পর্ক উত্তরোত্তর ভাল হচ্ছে। এই সিরিজকে কেন্দ্র করে মাঠের বাইরে সৌরভদের সঙ্গে স্মিথদের বোর্ডের শীর্ষ কর্তাদের বৈঠকও হয়েছে মুম্বইয়ে। আইসিসি-তে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড— ক্রিকেটের তিন বৃহৎ শক্তি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। শশাঙ্ক মনোহরের আইসিসি প্রধান হিসেবে মেয়াদকালে যে ভারতীয় বোর্ডের প্রভাব খর্ব করা হয়েছে, তা চলতে দিতে নারাজ ভারতীয় প্রশাসকেরা। সেই কারণে তিন বড় দেশ একজোট হয়ে মিত্রশক্তি তৈরি করতে পারে। এর আগে শ্রীনিবাসন আইসিসি প্রধান হয়ে যে রণনীতি নিয়েছিলেন।
এই আবহে অস্ট্রেলীয় বোর্ড যদি দিনরাতের টেস্ট খেলার আহ্বান জানায়, কোহালিদের পক্ষে আর ‘না’ বলা সম্ভব হবে না। কারও কারও পূর্বাভাস, এর পর সৌরভরাও চাইবে অস্ট্রেলিয়া এসে এ দেশে দিনরাতের টেস্ট খেলুক। তাতে দু’দেশের বোর্ডের কোষাগারই আরও ফুলেফেঁপে উঠবে।
হাতের লক্ষ্মী পায়ে ঠেলবে কে! ক্রিকেটের নতুন রং তাই গোলাপি!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy