Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

কোহালিদের দলে নতুন মন্ত্র, ম্যাচের আগে আর হাড়ভাঙা পরিশ্রম নয়

এমনিতেই বিশ্বকাপ মানে প্রায় দেড় মাসের টুর্নামেন্ট। আর এ বারের ফর্ম্যাটে সহজ কোনও ম্যাচ নেই।

ফুরফুরে: শুক্রবার ঋষভের সঙ্গে এই ছবি পোস্ট করে কোহালির টুইট, ‘‘চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে সাউদাম্পটন সফরে।’’

ফুরফুরে: শুক্রবার ঋষভের সঙ্গে এই ছবি পোস্ট করে কোহালির টুইট, ‘‘চ্যাম্পিয়নের সঙ্গে সাউদাম্পটন সফরে।’’

সুমিত ঘোষ
সাউদাম্পটন শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৯ ০৪:১৮
Share: Save:

যদি কেউ ভেবে থাকেন, ম্যাচের আগের দিন খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘হাডল’ করবেন...

যদি কেউ মনে করে থাকেন, নতুন ম্যাচের শপথ নেওয়ার সুন্দর ছবি উঠবে বিরাট কোহালিদের...

যদি কারও মনে পড়ে ‘প্র্যাক্টিস মেকস আ ম্যান পারফেক্ট’, তাই যত এগিয়ে আসবে ম্যাচ, তত জোরদার হবে কোহালি, রোহিতদের অনুশীলনের মাত্রা...

তা হলে সাউদাম্পটন থেকে জানিয়ে দিতেই হচ্ছে, তাঁরা ভুল ভাবছেন। যুগ এগিয়ে গিয়েছে। কোহালির ভারত মানে নতুন ভারত, যারা অন্য রকম ভাবে তাদের অনুশীলন নকশা তৈরি করছে। আর সেই পাল্টে যাওয়া প্রক্রিয়ায় ম্যাচের আগের দিন নিজেদের নিংড়ে দেওয়া, হাড় ভাঙা খাটুনিতে ডুবিয়ে দেওয়ার প্রাচীন মতবাদ দ্রুতই অবলুপ্ত হতে শুরু করেছে।

শুক্রবারেই যেমন রশিদ খানদের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করল না ভারতীয় দল। কোহালি, রোহিত, হার্দিক পাণ্ড্যরা কেউ মাঠমুখোই হলেন না। দু’জন ক্রিকেটার শুধু এলেন। ভুবনেশ্বর কুমার এবং বিজয় শঙ্কর। তা-ও তাঁরা এসেছিলেন ফিটনেস পরীক্ষা দিতে। ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্টের সঙ্গে কিছুক্ষণ দৌড়লেন তাঁরা। সব মিলিয়ে আধ ঘণ্টাও চলল না ফিজিয়োর ক্লাস। প্রাক-ম্যাচ কসরত বলতে এটুকুই।

কোহালিদের দলে এখন ফিটনেস এবং ট্রেনিং বিপ্লব চলছে। সব পাওয়ারলিফটারদের মতো ওজন তুলছেন। শক্তিশালী হয়েছেন বলেই যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ শামিরা এক্সপ্রেস গতিতে টানা বল করে যেতে পারছেন। ব্যাটসম্যানেরা অবিশ্বাস্য সব শট খেলে দিচ্ছেন। বিশ্বকাপে হার্দিক পাণ্ড্যকে এক হাতে ছক্কা মেরে দিতে দেখা গিয়েছে।

ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিস তুলে দেওয়া ট্রেনিং-বিপ্লবের অঙ্গ। ভাবনাটা হচ্ছে, ম্যাচের জন্য যত পারো নিজেকে তরতাজা আর ফুরফুরে রাখো। ফুটবলে অনেক আগেই এমন ভাবনা এসে গিয়েছে। ম্যাচের আগের দিন টিমগুলো মাঠে এলেও খুব জোরদার অনুশীলন করতে দেখা যায় না। কোহালিদের হাত ধরে ক্রিকেটেও সম্ভবত সেই প্রথার প্রচলন শুরু হয়ে গেল।

এমনিতেই বিশ্বকাপ মানে প্রায় দেড় মাসের টুর্নামেন্ট। আর এ বারের ফর্ম্যাটে সহজ কোনও ম্যাচ নেই। দশ টেস্ট খেলিয়ে দেশকে নিয়ে হচ্ছে বিশ্বকাপ। প্রত্যেকের সঙ্গে প্রত্যেককে খেলতে হবে। এলেবেলে কোনও প্রতিপক্ষ নেই। ফর্ম্যাটের চাপ সকলকে সামলাতে হচ্ছে। তার উপর এক শহর থেকে আর এক শহরে যাতায়াতের ধকল রয়েছে। গ্রুপ পর্বেই ৯টি ম্যাচ। ইংল্যান্ডে উড়ানে করে চট করে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় চলে যাওয়ার রীতি খুব একটা নেই। কোহালিরা বাসে করে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাচ্ছেন।

রাস্তার দু’ধারের দারুণ নৈসর্গিক শোভা দেখতে দেখতে সেই বাসযাত্রা ক্রিকেটারেরা খুব উপভোগ করেন। বিশেষ করে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ইংল্যান্ডে খেলতে আসা মানেই তাঁর কাছে সব চেয়ে আনন্দের ব্যাপার হচ্ছে, সাতসকালে উঠে ফ্লাইট ধরার জন্য ছুটতে হবে না। অন্যান্য দেশে খেলতে গেলে যে যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়। ইংল্যান্ডে নিজেদের সুবিধা মতো সময়ে বাসের আয়োজন করে নিলেই হল। অথবা ট্রেনের টিকিট বুক করে নাও আর পরিবার নিয়ে চারপাশের সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করতে করতে চলো। অন্যান্য কয়েক বার ধোনি, কোহালিরা ইংল্যান্ডে এসে ট্রেনে করে এক শহর থেকে অন্য শহর গিয়েছেন। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে তাঁদের জন্য বাসের ব্যবস্থা হয়েছে। তার জন্য অনেক ক্ষেত্রে বেশি সময় লাগছে। যেমন ম্যাঞ্চেস্টারে পাকিস্তানকে হারানোর পরে সাউদাম্পটনে বাসে করে আসতে লেগেছে সাত ঘণ্টার উপরে। ট্রেনে এলে সেটাই লাগে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা। এখানে আফগানিস্তানকে খেলে আবার ম্যাঞ্চেস্টারেই ফিরে যাচ্ছে ভারতীয় দল। তার মানে ম্যাচ খেলার পরের দিনেই আবার সাড়ে সাত ঘণ্টার বাসযাত্রার ধকল।

যদিও বাসে করে যাওয়া নিয়ে ভারতীয় দলের মধ্যে একেবারেই কোনও ক্ষোভ নেই। কয়েক জনে বলে দিলেন, ‘‘আমাদের খুব ভাল বাস দিয়েছে। খুবই স্বস্তিদায়ক যাত্রা। মোটেও কেউ অভিযোগ করছি না। বেশ ভালই লাগছে।’’ বাসযাত্রা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি না হওয়ার আর একটা বড় কারণ, দীর্ঘ সড়ক যাত্রা ক্রিকেটারদের মধ্যে বন্ধন বাড়ানোর সেতু হিসেবেও তা কাজ করছে। যাত্রাপথে অনেকে তাঁদের অতিরিক্ত প্রতিভা তুলে ধরছেন। কেউ গান করছেন, কেউ জোক্‌স শোনাচ্ছেন, কেউ বা ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে মেতে থাকছেন। মানসিক দিক থেকে ফুরফুরে রাখার রসদ জোগাচ্ছে দীর্ঘ বাসযাত্রা। বিশ্বকাপ অভিযানে সেটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

দলের কোচেদের জন্য আবার টিমবাসের ভিতরটা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ল্যাবরেটরির মতো। ছাত্রদের পাশে বসিয়ে তাঁরা নানা রকম ভুল-ভ্রান্তি ধরিয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের ভূমিকা কী হতে পারে, বুঝিয়ে দিচ্ছেন। মানসিক ভাবে তাঁদের চাঙ্গা রাখছেন। যেমন কুলদীপ যাদব। দুঃস্বপ্নের আইপিএলের টাটকা স্মৃতি মাথায় নিয়ে বিশ্বকাপে খেলতে এসেছিলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিস্ময় স্পিনার। অনেকেই তাঁকে নিয়ে তীব্র আশঙ্কায় ভুগছিলেন যে, আইপিএলে তুলোধনা হওয়ায় না ইংল্যান্ডে চরম ব্যর্থ হন। সেই কুলদীপই পুরনো জাদু ফিরে পেয়েছেন। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর বোলিং দেখে উচ্ছ্বসিত ক্রিকেট বিশ্ব। আদর্শ শেন ওয়ার্নের মতো ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ‘শতাব্দীর সেরা বল’ করে চমকে দিয়েছেন। এই বাস যাত্রাগুলিতেই কুলদীপকে পাশে বসিয়ে মানসিক শক্তি দিয়ে গিয়েছেন দলের বোলিং কোচ বি অরুণ। যিনি পনেরো বছর বয়স থেকে বাঁ-হাতি চায়নাম্যানকে দেখছেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় অ্যাকাডেমিতে।

তবে বাসযাত্রা যতই ক্রিকেটীয় নকশার উর্বর মাধ্যম হয়ে দাঁড়াক, ক্রিকেটারদের ক্লান্তির দিকটা অস্বীকার করার উপায় নেই। সেই কারণেই প্র্যাক্টিস-নীতিতে রদবদল আনা হল। চলতি বিশ্বকাপে সব সময় না হলেও মাঝেমধ্যে ম্যাচের আগের দিন প্র্যাক্টিস বন্ধের নীতি দেখা যেতে পারে। কোহালিদের মন্ত্র এখন, ম্যাচের দু’তিন দিন আগে হাড়ভাঙা পরিশ্রম সেরে নাও। ম্যাচের আগের দিন ক্লান্তির মাত্রা যত পারো কমিয়ে ফেলো। যাতে ম্যাচে নামা যায় পুরো এনার্জি নিয়ে।

ভাল ফল করতে গেলে সারা বছর পড়ো, পরীক্ষার আগে রাত জাগলে হবে না— এটাই এখন বিরাট বাহিনীর মন্ত্র!

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy