টেস্টে প্রথম বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর মহম্মদ সিরাজ। ছবি পিটিআই।
দৃঢ় সংকল্প। অদম্য জেদ। হতাশা ভুলে এগিয়ে যাওয়া। নিয়মানুবর্তিতা। এসবের সংমিশ্রণ হলেন মহম্মদ সিরাজ। হায়দরাবাদের হতদরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসে মেলবোর্নে বক্সিং-ডে টেস্টে অভিষেক আগেই ঘটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য ওঁর বাবা ছোট ছেলের ক্রিকেটীয় উত্থান দেখে যেতে পারেননি।
চলতি ব্রিসবেন টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৩ রানে ৫ উইকেট। ক্লাব ক্রিকেট হোক কিংবা আন্তর্জাতিক মঞ্চ। ৫ উইকেট নেওয়া একজন বোলারের স্বপ্ন। এর মধ্যে আবার প্রথম ইনিংসের পঞ্চম বলেই ডেভিড ওয়ার্নারকে বিষাক্ত আউট সুইঙ্গারে ফেরানো। ওঁর এমন ভয়ঙ্কর বোলিং দেখে আপ্লুত খোদ সচিন তেন্ডুলকর। কিন্তু দুর্ভাগ্য সিরাজের ‘ব্রেস্ট ফ্রেন্ড’ মহম্মদ ঘাউস প্রয়াত।
আনন্দবাজার ডিজিটালের ফোন যেতেই সিরাজের বড় দাদা ইসমাইল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন। বলছিলেন, ‘‘গত দেড় মাস আমরা প্রতিটা দিন খুব কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছি। প্রত্যেকবার ভিডিয়ো কলে কথা বলার সময় ভাই শুধু কেঁদেছে। বাবাকে নিয়েই কথা বলে যেত। ও যাতে খোলা মনে খেলতে পারে সেইজন্য মা একবারও ওর সামনে কাঁদেনি। বরং ওকে ভরসা জোগাতো। এতদিনে সুফল পাওয়া গেল। কিন্তু দুর্ভাগ্য বাবা ওর সাফল্য দেখতে পারল না। এটা যে কত বড় কষ্ট সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’’
গত বছর ২০ নভেম্বর। সিরাজের পরিবারের কাছে ‘কালা দিন’। টেস্ট সিরিজে পারফর্ম করার জন্য সিরাজ তখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঠিক সেই সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওঁর অটোচালক বাবা মহম্মদ ঘাউস হঠাৎ মারা যান। তবুও থেমে থাকেননি ২৬ বছরের যুবক। বরং চোটের জন্য বাদ হয়ে যাওয়া সিনিয়র দাদাদের শূন্যস্থান ভরাট করে চলেছেন। ইশান্ত শর্মা, মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা, উমেশ যাদবের অভাব বুঝতে দিচ্ছেন না।
স্থানীয় এলাকায় টেনিস বলের ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়াতেন সিরাজ। ছেলের প্যাশন দেখে সিরাজের বাবা ছোট ছেলেকে সাইবাবার ক্যাম্পে ভর্তি করে দেন। নিখরচায় ওঁর ক্রিকেট পাঠ শুরু হয়। অনূর্ধ্ব-১৯ প্রতিযোগিতায় নামার আগে জুতো ছিল না সিরাজের কাছে। অটোচালক বাবা সারা রাত ধরে অটো চালিয়ে প্রথম জুতো কিনে দেন সিরাজকে। টেস্টে প্রথমবার পাঁচ উইকেট নিয়ে হয়তো বাবার সেই পরিশ্রমকে যথার্থ সম্মান জানালেন সিরাজ। সাইবাবা বলছিলেন, ‘‘সিরাজের মতো লড়াকু ক্রিকেটার বিরল। ও যে কোন পরিবেশে বড় হয়েছে সেটা এখানে না এসে দেখলে বিশ্বাস করবেন না। ওই সামাজিক পরিকাঠামো থেকে ক্রিকেট খেলা যায় না। সিরাজ বলেই পেরেছে। তাই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড (পড়ুন বাবা) মারা যাওয়ার পরেও দেশের স্বার্থে অস্ট্রেলিয়া থেকে গেল। আজ আমাদের সেলিব্রেশনের দিন।’’
হার-জিত খেলার অঙ্গ। চলতেই থাকবে। লড়াইটাই আসল। এটা অন্য ভারত। মিনি হাসপাতাল হয়ে যাওয়ার পরেও অজিদের চোখে চোখ রেখে রেনেসাঁ ঘটানো টিম ইন্ডিয়া। মহম্মদ সিরাজ ও তাঁর বন্ধুদের সৌজন্যে সেটা ঘটছে।
স্বর্গ থেকে সিরাজের এমন চোখ জুড়ানো পারফরম্যান্স দেখে নিশ্চয়ই আশীর্বাদ করছেন ওঁর ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy