হারের পর অকপটে উত্তর হেড স্যার শাস্ত্রীর। ছবি: রয়টার্স।
বুধবার সেমিফাইনালে ভারতের হারের পর থেকেই ক্ষুব্ধ ভারতীয় ক্রিকেট প্রেমীরা। ইতিমধ্যে অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন রবি শাস্ত্রীর ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ থাকা নিয়েই। এমন সময় হারের কারণগুলি নিয়ে অকপটে উত্তর দিলেন হেড স্যার শাস্ত্রী।
হারের পর সমস্ত ক্রিকেটারদের সঙ্গে নিয়ে তিনি ড্রেসিং রুমে বলেছিলেন, “এখান দিয়ে তোমরা মাথা উঁচু করে বেরোবে। গর্ব কর। এই ৩০ মিনিট এটা মুছে দিতে পারবে না যে গত কয়েক বছর পৃথিবীতে আমরাই সেরা দল হয়ে থেকেছি। আর তোমরা সেটা ভাল ভাবেই জানো। একটা টুর্নামেন্ট, একটা সিরিজ বা ওই ৩০ মিনিট এটা ঠিক করতে পারবে না। তোমরা সবাই সন্মান অর্জন করেছ। নিশ্চই আমরা সবাই দুঃখিত, কিন্তু সবার শেষে আমরা শেষ ২ বছরে যা যা করেছি তার জন্য গর্বই করা উচিত।”
সাংবাদিক বৈঠকে রবি শাস্ত্রী এটা স্বীকার করেছেন যে, দলে একজন শক্তিশালী চার নম্বর ব্যাটসম্যানের অভাব সত্যিই ছিল। যা নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে তফাত গড়ে দিতে পারতো।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হ্যা, আমাদের দলে মিডল অর্ডারে একজন শক্তিশালী ব্যাটসম্যানের দরকার। কিন্তু, অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই ভবিষ্যতে কে সেই জায়গা পূরণ করতে পারবে সেটা দেখার। এটা এমনই একটা জায়গা যেটা সবসময়ই আমাদের কাছে একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমরা কখনোই অস্বীকার করতে পারি না। রাহুল সেই জায়গা পূরণ করেছিল। কিন্তু শিখর চোট লেগে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ায় সেই জায়গায় আসে বিজয় শঙ্কর। এর পর তারও চোট লাগে এবং এটা আমাদের আয়ত্তের বাইরে চলে যায়”।
এরপর শাস্ত্রীকে মায়াঙ্ক অগ্রবালের সম্পর্কে প্রশ্ন করে বলা হয়, এই টেস্ট ওপেনারকে ওপেনিং-এ পাঠিয়ে কি কেএল রাহুলকে চার নম্বরে নামানো যেত না? এর উত্তরে তিনি বলেন, “তেমনটা না, আসলে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। যদি নকআউটের আগে একটা ম্যাচও বেচে থাকতো তা হলে নিশ্চয়ই এক বার আমরা এটা পরীক্ষা করে দেখতাম। এমনিতেও ওপেনিং-এ রাহুল ভাল ফর্মে ছিল। এই ম্যাচের আগে একটাতে ৬০ এবং পরের ম্যাচটায় শতরান করেছিল।”
এর পরই তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর দেন, যে প্রশ্নে তোলপাড় হয়ে পড়েছিল বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া। সেটি হল, কেন ধোনিকে ৭ নম্বরে পাঠানো হল ব্যাটিং করতে? এর উত্তরে শাস্ত্রী বলেন, “এটা পুরো দলের সিদ্ধান্ত ছিল। সবাই এটার সঙ্গে সহমত ছিল। এ ছাড়াও এটা খুবই সহজ একটা সিদ্ধান্ত ছিল আমাদের কাছে। আমরা এটা চাইনি যে ধোনি আগে ব্যাট করতে এসে আউট হয়ে যাক। তা হলে সেখানেই আমাদের রান তাড়া করা থেমে যেত। আমরা চেয়েছিলাম তাঁর অভিজ্ঞতা শেষে ব্যাবহার করতে। ও আমাদের সর্বকালের সেরা ফিনিসার। তাই শেষে তাঁর ব্যাবহার না করতে পারলে এটা আমাদের কাছে অপরাধের সমান হত। সম্পূর্ণ দলই এ বিষয়ে পরিষ্কার ছিল।”
আরও পড়ুন: ধোনির ব্যাটিং পজিশন নিয়ে শাস্ত্রীকে আক্রমণ সৌরভের
কোচ রবি শাস্ত্রী এটাও বিশ্বাস করেন যে, বৃষ্টির কারণে দু’দিন ধরে সেমিফাইনাল খেলা হওয়া ভারতের হারের অন্যতম কারণ। তিনি বলেন, “মঙ্গলবার আমাদের খেলার মধ্যে যে মোমেন্টাম ছিল সেটা বুধবার বিঘ্নিত হয়েছে। একবার থেমে গিয়ে তারপর আবার খেলা শুরু করা কোনও আদর্শ এক দিনের খেলা নয়। কিন্তু এমনটাই হয়েছে।”
তবে রবীন্দ্র জাদেজা ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মধ্যে হওয়া ১১৬ রানের পার্টনারশিপকে যথেষ্টই কুর্নিশ জানিয়েছেন শাস্ত্রী। “জাদেজা একজন অসাধারণ খেলোয়াড়। আমি খুব খুশি যে ও এটা প্রমাণ করতে পেরেছে। এক বার ভেবে দেখুন ও গত ৮টা ম্যাচে প্রথম একাদশে না থাকা সত্ত্বেও দলের যখনই দরকার পড়েছে তখনই ও ফিল্ডিং করে নিজের সেরাটা দেয়ারই চেষ্টা করে গেছে। এরপর শেষ দুটি ম্যাচে সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছে। বুধবার সেমিফাইনালেই সম্ভবত ও ওর সবচেয়ে সেরা ইনিংস খেলেছে এবং আগামী দু’বছরেও সেরা জাদেজাকেই দেখা যাবে। এখন ও অন্য লেভেলের ক্রিকেটার হয়ে গেছে”।
আরও পড়ুন: কাল হল অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, ভারতের হার নিয়ে মুখ খুললেন জাহির আব্বাস
ধোনির সম্পর্কেও ভূয়সী প্রশংসা শোনা যায় রবি শাস্ত্রীর গলায়। তিনি বলেন, “ধোনির মত মহৎ ক্রিকেটার আর হয় না। ওর মত ম্যাচের অবস্থা বুঝে কেউ খেলতে পারে না এবং আমি এ বিষয়ে নিশ্চিত যে, ওই রান আউটটা যদি না হত তা হলে ও জানতো কোন বলে ব্যাট চালিয়ে প্রয়োজনীয় রান তোলা যাবে। ওর মাথায় একটা নির্দিষ্ট হিসাব ঘুরছিল। ও জানতো যে শেষ ওভারে জিমি নিশামের বলে কত রান তুলতে পারবে। ও সত্যি এটা মরিয়া ভাবে করতে চেয়েছিল। এটা আমার কাছে আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে, যখন ও আউট হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার পর ওর মুখ দেখেছিলাম”।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy