দুরন্ত: শুধু ফিল্ডিংয়েই সাড়া ফেলেছেন রবীন্দ্র জাডেজা। ফাইল চিত্র
প্রায় কুড়ি-তিরিশ গজ ছুটে এসে শরীর ছুড়ে দিয়ে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় ক্যাচ ধরছেন ভারতীয় জার্সি পরা এক ক্রিকেটার। বা কঠিন জায়গা থেকে এক থ্রোয়ে উইকেট ভেঙে দিয়ে ম্যাচের রং বদলে দিচ্ছেন। মোটামুটি নিরানব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে সেই ক্রিকেটারের নাম হবে রবীন্দ্র জাডেজা। ঠিক যেমন হল রবিবারের ইংল্যান্ড ম্যাচে। কে এল রাহুলের জায়গায় ফিল্ডিং করতে নেমে অবিশ্বাস্য ক্যাচে জাডেজা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জেসন রয়কে।
যে ক্যাচ দেখে যত না খুশি হয়েছেন রবীন্দ্র জাডেজার দিদি নয়না, দুঃখও পেয়েছেন। দুঃখ কেন? সোমবার রাজকোট থেকে ফোনে জাডেজা পরিবারের বড় মেয়ে বলছিলেন, ‘‘দুঃখ বা হতাশা, যা-ই বলুন, তা একটাই কারণে। জাডেজা ওই ক্যাচটা নিয়েছে পরিবর্ত ফিল্ডার হিসেবে। আমরা টিভি-তে ম্যাচটা দেখছিলাম। ও রকম ক্যাচ নেওয়া সত্যিই অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কিন্তু ও প্রথম একাদশে সুযোগ পাচ্ছে না দেখে খুব হতাশ হয়ে পড়ছি।’’
এর পরেই অবশ্য যোগ করলেন, ‘‘দেখুন, ভারত জিতছে বলে অবশ্যই আমি খুব আনন্দিত। কিন্তু ভাইকে প্রথম এগারোয় দেখতে চাই।’’ কেন জাডেজা দলে সুযোগ পাচ্ছেন না, তার কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই দিদির কাছে। নয়না বলছিলেন, ‘‘পিচের জন্য না অন্য কোনও কারণে ও দলের বাইরে কি না, আমি জানি না। ও অনেক বছর ধরে ভারতীয় দলের হয়ে খেলছে। এক জন সিনিয়র অলরাউন্ডার। তাই আশা করছি, বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতায় ও সুযোগ পাবে। তবে এটাও বলব, আমি কিন্তু বিশ্বকাপটা খুব উপভোগ করছি।’’
মুগ্ধ: জাডেজার দায়বদ্ধতা দেখে আপ্লুত রঞ্জি কোচ কোটাক। ছবি: ফেসবুকের সৌজন্যে।
জাডেজার সঙ্গে শেষ বার ফোনে কথা হয়েছে দিন কয়েক আগে। কী বলেছিলেন ভাইকে তখন? দিদির জবাব, ‘‘বলেছিলাম, বিশ্বকাপটা খুব উপভোগ কর। হাসি-খুশি থাক। তোকে আমরা সবাই মাঠে দেখতে চাই। দেখবি, তোরও সুযোগ আসবে।’’
যে সামান্য সুযোগটা পেয়েছেন জাডেজা, তাতেই অবশ্য চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফিল্ডিংয়ে এই রকম ক্ষিপ্রতার রহস্য কী? জাডেজাকে সেই ১৫-১৬ বছর থেকে দেখছেন সৌরাষ্ট্রের প্রাক্তন ক্রিকেটার সিতাংশু কোটাক। যিনি বেশ কয়েক বছর ধরে সৌরাষ্ট্র রঞ্জি দলের কোচ। বছর দু’য়েক আগে আইপিএলে গুজরাত লায়ন্সের সহকারী কোচ থাকার সময়ও জাডেজাকে দেখেছেন। ফোনে সিতাংশু এ দিন বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ওর ফিটনেসটা খুব ভাল ছিল। সে রকমই ক্ষিপ্র ছিল। ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পরে সেই ক্ষিপ্রতা আর ফিটনেস দারুণ জায়গায় গিয়েছে।’’
রঞ্জি থেকে আইপিএল— বিভিন্ন জায়গায় সিতাংশু দেখেছেন জাডেজাকে। দেখে মনে হয়েছে, বিশেষ বিশেষ ট্রেনিং করে তাঁর এক সময়কার সতীর্থ আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। জাডেজার বিশেষ কিছু ট্রেনিংয়ের নমুনা এ রকম:
এক) স্পিড বার্স্ট: সাধারণত ১২০ থেকে ১৫০ মিটার দূরত্ব দৌড়ন জাডেজা। কিন্তু ভাগে ভাগে। প্রচণ্ড গতিতে প্রথমে আট-দশ পা দৌড়ন। যতটা কম সময়ে সম্ভব। তার পরে একটু থেমে ‘রিকভারি’। তার পরে আবার গতি বাড়িয়ে সাত-আট সেকেন্ডের দৌড়। এই ট্রেনিংয়ে স্বল্প দূরত্বে প্রচণ্ড গতিতে দৌড়নো যায়, আবার ক্লান্তিও আসে না। আউটফিল্ডে জাডেজার ক্ষিপ্রতার অন্যতম কারণ এই ট্রেনিং।
দুই) বক্স জাম্প: ইঞ্চি দুয়েক সামনে একটা বাক্স রাখা থাকে। শরীরটাকে একটু ঝুঁকিয়ে লাফিয়ে বাক্সটায় ওঠেন জাডেজা। আবার সঙ্গে সঙ্গে নেমে পড়েন। ফের লাফিয়ে ওঠেন। এতে যেমন পায়ের শক্তি বাড়ে, তেমনই দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় অনেকটা উঁচুতে লাফানোও যায়।
তিন) সাইড টাচ: জাডেজা বাঁ-পা বাক্সের ওপর রাখেন। ডান-পা থাকে মাটিতে। এর পরে দ্রুত ডান-পা তুলে বাঁ-পা নামান, আবার বাঁ-পা তুলে ডান-পা। এই ভাবে দ্রুত চলতে থাকে পা বদলানোর পালা। এই ট্রেনিংয়ে বাড়ে ক্ষিপ্রতা এবং নমনীয়তা।
সিতাংশু বলছিলেন, ‘‘ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে ওর পায়ের শক্তি এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। যে কারণে জাডেজা এত ক্ষিপ্র। না হলে জেসন রয়ের ওই ক্যাচ ধরা সম্ভব হত না।’’ আপনি অনেক ছোট বয়স থেকে জাডেজাকে দেখেছেন। তখনকার আর এখনকার জাডেজার তফাত কী? সিতাংশুর জবাব, ‘‘আমি ওকে প্রথম দেখি জামনগরে একটা ম্যাচে। আমাদের বিপক্ষে খেলছিল। ১৪-১৫ বছর বয়স হবে। উচ্চতা বেশি ছিল না। কিন্তু ক্ষিপ্র ছিল খুব। তার পরে ওকে যত দেখি, বুঝতে পারি ওর মধ্যে ভাল ফিল্ডিং করার একটা স্বাভাবিক দক্ষতা আছে। যেটা বিশেষ ট্রেনিং আর পরিশ্রমে আরও ধারালো হয়েছে।’’
জাডেজার সব চেয়ে বড় গুণ কী? কোচ এবং দিদি এখানে সহমত। দু’জনেই বলছেন, ‘‘জাডেজার মানসিকতা। ওর ফিল্ডিংয়ের প্রতি ভালবাসা। ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামলে যেমন সব কিছু উজাড় করে দেয়, তেমন রঞ্জি ম্যাচেও তাই করে। যেটুকু সুযোগ পায়, কাজে লাগাতে মরিয়া থাকে।’’
জেসন রয় সেটা নিশ্চয়ই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy