প্রতীক্ষা: রাতের আলোয় মায়াবি ইডেেন ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখেছেন ওয়ান ডে এবং আইপিএলের ম্যাচ। এ বার হয়তো গোলাপি বলের টেস্টও হতে চলেছে ক্রিকেটের নন্দনকাননে। ফাইল চিত্র
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের এক নতুন উপহার দেওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই উপহার হল দিন-রাতের টেস্ট। সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে ২২ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ইডেনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচটি আয়োজন করা হতে পারে নৈশালোকে। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে নতুন মেয়াদের সূচনা হয়তো মাস্টারস্ট্রোক দিয়েই করতে চলেছেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক।
বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই ইডেন। ১৯৭০ সালে বর্ণবিদ্বেষের জন্য নির্বাসিত হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রায় ২২ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানচিত্রের বাইরে ছিল তারা। সেই নির্বাসন উঠে যাওয়ার পরে ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর ইডেনে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিল ক্লাইভ রাইসের দক্ষিণ আফ্রিকা। আরও এক বার ইডেন সাক্ষী হতে চলেছে নতুন ইতিহাসের। ভারতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট আয়োজনের দিকে এগোচ্ছে ইডেন। যা ইঙ্গিত, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেরও এই দিন-রাতের টেস্ট খেলতে আপত্তি নেই।
২০১৮-র অস্ট্রেলিয়া সফরের অ্যাডিলেড টেস্ট গোলাপি বলে আয়োজন করতে চেয়েছিল অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু ভারত রাজি না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। অথচ ২৪ অক্টোবর মুম্বইয়ে দল নির্বাচনের বৈঠকে অধিনায়ক বিরাট কোহালির সঙ্গে দিন-রাতের টেস্ট নিয়ে আলোচনা করেছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শুক্রবার সিএবি-তে তাঁর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সৌরভ ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘দিন-রাতের টেস্ট খেলতে আগ্রহী বিরাট।’’ কিন্তু তা যে বাংলাদেশ সিরিজেই হতে চলেছে, সে বিষয়ে নিশ্চয়তা ছিল না। বর্তমান ভারতীয় অধিনায়ককে রাজি করিয়েই ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন অধ্যায় শুরু করতে চলেছেন সৌরভ।
রবিবার বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দু-তিন দিন আগেই ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে দিন-রাতের টেস্ট খেলার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে চূড়ান্ত আলোচনা করে দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত জানাবে।
বিসিবি-র ক্রিকেট অপারেশনস ম্যানেজার ও প্রাক্তন ক্রিকেটার আক্রম খান বলেছেন, ‘‘ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে দু-তিন দিন আগেই আবেদনপত্র পেয়েছি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে এখনও আলোচনা হয়নি। বোর্ডের সদস্য ও ক্রিকেটারদের মতামত নিয়ে দু-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
বিসিবি-র সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘নৈশালোকের টেস্ট খেলার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতির সময় পাওয়া যাবে কি না, তা ভেবে দেখতে হবে। তাই টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
সৌরভ বরাবরই গোলাপি বলের টেস্টের পক্ষে। শুক্রবারই তিনি বলেছিলেন, ‘‘মাঠ ভরানোর জন্য দিন-রাতের টেস্টই এখন বিকল্প। আগে অফিস ছুটি নিয়ে সকালে ম্যাচ দেখতে আসা যেত। এখন তার কোনও উপায় নেই। তাই অফিস ও স্কুল ফেরত ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য টেস্ট উপভোগ করার উপায় করে দিতে হবে।’’
এই ইডেনেই প্রথম গোলাপি বলের ম্যাচ আয়োজন করেছিলেন সৌরভ। ২০১৬ সালে সিএবি-র সুপার লিগ ফাইনালে মোহনবাগান ও ভবানীপুর ক্লাব মুখোমুখি হয়েছিল নৈশালোকে। মহম্মদ শামি, ঋদ্ধিমান সাহা, ঋত্বিক চট্টোপাধ্যায়ের মতো তারকা খেলেছিলেন। সে ম্যাচে পেসাররাই বিপক্ষের ত্রাস হয়ে উঠেছিলেন। কোনও সাহায্য পাননি স্পিনারেরা। ঋত্বিক বলছিলেন, ‘‘গোলাপি কোকাবুরা বল হাত থেকে পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই স্পিনারেরা বল গ্রিপ করতে পারে না। রাতে শিশির পড়লে আরও সমস্যায় পড়তে হয়। পিচে ঘাস থাকলে নৈশালোকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে পেসাররা। তবে দ্রুতই সেই বলের সিম (সেলাই) বসে যায়। বল পুরনো হলে ব্যাটসম্যানেরা অনায়াসে রান করতে পারে।’’ কিন্তু ইডেনে কোন সংস্থার গোলাপি বলে খেলা হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তার উপরে নভেম্বরের সন্ধ্যায় শিশির ও কুয়াশা সমস্যা হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন থাকছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানচিত্রে কোকাবুরার গোলাপি বলই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ভারতে ব্যবহৃত হয় এসজি টেস্ট বল। এটাই দেখার, ইডেন টেস্টের জন্য ভারতীয় বোর্ড কোনও বিশেষ বল তৈরি করার নির্দেশ দেয় কি না।
সৌরভের এই উদ্যোগে আপ্লুত ক্রিকেটারদের অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট অশোক মলহোত্র। তিনি বলেছেন, ‘‘বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে সৌরভ যে সবার জন্য কোনও একটা উপহার নিয়ে আসবে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলাম। তবে এই নভেম্বরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই যে সেই ঐতিহাসিক টেস্ট হবে, তার আন্দাজ ছিল না। অসাধারণ সিদ্ধান্ত। এখনও পর্যন্ত টেস্ট খেলিয়ে দেশের সবাই দিন-রাতের টেস্ট খেলে ফেলেছে। শুধু ভারত ও বাংলাদেশ এখনও তা করতে পারেনি। টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ কিন্তু দিন-রাতের টেস্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেই তার সূচনা হওয়ার ইঙ্গিত পেয়ে ভাল লাগছে।’’
ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টকে বিশেষ করে তোলার উদ্যোগ আগে থেকেই নিয়েছিল সিএবি। দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ম্যাচের আগের দিন রাতেই শহরে পৌঁছে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও প্রথম দিন ইডেনে আসতে পারেন। প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি দু’দেশের প্রথম টেস্ট সাক্ষাতের সদস্যদেরও সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সিএবি-র। যা ইঙ্গিত, নভেম্বরে ইডেনে বসতে চলেছে ক্রিকেটের মহোৎসব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy