চর্চায়: কোহালি, রোহিতের পরে ব্যাটিং কোচ বাঙ্গারও পাশে ধোনির। ফাইল চিত্র
বহির্বিশ্বে যতই তিনি মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য সমালোচিত হোন না কেন, দলের মধ্যে এখনও সমর্থন হারাননি মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। অধিনায়ক বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মার পরে ব্যাটিং কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারও রবিবার ম্যাচের পরে বলে যান, ধোনির ইনিংসে সমালোচনা করার মতো কিছু তিনি দেখতে পাচ্ছেন না। প্রশ্ন উঠেছে, শেষের দিকে মারার চেষ্টা না করে আগে থেকেই কী করে আত্মসমর্পণ করে নিলেন ধোনি এবং কেদার যাদব? হেরে যেতে পারি কিন্তু জেতার তাগিদ দেখালেন না কেন তাঁরা? ম্যাচের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এলে ভারতীয় দলের ব্যাটিং কোচকে এই প্রশ্ন করা হয়। বাঙ্গারের জবাব, ‘‘আমি খুব অবাক হয়ে যাচ্ছি দেখে যে, বার বার সেই ধোনির প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে। আমাদের কাছে এটা ভেবে দেখার মতো কোনও ব্যাপারই নয়।’’
দাঁড়ান, হাসি চেপে রেখে ব্যাটিং কোচের পরের বক্তব্যটা শুনুন। ‘‘আমার মনে হয়েছে, ধোনি সত্যিই খুব ভাল ব্যাটে-বলে করছিল। তাগিদের কোনও অভাব ছিল না। ব্যাপারটা হচ্ছে, ইংল্যান্ডের বোলাররা খুব ভাল বল করেছে।’’ যদি ভেবে থাকেন, বাঙ্গার-শো এখানেই শেষ হয়ে গেল, ভুল। পরের মন্তব্য, ‘‘আমি এম এসের ব্যাটিংয়ে ভুল কিছু দেখিনি। ও খুবই ভাল খেলছিল। কয়েকটা বড় শটও খেলল। শুধু শেষের চার-পাঁচ ওভারে গিয়ে রান ও বলের ব্যবধানটা খুব বেড়ে যেতে থাকল।’’ এমনই আকর্ষণীয় তাঁর বক্তব্য যে, প্রত্যেকটা বাক্যের শেষে স্মাইলি ব্যবহার করা উচিত।
চলতি বিশ্বকাপে ভারতীয় দল যতই ধোনির ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনাকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুক, পরিসংখ্যান কিন্তু ধোনির বিপক্ষেই যাবে। চলতি বিশ্বকাপে ধোনির স্কোর যথাক্রমে এ রকম: ৪৬ বলে ৩৪, ১৪ বলে ২৭, ২ বলে ১, ৫২ বলে ২৮, ৬১ বলে ৫৬ নট আউট এবং ৩১ বলে ৪২। কোনও কোনও ইনিংসে রানের চেয়ে বলের সংখ্যা অনেক বেশি। তাঁর পক্ষে কেউ সওয়াল করতেই পারেন যে, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩১ বলে ৪২ খারাপটা কী? ঘটনা হচ্ছে, পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রভাব ফেলার মতো কোনও ইনিংসই ছিল না সেটা। এই ইনিংস মাঝের দিকে খেললে ঠিক ছিল। কিন্তু শেষের দিকে যখন আস্কিং রেট দশে পৌঁছে যাচ্ছে, তখন ওয়ান ডে নয়, টি-টোয়েন্টি খেলতে হবে। বেন স্টোকস ঠিক সেই খেলাটাই ইংল্যান্ডের হয়ে খেলে গিয়েছেন। না হলে জনি বেয়ারস্টো এবং জেসন রায়ের দুর্ধর্য ওপেনিং পার্টনারশিপের পরেও মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরারা ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিলেন ভারতকে। স্টোকস ৫৪ বলে ৭৯ করে (স্ট্রাইক রেট ১৪৬.২৯) ইংল্যান্ডের স্কোরকে ভারতের সাধ্যের বাইরে নিয়ে যান। ইংল্যান্ড তাদের ইনিংসে মোট তেরোটি ছক্কা মারে। ভারত মাত্র একটি। সেই একমাত্র ছক্কা যদিও এসেছিল ধোনির ব্যাট থেকে।
আর একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, একা ধোনি নন। মিলিত ভাবেই ভারতের ব্যাটসম্যানেরা মন্থর খেলছেন। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে সেই যুক্তি কিন্তু একেবারে ফেলেও দেওয়া যাবে না। চলতি বিশ্বকাপে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মাত্র তিন জনের স্ট্রাইক রেট একশোর উপরে। তার মধ্যে দুই ম্যাচ খেলার পরে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া ধওয়ন এক জন। তাঁর স্ট্রাইক রেট (একশো বলে কত রান করছেন, সেই শতকরা হারকেই বলা হয় স্ট্রাইক রেট) ছিল ১০৩.৩০। একশোর উপরে স্ট্রাইক রেট থাকা অন্য দু’জন হার্দিক পাণ্ড্য (১৪০.৬০) এবং ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম সুযোগ পাওয়া ঋষভ পন্থ (১১০.৩৪)। রোহিত ছয় ম্যাচে ৪৪০ রান করে ফেললেও স্ট্রাইক রেট ৯৩.৮১। কোহালি ছয় ম্যাচে ৩৮২ রান করেছেন ৯৬.২২ স্ট্রাইক রেটে। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির স্ট্রাইক রেট ৯১.২৬। দেখা যাচ্ছে, প্রধান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বল-প্রতি-রান তোলার হিসাবে অধিনায়কই এগিয়ে। রাহুল তেমনই অনেক পিছিয়ে। তাঁর স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬৯.০৭। সমস্যা হচ্ছে, মন্থর শুরু করে পরে যে বড় ইনিংস খেলে পুষিয়ে দেবেন, সেটাও তিনি পারছেন না। ধোনির সঙ্গে রোহিত বা কোহালির স্ট্রাইক রেটের তুলনা করলে চলবে না কারণ তিনি পাঁচ বা ছয় নম্বরে নামেন। সেই সময়ে যে রানের গতি বাড়ানোর খেলা খেলতে হবে, তা বোঝার জন্য ফেলু মিত্তিরকে ডাকার প্রয়োজন পড়ে না। ধোনির স্ট্রাইক রেট তুলনা করতে হবে জস বাটলার বা স্টোকসের সঙ্গে। পাঁচ বা ছয় নম্বরে নামা ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট আন্দাজে অনেক পিছিয়ে থাকছেন ধোনি।
সব চেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের প্রচুর ‘ডট বল’ (যে বলে কোনও রান হয় না) খেলা। ভাগ্যের এমনই পরিহাস যে, এই ধোনিই প্রথম যখন অধিনায়ক হলেন, তাঁর হাতেই ঘটেছিল ‘ডট বল’ বিনাশের বিপ্লব। ওয়ান ডে ক্রিকেটে ধোনির সব চেয়ে বড় অবদান এখানেই। তিনি খুচরো রানের উপর জোর দিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার রণনীতির উপর জোর দিয়েছিলেন। সতীর্থদের তিনি বুঝিয়েছিলেন, ওয়ান ডে পঞ্চাশ ওভারের খেলা। মানে তিনশো বল। প্রত্যেক বলে একটা খুচরো রান নিলেও তিনশো স্কোর করা যায়। সেই ধোনিই এখন বল নষ্ট করায় উপরের দিকে রয়েছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এই বিশ্বকাপে এখনও ৪৬.১২ শতাংশ বলে কোনও রান করতে পারেননি তিনি।
বাঙ্গারের মুখে বার বার শোনা গেল ‘পার্টনারশিপ’ কথাটা। ধোনি যে তাঁর কাজ করে দিচ্ছেন, তার নমুনা হচ্ছে জুটি গড়তে সাহায্য করা, এমন একটা যুক্তি তিনি দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন। এজবাস্টনে ধোনি এবং কেদারের ব্যাটিংয়ের মতোই আজগুবি শোনাল। প্রশ্ন উঠছে, কেদার যাদবের যোগ্যতা নিয়েও। এর চেয়ে রবীন্দ্র জাডেজা কী খারাপ হতেন? সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার তিনি। ব্যাটের হাত ভাল, বাঁ হাতি স্পিনে দশ ওভার টেনে দিতে পারেন, দুর্ধর্ষ ফিল্ডার। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আজ কি এই বদল করা হবে? ক্রিকেট মহল দেখার অপেক্ষায়!
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy