ভরসা: শামি নয়, ভুবনেশ্বরেই আস্থা কোহালিদের। ছবি: এপি
ভারত-নিউজ়িল্যান্ড ম্যাচে এক অভিনব দৃশ্যের সাক্ষী হলাম। ভুবনেশ্বর কুমারের দিনের প্রথম বলেই ডিআরএস নিতে দেখলাম বিরাট কোহালিকে। চলতি বিশ্বকাপে যা এই প্রথম ঘটল। সেই সঙ্গে ওয়ান ডে ক্রিকেটের প্রথম ১৭ বলে রান না হওয়ার ঘটনা আগে কবে দেখেছি তা মনে করতে পারছি না। ১৮তম বলে ভুবনেশ্বরকে স্কোয়ার লেগে ঠেলে দলের প্রথম রান সংগ্রহ করেন মার্টিন গাপ্টিল। সেখানেই প্রমাণ হয়ে যায়, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে অনেকটা পিছিয়ে থেকেই শুরু করেছে নিউজ়িল্যান্ড।
মঙ্গলবার ম্যাঞ্চেস্টারের আবহাওয়া ছিল মেঘলা। কিন্তু পিচের কোনও জায়গা ছিল শুষ্ক, কোনও জায়গা স্যাঁতসেঁতে। ভারতীয় পেসাররা পিচের সেই ভিজে জায়গাগুলো খুব ভাল ব্যবহার করেছে। স্পিনারেরা বুঝতে পেরেছিল কোথায় বল ফেললে ঘুরবে। বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের ফল, ৪৬.১ ওভারে নিউজ়িল্যান্ডের স্কোর ২১১-৫। তার মধ্যে ১৫৩টি বলে কোনও রান সংগ্রহ করতে পারেনি রস টেলররা। অর্থাৎ ২৫.১ ওভার একেবারে ডিফেন্ড করেই কাটিয়ে দিতে বাধ্য হন উইলিয়ামসন, রস টেলরেরা।
ময়দানে একটি কথা রয়েছে, ‘‘উইকেটের ভেজা জায়গায় বল করে যাও, বল নিজেই নিজের কাজ করে যাবে’’। এ দিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের উইকেটও ছিল ‘স্পঞ্জি’। বুমরা ও ভুবনেশ্বর খুব ভাল পিচকে ব্যবহার করেছে। সমানে উইকেটের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বল ফেলে গিয়েছে। শামি এ দিন ছিল না প্রথম একাদশে। ও বাংলার ক্রিকেটার হলেও ভুবনেশ্বর কুমারের সব সময় প্রথম একাদশে খেলা উচিত বলে আমি সওয়াল করে এসেছি। ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সব চেয়ে ভাল সুইং ওর হাতে রয়েছে। এ দিন শুরু থেকেই ওর সুইং আটকে দিয়েছিল গাপ্টিল ও হেনরি নিকোলসকে। তিন নম্বরে নেমে কেন উইলিয়ামসনও শুরুতে দিশা খুঁজে পাচ্ছিল না। ভুবি প্রথম পাঁচ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়েছিল। সেই সঙ্গে বুমরা প্রথম চার ওভারে ১০ রান দিয়ে তুলে নেয় এক উইকেট। প্রথম পাওয়ারপ্লে-তে ২৭ রানে এক উইকেট হারানোর পরে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি উইলিয়ামসনের দল।
গাপ্টিলকে যে ভাবে বুমরা আউট করেছিল তা দেখে যে কোনও ব্যাটসম্যানের ঘুম চলে যেতে পারে। গুড লেংথ থেকে বলটা গাপ্টিলের বাইরের দিকে কাট করে। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত বাউন্সের মিশ্রণ বাধ্য করে গাপ্টিলকে ব্যাট বাড়াতে। দ্বিতীয় স্লিপে দাঁড়িয়ে বিরাট যে ক্যাচ নিয়েছে তা দেখতে সহজ হলেও প্রচণ্ড কঠিন। চোখের পলকে গাপ্টিলকে তালুবন্দি করে বিরাট। তাই বুমরার সঙ্গে কোহালিকেও এই উইকেটের ভাগীদার হিসেবে ধরাই যায়। সেই পরিস্থিতিতে ভুবনেশ্বর আরও চাপ বাড়ায় সমানে সুইং করিয়ে। অফস্টাম্পের বাইরে থেকে উইলিয়ামসনের ভিতরের দিকে একটি বল ঢুকে আসে। অন্যটি একই জায়গা থেকে বাইরে বার করে দেয়। শুধুমাত্র কব্জির ব্যবহারে এতটা পার্থক্য গড়ে দিতে পারে ও। ৮-১-২৫-১ পরিসংখ্যান নিয়ে শেষ করে বুমরা। ৮.১ ওভারে ৩০ রানে এক উইকেট পেয়ে বোলিং শেষ করে ভুবনেশ্বর।
বোলারদের সঙ্গে বিরাট কোহালিও দেখিয়ে দিল, অধিনায়ক হিসেবে কতটা পরিণত হয়ে উঠেছে। শুরু থেকেই আগ্রাসী ফিল্ডিং সাজিয়েছে। উইলিয়ামসনের সিঙ্গলস বন্ধ করে দেয় ওয়াইড গালি দাঁড় করিয়ে। অফস্টাম্প অথবা স্টাম্পের বল অতিরিক্ত দেরিতে খেলে নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ক। থার্ডম্যান অঞ্চলে গাইড করে খুচরো রান কুড়িয়ে নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার চেষ্টা করে। বিরাটের দুরন্ত পরিকল্পনায় সেটা কিন্তু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
এ ছাড়াও বুমরার বোলিংয়ে স্লিপ সরিয়ে দেওয়ার ভুল করেনি বিরাট। যুজবেন্দ্র চহাল ও রবীন্দ্র জাডেজার সময়ে সমানে স্লিপ রেখে চাপ বাড়িয়েছে। বিপক্ষের উপরে সমানে চাপ তৈরি করার এই রণনীতির জন্যই বিরাটকে অধিনায়ক হিসেবে প্রচুর নম্বর দেওয়া যায়।
এ বার আসা যাক রবীন্দ্র জাডেজার বিষয়ে। পিচে একটি বল ঘুরছে তো অন্যটি সোজা হয়ে যাচ্ছে। জাডেজা কিন্তু সেই পরিস্থিতি খুব ভাল ব্যবহার করেছে। ১০ ওভারে ৩৪ রানে এক উইকেট নেয় ভারতীয় অলরাউন্ডার। এর থেকে ভাল বাঁ-হাতি স্পিনারের পরিসংখ্যান অন্তত ওয়ান ডে-তে আশা করা যায় না। জাডেজা বল করার সময় দেখছিলাম আম্পায়ারকে বারবার সরে দাঁড়াতে বলছে। যার ইঙ্গিত, উইকেটের অনেক কাছ থেকে বল করে ও। আগেকার স্পিনারদের মতো কোণাকুণি রান আপ নেই। একেবারে সোজা দৌড়ে আসে ব্যাটসম্যানের দিকে। তাই ওর পিচ আপও হয় তিন কাঠির মধ্যেই।
দল বাছাই নিয়ে যদিও প্রশ্ন থেকে গিয়েছে। যদি ভারত ফাইনালে ওঠে তা হলেও কি দীনেশ কার্তিককে খেলানো হবে? এ দিন হার্দিক পাণ্ড্য প্রথম স্পেল করার সময় কুঁচকিতে চোট পায়। মাঠ থেকে বেরিয়ে ফিজিয়োর কাছে শুশ্রূষা করিয়ে ফের বল করতে আসে। ধরা যাক হার্দিক যদি চোটের কারণে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেত, তা হলে বাকি ওভারগুলো কাকে দিয়ে করানো হত? কেদার যাদব দলে থাকলে সে বিষয়ে খুব একটা ভাবতে হত না বিরাটকে। কিন্তু ফাইনালে হতেই পারে কোনও একজন বোলারের দিন খারাপ গেল। সে ক্ষেত্রে ছয় নম্বর বোলার কাকে বাছা হবে, তা ভেবে রাখা উচিত ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy