মহড়া: বার্মিংহামে ভারতের নেটে ধোনি। চর্চায় তাঁর ব্যাটিং অর্ডার। এএফপি
বিশ্বকাপের লড়াইটা ক্রমে জমে উঠছে। আসন্ন সপ্তাহেই ঠিক হয়ে যাবে সেমিফাইনালে কারা যাবে। আমার দেশ, মানে অস্ট্রেলিয়া, ইতিমধ্যেই শেষ চারে উঠে গিয়েছে। গত মঙ্গলবার ইংল্যান্ডকে লর্ডসে ৬৪ রানে হারিয়ে।
লর্ডসে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড ম্যাচের একটা আলাদা ঐতিহ্য আছে। সেখানে অ্যারন ফিঞ্চের সেঞ্চুরি নিশ্চিত ভাবে ইংরেজ গর্বে ধাক্কা দিয়েছে। ইংল্যান্ডের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা সব রাগে ফুটছে। সেটা অবশ্য প্রত্যাশিত। ওরা যে ওই হারে রেগে যাবে, সেটা খুবই স্বাভাবিক। অস্ট্রেলিয়ার এক জন প্রাক্তন ক্রিকেটার হিসেবে এ সব ব্যাপারস্যাপার দেখে বেশ মজাই লাগছে। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ইংল্যান্ডের হারের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আর জনি বেয়ারস্টোর পাল্টা জবাব দেখার পরে একটা ব্যাপার বেশ বুঝতে পারছি। ক্রিকেটে কিছু কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা চিরকালীন। সবাই যদি সীমার মধ্যে থাকে, তা হলে এ সব লড়াই ক্রিকেটকে আরও চিত্তাকর্ষক করে তোলে।
এ বারের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত দুটো দলকে আমার বাকিদের থেকে অনেক আলাদা লাগছে। ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া। এই কলাম লেখার সময় অস্ট্রেলিয়া বনাম নিউজ়িল্যান্ডের ম্যাচ শুরু হয়নি। ওই ম্যাচের ফল যাই হোক না কেন, আমার মত বদলাবে না।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অন্যতম ফেভারিট বলেছিল। কারণ ওদের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার বিশ্বের বিভিন্ন টি-টোয়েন্টি লিগে দুর্দান্ত খেলছিল। ক্যারিবিয়ানদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স দেখার পরে তারা নিশ্চয়ই নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। আমার কাছে টি-টোয়েন্টি সম্পূর্ণ অন্য ধরনের ক্রিকেট। ওই ফর্ম্যাটে খেলার দক্ষতা অন্য রকমের। প্রথম বল থেকেই মারা শুরু করতে পারে ব্যাটসম্যানরা। কিন্তু ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ও ভাবে খেললে চলবে না। এ যেন এক জন স্প্রিন্টারকে বলা একই গতিতে দু’কিলোমিটার দৌড়তে। একটা রোবট হয়তো সেই কাজটা করতে পারে, কিন্তু মানুষের পক্ষে সেটা করা অসম্ভব।
দশ ওভার বল করা আর চার ওভার বল করা একই জিনিস নয়। যে কারণে আমি বলি এক জন ভাল টেস্ট ক্রিকেটার যে কোনও ফর্ম্যাটে সফল হওয়ার দক্ষতা রাখে। কিন্তু উল্টোটা ঠিক নয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বর্তমান দলটা সেই তথ্যটাই ঠিক প্রমাণ করছে। ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলার মতো মানসিকতা ওদের নেই। কাউকে অসম্মান করছি না, কিন্তু এই দলটাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জার্সি পরতে দেখে খারাপই লাগছে। কারা সব এই জার্সি পরে খেলে গিয়েছে! স্যর গ্যারফিল্ড সোবার্স, ম্যালকম মার্শাল, ভিভিয়ান রিচার্ডস, আলভিন কালীচরণ, ব্রায়ান লারা, কার্টলে অ্যামব্রোজ, কোর্টনি ওয়ালশ...। তালিকা যেন শেষই হতে চায় না।
ইংল্যান্ডে এখন গরমকাল পড়ছে। তাই রিভার্স সুইং পাওয়া যাবেই। কিন্তু দু’দিক থেকে দুটো বল ব্যবহারের কারণে কতটা রিভার্স সুইং পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই। কিন্তু গরম আবহাওয়া আর চড়া রোদে বোলারদের কাজটা কিছুটা সহজ করে দেবে বলেই আমার মনে হয়। একই সঙ্গে নিয়মিত তিনশো রান ওঠা এখন কিন্তু দেখা যাবে না। কারণ যত প্রতিযোগিতা এগোচ্ছে, তত পুরনো পিচ ব্যবহার করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের আগে ব্যাট করতে পাঠানো উচিত। যার মানে হল, মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে উপরের দিকে ব্যাট করতে হবে। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের কোনও মানে হয় না। আমার এখনও মনে হয়, ভারত চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে অহেতুক ঝুঁকি নিচ্ছে। কেন যে ভারত এই চার নম্বর জায়গাটা নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে, বুঝতে পারছি না। এর কোনও যুক্তি নেই। বিজয় শঙ্করকে নিয়ে পরিকল্পনাটা কাজ দিচ্ছে না। শঙ্কর যে মানিয়ে নিতে পারছে না, সেটা বুঝতে উঁচু পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার প্রয়োজন নেই। ওকে যদি এক জন অলরাউন্ডার হিসেবে খেলাও, আমার কিছু বলার নেই। কিন্তু কোন যুক্তিতে শঙ্করকে চার নম্বরে নামানো হচ্ছে, তা আমার মাথায় ঢুকছে না। ওকে যদি খেলাতেই হয়, তা হলে ছয় বা সাত নম্বরে খেলাও আর ধোনিকে ব্যাটিং অর্ডারে উপরে তুলে আনো।
দেখা যাচ্ছে, উইকেটে থিতু হতে ধোনি বেশ সময় নিচ্ছে। স্পিনারদের বিরুদ্ধেও সাবলীল নয়। ওকে আগে নামালে অনেকটা সময় পাবে ইনিংসটা সাজানোর। শঙ্করকে অনেকটা হার্দিক পাণ্ড্যের ভূমিকাটা দেওয়া যেতে পারে। পরের দিকে নেমে বড় শট খেলে ইনিংস শেষ করার। তা ছাড়া আমি এখনও বুঝতে পারছি না, ভারত কেন ঋষভ পন্থ বা রবীন্দ্র জাডেজাকে খেলাচ্ছে না। পিচ যে ভাবে পুরনো আর শুকনো হচ্ছে, তাতে জাডেজা কিন্তু বোলিং অলরাউন্ডারের ভূমিকাটা ভাল ভাবে পালন করতে পারে। ভুললে চলবে না, জাডেজা কিন্তু দারুণ ফিল্ডারও। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জাডেজাকে এনে দলের মিডল অর্ডারে কিছু সমস্যা দূর করতে পারে ভারত।
যে সমস্যাগুলো কিন্তু মোটেই ছোটখাটো নয়। এক বার ভাবুন তো, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ধোনির স্টাম্পিংটা যদি না ফস্কাত ওদের উইকেটকিপার, তা হলে ভারতের রানটা কি অত হত? কেদার যাদব, শঙ্করকে দেখে আমার এমন কিছু আহামরি মনে হয়নি। তাই বেশি করে পন্থ আর জাডেজার কথা মনে হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারার পরে ইংল্যান্ড নিশ্চয়ই এখন ফুঁসছে। তা ছাড়া ওরা এটাও জানে, ভারতের বিরুদ্ধে হারা মানে বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন প্রায় শেষ। ইংল্যান্ডের পিছনে তাড়া করে আসছে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ। আবার উল্টো দিকে ভারতকে হারাতে পারলে অনেক সমালোচকের মুখ বন্ধ করে দেওয়া যাবে।
আর কোহালিদের উচিত হবে সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ নিয়ে বেশি না ভেবে জেতার ছন্দটা ধরে রাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy