মমত্ব: এজবাস্টনে বাংলাদেশকে হারানোর পরে অধিনায়ক কোহালিকে স্নেহের পরশ চারুলতা পটেলের। টুইটার
চারুলতা পটেল। কয়েক দিন আগেও এই নামটা করলে হয়তো লোকে গোল গোল চোখে তাকিয়ে জানতে চাইত, কে ইনি? এখন আর সে রকম প্রশ্ন কেউ করবে না। বরং ভারতের সর্বত্র তো বটেই, এমনকি গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া নাম তিনি। এজবাস্টনে বিরাট কোহালির সঙ্গে তাঁর আবেগপূর্ণ ছবি এমনই ঝড় তুলেছে যে, তাঁকে বলা হচ্ছে বিশ্বকাপের সব চেয়ে জনপ্রিয় মুখ। বলা হচ্ছে, তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সুপারফ্যান। এজবাস্টনে কোহালির মাথায় তাঁর হাত রাখা এবং ভারত অধিনায়কের হাত জোড় করে পাল্টা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার সেই দৃশ্যকে বিশ্বকাপের সেরা ছবি আখ্যা দিয়েছেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটার মাইকেল ভন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে সুর মিলিয়ে সকলে মিলিত ভাবে বলছে, এটাই ‘ফটো অফ দ্য ওয়ার্ল্ড কাপ’। কিন্তু কে তিনি? কী ভাবে ক্রিকেট দেখতে এলেন? এর পরেই বা তাঁর লক্ষ্য কি? আর কি ভারতের ম্যাচে তাঁকে দেখা যাবে? নাতনির মোবাইল ফোন থেকে চারুলতা পটেল কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে। উত্তর দিলেন মানুষের মনে তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া নানা প্রশ্ন এবং কৌতূহলের।
কোথায় আদি বাড়ি: গুজরাতের সুনাভে আমার আসল বাড়ি। সেখান থেকেই এসেছি।
বয়স কত?
আমার বয়স ৮৭।
কী ভাবে ক্রিকেটে আগ্রহ?
আমার দুই ছেলে ক্রিকেট খেলত। তবে সেটা ছোট থাকার সময়। সেই সময় ওরা খেলাটা নিয়ে পাগল ছিল। ওদের দেখেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ আর ভালবাসা বেড়েছিল আমার।
মাঠে কি খেলা দেখতে যান?
অনেক বছর আগে গিয়েছিলাম খেলা দেখতে। এই ইংল্যান্ডের মাঠেই। কাকতালীয় ভাবে সে বারই প্রথম কপিল দেবের ভারত বিশ্বকাপ জিতেছিল। আমি কপিলের দলের খেলা দেখতে গিয়েছিলাম। জীবনে দ্বিতীয় বার মাঠে গিয়েছিলাম গত বছর। ওভালে যখন ভারত আর ইংল্যান্ড (টেস্ট) খেলল। আমার নাতনি (অঞ্জলি) নিয়ে গিয়েছিল।
বিরাট কোহালির সঙ্গে কী কথা হল?
আমি বিরাটকে আশীর্বাদ করি। ওকে বলি, ‘‘বেটা চালিয়ে যাও। তুমি কাপ জিতবে। তুমি সব দেশকে হারাবে।’’ বিরাট আমার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল আর বলল যে, পরের ম্যাচগুলোতেও কিন্তু আপনাকে আসতে হবে।
এর পরে আর কোথায় আসছেন?
হ্যাঁ, আমি ভারতের সব ম্যাচেই যাচ্ছি। লিডসে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচ দেখতে যাচ্ছি। সেমিফাইনাল আর ফাইনাল দেখতে যাব।
টিকিটের ব্যবস্থা হল কী ভাবে?
এজবাস্টনে সে দিনই বিরাট আমাকে বলে, আমাদের আরও তিনটে ম্যাচ রয়েছে (শ্রীলঙ্কার সঙ্গে রাউন্ড রবিন পর্বের শেষ ম্যাচ, সেমিফাইনাল, ফাইনাল)। প্রত্যেকটাতেই আপনাকে আসতে হবে। তখন আমি ওকে বলি, এখানে তো চলে এসেছি ঠিক আছে। বাকি ম্যাচগুলোতে আমার টিকিট নেই। কে দেবে আমাকে টিকিট? তখনই ওর টিমকে বিরাট বলে দেয়, আমার জন্য টিকিট আয়োজন করতে।
কোহালি সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ কী?
অসাধারণ ক্রিকেটার। দারুণ স্কিল। সকলে তো এ রকম খেলোয়াড়কে দেখতেই মাঠে আসে। ও আমাকে আর পুরো ভারতকে গর্বিত করেছে। ছেলেটাকেও আমার খুব মিষ্টি লেগেছে। ভীষণই মাটিতে পা রেখে চলা ছেলে। আমার মনে হয়েছে, খুবই নম্র এবং ভাল একটা মানুষের সঙ্গে আমার সে দিন দেখা হয়েছিল।
সব চেয়ে পছন্দের ক্রিকেটার কে?
আমার অনেককেই ভাল লাগে। পুরো ভারতীয় দলটাকেই আমার দারুণ লাগে। সবাই খুব ভাল। তবে যদি এক জনকে বেছে নিতে হয়, তা হলে বিরাট কোহালিকেই বাছব।
ভারতীয় দলে কাদের পছন্দ?
চার জনের নাম বলব। বিরাট কোহালি, এম এস ধোনি, রোহিত শর্মা এবং যশপ্রীত বুমরা।
সব চেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ কী?
এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, এজবাস্টনে গত মঙ্গলবার ভারত বনাম বাংলাদেশের ম্যাচটাই আমার কাছে সব চেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত। কারণ, আমার বহু দিনের ইচ্ছা পূরণ হল। এই প্রজন্মের ভারতীয় দলটাকে সামনে থেকে দেখলাম। ভারতীয় ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা হল।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার প্রতিক্রিয়া কী?
আমি সত্যিই অভিভূত। যত সময় যাচ্ছে, তত যেন আরও অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। এখনও মাঝেমধ্যে নিজেকে চিমটি কেটে জিজ্ঞেস করছি, সব কি সত্যি দেখছি? নাকি স্বপ্নের মধ্যে এই দৃশ্যগুলো এসেছিল? এত লোকের মুখে আমার নাম শুনতে পাব, কখনও ভাবিইনি। এত লোক আমার আর বিরাটের ছবি নিয়ে মন্তব্য করবে, দূরতম কল্পনাতেও ছিল না। ঈশ্বর যে কতটা আমার উপরে সহায়, তা বলে বোঝাতে পারব না। আমি যা-ই বলি না কেন, কম হয়ে যাবে। মনে হচ্ছে, এই বয়সে এসে সেরা সময়টা প্রত্যক্ষ করছি আমি।
পুনশ্চ: ব্যানিজ্যিক সংস্থাগুলোও এখন দৌড়চ্ছে চারুলতার কাছে। রাতের দিকে শোনা গেল, একটি ঠান্ডা পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থা ৮৭ বছর বয়সি চারুলতার দর্শক হিসেবে ঐতিহাসিক চুক্তির রেকর্ড করতে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy