রাজকীয়: ম্যাচ জিতিয়ে জার্সিতে নিজের নামের দিকে ইঙ্গিত (বাঁ দিকে)। অবিশ্বাস্য ইনিংসের পরে হুঙ্কার কোহালির। শুক্রবার। টুইটার এএফপি
ক্যারিবিয়ান কেসরিক উইলিয়ামসের বলে ছক্কা মেরে ভারতের জয় আনার পরে বিরাট কোহালি নিজের পিঠে চাপড় মারছিল। যে ভঙ্গি দেখে মনে পড়ছিল মুষ্ঠিযোদ্ধা মহম্মদ আলির কথা। আলির মতোই যেন এ দিন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান (অপরাজিত ৯৪) করে বিরাট বার্তা দিল, ‘‘আমিই সেরা।’’
সত্যিই, রান তাড়া করে ম্যাচ জেতায় কোহালির আগ্রাসন, একাগ্রতা বুঝিয়ে দেয়, এই মুহূর্তে ক্রিকেট বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান ও-ই। এই মুহূর্তে বিরাট বাদে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা তিন ব্যাটসম্যান হল কেন উইলিয়ামসন, জো রুট, স্টিভ স্মিথ। কিন্তু এরা কেউ একই সঙ্গে সমান ছন্দে টেস্ট, ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে রান তাড়া করে জিততে পারে না। যেটা পারে কোহালি। দশ বছর আগে এই ডিসেম্বরেই ইডেনে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে ম্যাচে রান তাড়া করে ভারতকে জেতাতে কোহালির শতরান দেখেছিলাম। সেই ছন্দ, আগ্রাসন, রানক্ষুধায় এক বিন্দু মরচে পড়েনি। এটাই কোহালিয়ানা।
বিরাটের এই বার্তার মধ্যে কোনও গর্ব নেই। রয়েছে নিজের ক্ষমতার প্রতি অগাধ আস্থা ও আত্মবিশ্বাস। বিপক্ষে বর্তমান টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পাওয়ার হাউস ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যারা ২০ ওভারে ২০৭-৫ স্কোরবোর্ডে তুলে লড়াইয়ে নেমেছে। চার ওভারের মধ্যেই প্যাভিলিয়নে ফিরে গিয়েছে ওপেনার রোহিত শর্মা। মনে হচ্ছিল, ম্যাচ আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজের। কিন্তু বিরাট একাই সব হিসাব উল্টে দিয়ে ৮ বল বাকি থাকতেই ৬ উইকেটে জয় এনে দিল ভারতকে। দশ বছরেরও বেশি সময় আইপিএল দেখছি। কিন্তু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়েও এত ভাল ইনিংস খেলতে দেখিনি বিরাটকে। ইনিংসটা যেমন ধ্রুপদী তেমন আগ্রাসীও বটে।
রোহিত শর্মার (৮) একটা দুর্বলতা হল, ও শুরুতে কয়েকটা শট মেরে সফল না হলে মরিয়া হয়ে চালাতে যায়। এ দিনও সে ভাবে খেলতে গিয়েই ফিরল। কিন্তু কে এল রাহুল (৪০ বলে ৬২) স্কোয়ার কাট ও ব্যাকফুটে গালির পাশ দিয়ে স্টিয়ার করে রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রেখেছিল। বিরাট এসে প্রথমে ২০ বলে তুলল ২০ রান। পরের ৩০ বলে ৭৪ রান। এই পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দেয়, কী ভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিংকে একা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বিরাট। দিলস্কুপ বা রিভার্স সুইপ-এর মতো শট না মেরে কব্জির মোচড়ে যে ভাবে রান তুলছিল তা দু’চোখ ভরে দেখার মতো। বিশেষ করে ‘বটম হ্যান্ডের’ মোচড়ে মিড উইকেটের উপর দিয়ে যে ছয়গুলো কোহালি মারল, সেগুলো ওর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। বল মারার সময়ে পা ও মাথা বলের উপরে!
ওয়েস্ট ইন্ডিজ এই ম্যাচে ১৫টি ছক্কা মেরেছে। ভারতীয়রা মেরেছে ১২টি ছক্কা। সব মিলিয়ে হায়দরাবাদে ছক্কা-বৃষ্টি ছিল উপভোগ্য। তবে উপ্লল স্টেডিয়ামে শুক্রবারের রাতটা বোধহয় দ্রুত ভুলতে চাইবে ওয়াশিংটন সুন্দর। প্রথম ওভারে ওর খাটো বলেই ছন্দ পেয়ে যায় এভিন লুইস (তিনটি চার ও চারটি ছক্কা সহযোগে ১৭ বলে ৪০ রান)। ভারতীয়দের পরিকল্পনার অভাব চোখে পড়ল। এভিন লুইসের ব্যাট পয়েন্টের দিক থেকে নামে। শিমরন হেটমায়ার মিড উইকেট, স্কোয়ার লেগ, মিড অন অঞ্চল দিয়ে শট নিতে ভালবাসে। তাই উচিত ছিল অফস্টাম্পের একটু বাইরে বল করা। তবে বহুদিন পরে ফিরে ভাল বল করল ভুবনেশ্বর কুমার। অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গতির হেরফের করে নাকল বলটা সুন্দর করল। রবীন্দ্র জাডেজাও উইকেট টু উইকেট বল করে গিয়েছে।
স্কোরকার্ড
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২০৭-৫ (২০)
ভারত ২০৯-৪ (১৮.৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
সিমন্স ক রোহিত বো চাহার ২•৪
লুইস এলবিডব্লিউ বো ওয়াশিংটন ৪০•১৭
কিং স্টা. ঋষভ বো জাডেজা ৩১•২৩
হেটমায়ার ক রোহিত বো চহাল ৫৬•৪১
পোলার্ড বো চহাল ৩৭•১৯
হোল্ডার ন. আ. ২৪•৯
রামদীন ন. আ. ১১•৭
অতিরিক্ত ৬
মোট ২০৭-৫ (২০)
পতন: ১-১৩ (সিমন্স, ১.২), ২-৬৪ (লুইস, ৫.৪), ৩-১০১ (কিং, ১০.১), ৪-১৭২ (হেটমায়ার, ১৭.১), ৫-১৭৩ (পোলার্ড, ১৭.৩)।
বোলিং: ওয়াশিংটন সুন্দর ৩-০-৩৪-১, দীপক চাহার ৪-০-৫৬-১, ভুবনেশ্বর কুমার ৪-০-৩৬-০, রবীন্দ্র জাডেজা ৪-০-৩০-১, যুজবেন্দ্র চহাল ৪-০-৩৬-২, শিবম দুবে ১-০-১৩-০।
ভারত
রোহিত ক হেটমায়ার বো পিয়ের ৮•১০
রাহুল ক পোলার্ড বো পিয়ের ৬২•৪০
কোহালি ন. আ. ৯৪•৫০
ঋষভ ক হোল্ডার বো কটরেল ১৮•৯
শ্রেয়স ক ও বো পোলার্ড ৪•৬
শিবম ন. আ. ০•০
অতিরিক্ত ২৩
মোট ২০৯-৪ (১৮.৪)
পতন: ১-৩০ (রোহিত, ৩.২), ২-১৩০ (রাহুল, ১৩.৩), ৩-১৭৮ (ঋষভ, ১৬.২), ৪-১৯৩ (শ্রেয়স, ১৭.৬)।
বোলিং: শেল্ডন কটরেল ৪-০-২৪-১, জেসন হোল্ডার ৪-০-৪৬-০, খারি পিেয়র ৪-০-৪৪-২, হেডেন ওয়ালশ ২-০-১৯-০, কেসরিক উইলিয়ামস ৩.৪-০-৬০-০, কায়রন পোলার্ড ১-০-১০-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy