বৃষ্টির পূর্বাভাস ম্যাঞ্চেস্টারে।—ছবি রয়টার্স।
২০১৯ বিশ্বকাপে বিরাট কোহালিদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে যারা দেখা দিয়েছে, তাদের কাউকে ততটা ধর্তব্যের মধ্যে রাখা হয়নি। আফগান স্পিন বিভাগ এবং বৃষ্টি।
রশিদ খান, মুজিব-উর-রহমান, মহম্মদ নবিরা শনিবার সাউদাম্পটনে দেখিয়ে দিয়েছেন, ভারতীয় ব্যাটিংকে যতই মহাশক্তি আখ্যা দেওয়া হোক, তাদের অনেক ফুটোফাটা আছে। আর রবিবার সাউদাম্পটন থেকে ম্যাঞ্চেস্টারে ফিরে আসতেই কোহালিদের তাড়া করল বৃষ্টি। যা চলতি বিশ্বকাপে যেন তাঁদের পিছু ছাড়তেই চাইছে না।
কারও কারও মতে যদিও ভারতীয় দলের মাথার উপরে এর চেয়েও বড় কালো মেঘ ঘোরাফেরা করছে। তা হচ্ছে, তাদের মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ে গভীরতার অভাব। সব চেয়ে দুশ্চিন্তার জায়গা এখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। সাউদাম্পটনে তিনি যে ভাবে ক্রিজে আটকে গিয়েছিলেন, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। ধোনি যে পরিমাণ ‘ডট বল’ (যে বলে কোনও রান হয় না) খেলছেন, তা রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে ভারত অধিনায়ক এবং কোচের। পুরোপুরি ক্রিজে আটকে যাচ্ছেন তিনি। স্পিনারদের বিরুদ্ধে খুচরো রান নিয়ে পর্যন্ত স্কোরবোর্ড সচল রাখতে পারছেন না। এমন দৃশ্য খুব কমই দেখা যায় যে, ধোনি মাঠে ঢুকছেন হাততালি আর দর্শকদের ভালবাসা মাথায় নিয়ে, তার পর আউট হয়ে ফিরছেন ধিক্কার ধ্বনির মধ্যে। এমনই বা কবে দেখা গিয়েছে যে, ধোনি আউট হতে ভারতীয় দর্শকেরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে হাততালি দিচ্ছেন। তার কারণ? হার্দিক পাণ্ড্যর ঝোড়ো ব্যাটিং দেখা যাবে। সাউদাম্পটনে ঠিক সে রকম ছবিই দেখা গিয়েছে।
এখানেই শেষ নয়। ‘স্কোর প্রেডিক্টর’ চালু হয়েছে এই বিশ্বকাপে। মাঝেমধ্যে সম্ভাব্য স্কোর জানাবে এই যন্ত্র। সাউদাম্পটনে আফগানিস্তান ম্যাচের সময় ধোনি যত ক্ষণ ক্রিজে ছিলেন, ক্রমশ ‘স্কোর প্রেডিক্টর’ পড়ছিল। ৩০০ থেকে ২৮০, সেখান থেকে একটা সময়ে ২৪০-এ নেমে আসে। কিন্তু ধোনি আউট হওয়ামাত্র যখন দেখা যায় হার্দিক ক্রিজে আসছেন, ‘স্কোর প্রেডিক্টর’ ভারতের সম্ভাব্য স্কোর পাঁচ রান বাড়িয়ে দেয়। তা দেখে কারও কারও মনে হচ্ছে, এটাই অনস্বীকার্য বাস্তব। ধোনি ক্রিজে থাকলে মিটার কমছে, আউট হলে চড়ছে। আর এই বাস্তব থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা ঠিক হবে না।
ধোনি অনুরাগীরা এখনও মেনে নিতে নারাজ যে, তাঁদের প্রিয় তারকা দ্রুত ফুরিয়ে আসছেন। তাঁরা চেন্নাই সুপার কিংসের ‘থালার’র দুর্দান্ত আইপিএলের কথা বলছেন। প্রস্তুতি ম্যাচে রান পাওয়ার উদাহরণ দিচ্ছেন। ঘটনা হচ্ছে, বড় রান তোলার ক্ষেত্রে বা বড় রান তাড়া করতে গিয়ে ধোনির সেই পুরনো রণনীতি সব সময় কাজ করছে না। ক্রিকেট বিশ্ব ধোনিকে ‘ফিনিশার’ আখ্যা দিয়েছিল। আর ‘ফিনিশার’-এর সাফল্যের প্রধান কারণ ছিল, অন্তিম প্রহর পর্যন্ত লড়াই টিকিয়ে রাখার কৌশল। বছরের পর বছর ধরে ‘ফিনিশার’ ধোনি মানে শেষ ওভার পর্যন্ত তিনি দ্বৈরথ নিয়ে যাবেন, তার পরে দুরন্ত বক্সারের মতোই প্রতিপক্ষের উপর আছড়ে পড়বে তাঁর ‘নক-আউট পাঞ্চ’।
ভক্তদের স্বপ্নভঙ্গ করে সেই রণনীতি ব্যুমেরাং হয়ে ধোনিকে পাল্টা কাবু করতে আসছে। প্রশ্ন উঠছে, বড্ড বেশি শেষের জন্য সব কিছুকে ফেলে রাখছেন কি না তিনি? বীরেন্দ্র সহবাগের ব্যাটিংয়ের নীতি ছিল, প্রথম বলটাই যদি ছক্কা মারার হয়, তা-ই মারব। লম্বা চুলের ডাকাবুকো ধোনিও একটা সময় তা করে দেখাতে পারতেন। ২০১১ বিশ্বকাপ ফাইনালে ওয়াংখেড়েতে তাঁর ছক্কা মেরে জেতানোর সেই মাচো ভঙ্গিকে ভুলতে পারবে! প্রশ্ন হচ্ছে, আট বছর পরেও সেই ডাকাবুকো মনোভাব অবশিষ্ট আছে নাকি ধোনির?
সাউদাম্পটনের পাশাপাশি উঠে আসছে আর একটি ম্যাচের স্মৃতি। এই ইংল্যান্ডের মাঠেই গত বছর হয়েছিল সেই ম্যাচ। জো রুটদের বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজে। ৩২২ তাড়া করতে নেমে শেষ ২৩ ওভারে ১৮৩ দরকার ছিল ভারতের জেতার জন্য। কোহালি আউট হয়ে যাওয়ার পরে ধোনিই ভরসা ছিলেন। কিন্তু সাউদাম্পটনের মতোই সে দিন পঞ্চাশের আশেপাশে স্ট্রাইক রেট নিয়ে হাসফাঁস করে আউট হন ধোনি। লর্ডসে সে দিনও ধিক্কার শুনতে হয়েছিল তাঁকে। শনিবারের ম্যাচে কোহালি আউট হন ৩১ ওভারে। সেই সময় থেকে ৩৭ ওভার পর্যন্ত একটাও বাউন্ডারি হয়নি। ক্রিজে ছিলেন ধোনি এবং কেদার যাদব। তার পর ৪০ থেকে ৪৫ ওভারের মধ্যে চারটি ওভারে তাঁরা তুলেছেন মাত্র দু’রান করে। সত্যিই কি পিচ এতটাই খারাপ ছিল?
কারও কারও মনে হচ্ছে, সমস্যা টেকনিক্যাল নয়, মনের। সাঁইত্রিশ বছরের ধোনি আর সেই লম্বা চুলের ডাকাবুকো নেই, বরং তাঁর মনে সংশয় তৈরি হয়েছে, মারতে পারব কি পারব না? বিশ্বকাপে যদি পুরনো ধোনিকে ফিরে আসতে হয় তা হলে দ্রুত এই ম্যালেরিয়ার কুইনাইনের খোঁজ পেতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy