চর্চায়: বিজয়ের ব্যাটিং নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার। এপি
দুরন্ত ছন্দে থাকা এই ভারতীয় দলটায় একটা কাঁটাই খচখচ করছে। সেটা হল ব্যাটিং অর্ডারে চার নম্বর জায়গাটা।
বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের চার নম্বরে কে ব্যাট করবে, তা এত দিন জাতীয় তর্কে পরিণত হয়েছিল। বিকেলে চায়ের আড্ডা থেকে অফিস ফেরত যাত্রীদের মধ্যেও আলোচনা হত, কে নামবে চার নম্বরে! বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পরেও সেই সমস্যা থেকে গিয়েছে।
নির্বাচকেরা বিজয় শঙ্করকে চার নম্বর হিসেবে বেছেছেন। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টও ওর উপরে আস্থা রেখেছে। শঙ্কর কিন্তু একেবারেই চার নম্বরে নামার মতো ব্যাটসম্যান নয়। তামিলনাড়ুর হয়ে বরাবর পাঁচ ও ছয় নম্বরে ব্যাট করতে দেখেছি। ক্রিকেটের বিশ্বমঞ্চে হঠাৎ সেই চ্যালেঞ্জটা নেওয়া সোজা নয়। বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ১৯ বলে ১৪ রান করে ফিরে গেল ও। কেমার রোচের লেগকাটারের কোনও দিশাই খুঁজে পায়নি। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও দেখলাম চার নম্বরে ব্যাট করার চাপ ও নিতে পারছে না। শঙ্করের জন্যই মিডল অর্ডার দ্রুত খুলে যাচ্ছে। এমনকি কেদার যাদবকেও পাঁচ নম্বর হিসেবে মানতে পারছি না। প্রত্যেক দিন ধোনি ও হার্দিক বড় ইনিংস খেলবে, সেটা আশা করা উচিত নয়।
ফিনিশার হিসেবে কেদারকে ব্যবহার করা যেতে পারে। পাঁচ নম্বরে নামুক ধোনি। তার পরে আসুক হার্দিক ও কেদার। বিরাট কোহালি, ধোনি ও হার্দিক যদি এ দিন রান না পেত, তা হলে ব্যাটিং বিপর্যয়ের মুখে পড়ত ভারত। এই চার নম্বরেই প্রয়োজন একজন ডাকাবুকো ক্রিকেটারের। যার উপস্থিতি বিপক্ষ শিবিরে ভয় ধরিয়ে দিতে পারে। অবশ্যই তার নাম ঋষভ পন্থ। ওকে সুযোগ দেওয়া হলে দলে যেটুকু খুঁত দেখা গিয়েছে তা পূরণ হয়ে যাবে।
বুঝতে পারছি না সেমিফাইনালের আগে কেন পন্থকে পরীক্ষা করে নেওয়া হচ্ছে না। দীনেশ কার্তিকও দলের সঙ্গে রয়েছে। শেষ তিন ম্যাচের মধ্যে একটিতে ওকেও দেখে নেওয়া যেতে পারে। তবে ঋষভকে দু’টি ম্যাচে সুযোগ দেওয়া উচিত। রবিবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরীক্ষা করে নেওয়া হোক। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও সুযোগ দেওয়া হোক পন্থকে। তখনও যদি চার নম্বর নিয়ে সমস্যা থাকে, তখন দীনেশ কার্তিক ছাড়া কোনও বিকল্প থাকবে না। তবে বিজয় শঙ্করের আর সুযোগ পাওয়া প্রাপ্য নয়। চার নম্বরে দলের সেরা ব্যাটসম্যানেরা ব্যাট করে। পাকিস্তানের হয়ে ব্যাট করত ইনজ়ামাম-উল-হক। শ্রীলঙ্কার হয়ে মাহেলা জয়বর্ধনে। এমনকি চলতি বিশ্বকাপে নজর রাখলেও দেখা যাবে চার নম্বরে অভিজ্ঞ ক্রিকেটারেরাই ব্যাট করছে। পাকিস্তান নামাচ্ছে মহম্মদ হাফিজ়কে। শ্রীলঙ্কার হয়ে নামছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। বাংলাদেশ খেলাচ্ছে মুশফিকুর রহিমকে। ইংল্যান্ডের হয়ে নামছে অধিনায়ক অইন মর্গ্যান। রস টেলর নামছে নিউজ়িল্যান্ডের হয়ে। সেই তুলনায় শঙ্কর একেবারেই বেমানান।
যে যুক্তিতে শঙ্কর সুযোগ পাচ্ছে, তা পূরণ হচ্ছে না। ইংল্যান্ডের পরিবেশে শঙ্করের মিডিয়াম পেস কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু শেষ ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ওকে বল করতে হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধেও প্রয়োজন হয়নি। কারণ, এটা ইংল্যান্ডের ‘সেকেন্ড সামার’। এই সময়ে বল অতটা সুইং বা সিম করে না। বুমরাও এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। তাই শঙ্করও বোলিংয়ে সেই সুবিধে পাবে না। একেই ওর বলের গতি কম। তার উপরে বল নড়াচড়া না করলে অনায়াসে ওর বিরুদ্ধে রান বার করা যাবে। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে ওকে খেলানোর কোনও অর্থ নেই। কারণ, শটে বৈচিত্র খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুরু থেকেই নড়বড়ে দেখাচ্ছে। ‘হাফহার্টেড’ সব শট খেলছে।
তবে ধোনির ইনিংসের প্রশংসা করতেই হচ্ছে। আগের মতো ছন্দে না থাকলেও সেই অভাবটা বুঝতে দিচ্ছে না। শুরুর দিকে বেশ কিছুটা সময় নিচ্ছে। অপেক্ষা করছে শেষের ওভারগুলোর জন্য। এক সময়ে ৪২ বলে ২২ রান ছিল ওর। সেখান থেকে ইনিংস শেষ করল ৬১ বলে ৫৬ রান করে। শেষের দিকে দ্রুত রান তোলার ক্ষমতাই ওকে এত দূরে পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু শুরুতে ধোনির যে স্টাম্পিং ফস্কেছে হোপ, তা দশ হাজারে এক বার হয়। ওটা স্টাম্পিং হলেও রানআউটের সমান। স্টেপ আউট করে অনেকটা ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ধোনি। কিন্তু দু’বারে চেষ্টাতেও স্টাম্পিং করতে পারল না শেই হোপ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার বুঝতে পেরেছিল ‘ফুটওয়ার্কে’ সমস্যা হচ্ছে ধোনির। তাই ওর বিরুদ্ধে বাঁ-হাতি স্পিনার দিয়ে আক্রমণ করছিল হোল্ডার। সফলও হয়ে গিয়েছিল প্রায়।
কিন্তু ধোনির ‘গেম রিডিং’-এর কাছে মাথানত করতে হয়েছে হোল্ডারদের। ও বুঝতে পেরেছিল শেষ দশ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হাতে ভাল ডেথ বোলার নেই। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে। প্রথম ৩০ বলে ১৮ রান করেছিল। পরের ৩১ বলে করে ৩৮ রান। এই তথ্যই বুঝিয়ে দেয় কোন মুহূর্তে বিপক্ষের উপরে আক্রমণ করেছে ধোনি।
শেষ করব মহম্মদ শামিকে দিয়ে। ভারতীয় দলের সাফল্যের অন্যতম কারণ ওদের ‘বেঞ্চ স্ট্রেংথ’। ভুবনেশ্বর কুমার চোট পাওয়ায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সুযোগ পেয়েই হ্যাটট্রিক করে শামি। এ দিনও ওর ঝুলিতে চার উইকেট। শেই হোপকে যে বলে আউট করল তা আমার চোখে ‘বল অব দ্য টুর্নামেন্ট’। সিম মুভমেন্টের আদর্শ উদাহরণ দেখিয়ে গেল শামি। ঠিক অফস্টাম্পের বাইরে সোজা সিমে বল ফেলে। উইকেটে পড়ে হোপের ব্যাট ও প্যাডের মধ্যে দিয়ে স্টাম্পে আছড়ে পড়ে। শামি যে ছন্দে রয়েছে তাতে ভুবি ফিট হওয়ার পরেও প্রথম একাদশে ফিরবে কি না, সন্দেহ থাকছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy