Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sourav Ganguly

বরফ? এখন থেকে আর নয়

চোট লাগলে দ্রুত উপশমের জন্য বরফ দেওয়া ক্রীড়াবিদদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস।

ক্রীড়াবিদদের আইসপ্যাক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত? সৌরভ বা ভাইচুং কী মনে করেন?

ক্রীড়াবিদদের আইসপ্যাক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত? সৌরভ বা ভাইচুং কী মনে করেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২১ ১১:২৮
Share: Save:

ব্যাট করছেন সৌরভ। গোলাগুলি নিয়ে তৈরি ‘রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস’। মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগের ওভারে মনঃসংযোগ সামান্য বিচলন হয়ে থাকবে। গুড লেংথ ডেলিভারি সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে ফস্কালেন বাঁ-হাতি। অনেকটা কাট করে ভিতরে ঢুকে থাই প্যাড এড়িয়ে জেটগতির ডেলিভারি আছড়ে পড়ল সৌরভের কোমরের সামান্য নীচে। যন্ত্রণায় বেঁকে গেল ভারত অধিনায়কের মুখ। হেলমেট খুলে একটু ধাতস্থ হয়ে আবার গার্ড নিলেন। ওভারটা কোনওমতে কাটিয়েই ড্রেসিংরুমে। দ্রুত আইসপ্যাক দেওয়া হল চোটের জায়গায়। বিরতির পর সৌরভ আবার অনেকটাই সাবলীল।

চোট লাগলে দ্রুত উপশমের জন্য বরফ দেওয়া ক্রীড়াবিদদের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। সে তিনি পেশাদার ক্রীড়াবিদ হোন বা অপেশাদার। বরফের সেঁক দ্রুত চোট কমানোর জন্য পরীক্ষিত টোটকাও বটে। কিন্তু সেই দিন আর নয়।

কেন?

কারণ বরফের সেঁক (আইসপ্যাক) দিলে চোট সারা তো দূরস্থান। উল্টে তা বিপজ্জনক হতে পারে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। মার্চ মাসে ‘জার্নাল অব অ্যাপ্লায়েড ফিজিয়োলজি’-তে জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চোট পাওয়া পেশিতে বরফ লাগালে তার আণবিক গঠন এমন ভাবে বদলে যায় যে, আখেরে তা ক্ষতি করে। একই সঙ্গে বলে রাখা যাক যে, ওই গবেষণা মানুষ নয়, ইঁদুরের ওপর করা হয়েছে। কিন্তু গবেষকদের বক্তব্য, মানুষের মতো ইঁদুরের পেশিও তন্তু (ফাইবার) দিয়ে তৈরি। তাই গবেষণার ফল মানুষের ক্ষেত্রেও একই হবে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা ভাইচুং ভুটিয়ার মতো শীর্ষ স্তরের ক্রীড়াবিদ থেকে শখের গল্ফার— সকলেই চোট লাগলে সেখানে বরফ দেওয়াকেই অমোঘ উপশম বলে মনে করতেন। কিন্তু জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা দেখাচ্ছে, সেই ধারনা সঠিক নয়। যার ফলে এতদিন ধরে লালিত চোট কমানোর জনপ্রিয় প্রক্রিয়া প্রশ্নের মুখে। প্রশ্ন উঠেছে চোট কমানোর সময় নিয়ে। গবেষণার নির্যাস বলছে— চোটের জায়গায় আইসপ্যাক দিলে উল্টে চোট উপশম হতে দেরি হয়। কারণ, বরফের সেঁক দিলে চোটের জায়গায় নতুন কোষ তৈরি হতে অনেক বেশি সময় লাগে।

গবেষণার নির্যাস বলছে— চোটের জায়গায় আইসপ্যাক দিলে উল্টে চোট উপশম হতে দেরি হয়।

গবেষণার নির্যাস বলছে— চোটের জায়গায় আইসপ্যাক দিলে উল্টে চোট উপশম হতে দেরি হয়। ছবি: আইস্টক

জাপানের কোবে বিশ্ববিদ্যালয় ৪০টি স্বাস্থ্যবান ইঁদুরের ওপর ওই গবেষণা করেছে। জিমে ঘাম ঝরানোর পরে মানুষের শরীরের পেশিগুলির যে অবস্থা হয়, বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা ব্যবহার করে কৃত্রিম ভাবে ইঁদুরের পায়ের পেশিগুলিকে সেই অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর পর সেই পেশিগুলিকে আগের অবস্থায় ফেরানোর ক্ষেত্রে বরফের সেঁক কতটা কার্যকরী, তা নিয়েই গবেষণা শুরু হয়। অর্ধেক ইঁদুরের পায়ে ছোট আইসপ্যাক বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বাকিদের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। কয়েক ঘণ্টা অন্তর ওই দুই ধরনের ইঁদুরের পেশির নমুনা সংগ্রহ করে তা নিয়ে দু’সপ্তাহ ধরে গবেষণা চলেছিল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে পেশিগুলিতে বরফ দেওয়া হয়নি, সেখানে দ্রুত নতুন কোষ তৈরি হচ্ছে। তিন দিনের মাথায় অধিকাংশ পুরনো ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মরে গিয়ে সেখানে নতুন কোষ তৈরি হয়েছিল। দু’সপ্তাহ পরে গবেষণা শেষে দেখা গিয়েছে, একটিও পুরোন কোষ সেখানে নেই। কিন্তু যে ইঁদুরগুলির পায়ে আইসপ্যাক বাঁধা হয়েছিল, তাদের ক্ষেত্রে গোটা প্রক্রিয়াটি হতে অনেক সময় লেগেছিল। আইসপ্যাক না বাঁধায় নতুন কোষ তৈরি হতে যেখানে তিন দিন লেগেছিল, সেখানে আইসপ্যাক বেঁধে নতুন কোষ তৈরি হতে সময় লেগেছিল সাত দিন। আইসপ্যাক না বাঁধা ইঁদুরগুলি যেখানে দু’সপ্তাহে সম্পূর্ণ আগের অবস্থায় ফিরে গিয়েছিল, সেখানে বরফের সেঁকে থাকা ইঁদুরগুলি তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি।

জাপানি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে— তাহলে কি ক্রীড়াবিদদের আইসপ্যাক ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া উচিত? সৌরভ বা ভাইচুং কী মনে করেন?

দু’জনেই ব্যস্ত থাকায় ফোন তোলেননি। টেক্সট মেসেজেরও জবাব আসেনি। কিন্তু খেলাধুলোর সঙ্গে নিয়মিত এবং প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িতরা এখনও আইসপ্যাকের পক্ষেই সওয়াল করছেন। ক্রীড়াবিজ্ঞানী এবং সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত নিশীথরঞ্জন চৌধুরীর কথায়, ‘‘ওই গবেষণা ইঁদুরের ওপর হয়েছে। দেখতে হবে মানুষের ক্ষেত্রে এটা কতটা খাটবে। বিজ্ঞান রোজ এগোচ্ছে। ফলে নতুন গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসতেই পারে যে, আইসপ্যাক ব্যবহার ঠিক নয়। কিন্তু এখনই এটা চূড়ান্ত ভাবে বলে দেওয়া সম্ভব নয়। কোন আবহাওয়ায়, কতক্ষণ ধরে, কোন ধরনের চোটে আইসপ্যাক দেওয়া হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। ওই গবেষণার উপর ক্রস স্টাডি হবে। তার পর যদি দেখা যায়, আইসপ্যাক শরীরের ক্ষতি করছে, তখন সেটা নিশ্চয়ই সকলে মেনে নেবে। কিন্তু এখন পুরোটাই প্রাথমিক স্তরে আছে।’’ এটিকে মোহনবাগানের ফুটবলার প্রীতম কোটালও বলছেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত তো আমরা আইসপ্যাক লাগিয়েই ভাল ফল পেয়েছি। তবে আগে অনেক বেশি সময় ধরে বরফ লাগানো হত। এখন কম সময়ের জন্য আইসপ্যাক লাগানো হয়। কিন্তু এখনও চিকিৎসকরা তো বরফ লাগানোর কথাই বলেন।’’ আইএসএল-এর দল হায়দরাবাদ এফসি-র ফিজিয়ো অভিনন্দন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এটা নিয়ে গবেষণা হচ্ছে জানি। তবে আমরাও কিন্তু বিজ্ঞান মেনেই বরফ দিই। সব সময়ে বই পড়ে চিকিৎসা করা যায় না। দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের কোন ওষুধে কতটা কাজ হচ্ছে। সেটা বোঝাই আসল। এখনও যদি কোনও খেলোয়াড়ের কাফ মাস্‌লে চোট লাগে, চোখ-কান বুজে তাকে বরফই দেব!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sourav Ganguly bhaichung bhutia Ice Packed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy