ভরসা: রানের গতি বাড়াতে হার্দিকের দিকেই তাকিয়ে দল।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনির আদর্শ ব্যাটিং নম্বর কত? সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত হয়ে গেলেও এই ‘পাজল’ উদ্ধার হল না এখনও। এই মুহূর্তে ধোনির চেয়ে উপরে ব্যাট করানো হচ্ছে ঋষভ পন্থ এবং হার্দিক পাণ্ড্যকে। তার মানে সেই শেষের রাজা হিসেবেই তাঁকে এখনও দেখছেন কোহালিরা।
কিন্তু এজবাস্টনে যে দু’টো ম্যাচ খেলেছে ভারত, তাতে দেখা গিয়েছে শেষের দিকে নেমে আগের মতো আর রানের গতি বাড়াতে পারছেন না ধোনি। একে তো তাঁর স্ট্রাইক ঘোরানোর ক্ষমতা কমেছে। ফিল্ডারদের মধ্যে ফাঁক খুঁজে আগে যে রকম খুচরো রান নিয়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখতেন, তা হচ্ছে না। কব্জির মোচড়ে ফিল্ডারদের বোকা বানিয়ে খুচরো রান নিতেন ধোনি। এখন সেই বিখ্যাত কব্জিও আগের মতো কাজ করছে না। এজবাস্টনে যে দু’টো ম্যাচ খেলে এ দিন লিডসে এল ভারতীয় দল, সেই দুই ইনিংসে ধোনি করেছেন যথাক্রমে ৩১ বলে ৪২ এবং ৩৩ বলে ৩৫। দুই ইনিংস মিলিয়ে ছক্কার সংখ্যা মাত্র একটি। তাই স্ট্রাইক রেট নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি, এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে শেষের দিকে যখন বড় স্ট্রোক দরকার, তখন ধোনির উপরেই ভরসা করা ঠিক হচ্ছে কি না? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে দেখা গিয়েছে শেষ ২০.৫ ওভারে ভারত তুলেছে ১৩৪। এখন যে ভাবে ওয়ান ডে খেলা হচ্ছে, তাতে শেষ ২০ ওভারে অন্তত ১৭০ রান তোলার লক্ষ্য নেয় দলগুলো। সেই চাঁদমারি থেকে অনেক দূরে থেকে যাচ্ছে কোহালির দল। না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওপেনিং জুটিতে ১৮০ তোলার পরে অনেকে গণনা করতে শুরু করে দেন, ভারত ৪০০ তুলতে পারে কি না? তা যে সম্ভব হল না, তার কারণ দু’টি। এক) মাঝের দিকে একই ওভারে কোহালি এবং হার্দিক পাণ্ড্যর উইকেট তুলে নিয়ে বড় ধাক্কা দেন মুস্তাফিজ়ুর রহমান। দুই) শেষ দশ ওভারে মন্থর গতিতে রান তোলা।
বিশ্বকাপে শুরুর দিকে ভারতীয় ব্যাটিংয়ের রোগ মনে করা হচ্ছিল মন্থর শুরু। শিখর ধওয়ন চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়ার পরে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে রানের গতি ঝুপ করে অনেকটা পড়ে গিয়েছিল। রোহিত শর্মা এবং কে এল রাহুল ওপেনিং জুটিতে বড় রান তুলে দিলেও খোলসের মধ্যে ঢুকে থাকছিলেন। প্রথম দশ ওভারে সব চেয়ে ধীর গতিতে রান তোলার দিক থেকে দুই নম্বরে ছিল ভারত। সেই রোগ মঙ্গলবার দূর করেন রোহিত-রাহুল। প্রথম দশ ওভারের পাওয়ার প্লে-তে তাঁরা তোলেন ৬৯ রান। যেটা এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে ভারতীয় ওপেনিং জুটির তোলা সর্বোচ্চ। ২৪তম ওভারে তাঁরা পেরিয়ে গিয়েছিলেন দেড়শোর সীমানা। সাধারণত ধরে নেওয়া হয়, ২৫ ওভারের মধ্যে যদি হাতে উইকেটে দেড়শো তুলে ফেলা যায়, তা হলে শেষে গিয়ে স্কোর সাড়ে তিনশো বা তার বেশি উঠবে। সেই তুলনায় ৩১৪ অনেকটাই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের নীচে। নতুন রোগ হিসেবে উঠে এসেছে শেষ পাওয়ার প্লে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ দশ ওভারে ভারত তুলতে পেরেছে ৬৩ রান। কিন্তু যেটা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে, এই পর্বে পাঁচটি উইকেট হারিয়েছে তারা।
এজবাস্টন নিয়ে ময়নাতদন্তে বসলে কোহালিদের একটা কথা মনে হতেই পারে। হার্দিককে কি পরের ওভারগুলোর জন্য ধরে রাখলে ভাল হত? ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দেখা গিয়েছে, শেষের পাঁচ-ছয় ওভারে একেবারেই বড় স্ট্রোক হচ্ছে না। দল এত দিন শেষ কয়েক ওভারে ঝড় তোলার জন্য ধোনির দিকেই তাকিয়ে ছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ ওভারের ভেল্কি দেখাতে পেরেছিলেন ধোনি। কিন্তু এজবাস্টনে দু’টো ম্যাচেই ভীষণ ভাবে সমালোচিত হয়েছে তাঁর ভঙ্গি। বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও তাঁর শেষ ওভারে প্রথম দু’টি বলে রান না নিতে চাওয়া ক্রিকেট ভক্তরা ভাল ভাবে নেননি। তৃতীয় বলেই আউট হয়ে যান ধোনি। তা দেখে অনেকেই মন্তব্য করতে থাকেন, ভুবনেশ্বর কুমার তো ব্যাট করতে পারেন। তা হলে তাঁর দক্ষতার উপর আস্থা না দেখিয়ে দু’টো বল নষ্ট করব কেন?
ধোনি যদিও বরাবর এ ভাবেই শেষের দিকে খেলে এসেছেন। কী ভারতের হয়ে এক দিনের ক্রিকেটে খেলার সময়, কী আইপিএলে। শেষের দিকে তিনি অন্যকে স্ট্রাইক না দিয়ে নিজের বড় শট মারার দক্ষতার উপর আস্থা রেখেছেন। অতীতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই ফাটকা তাঁকে জিতিয়ে দিত। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই রণনীতি কাজ করছে না।
সমস্যা হচ্ছে, ধোনির ব্যাট আগের মতো ঝড় তুলতে পারছে না বলে শেষের দিকে রান রেট বাড়ানোর লোক কেউ থাকছে না। অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে চার নম্বরে নেমে সফল হওয়ার পর হার্দিকের ব্যাটিংয়ে পদোন্নতি ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে তিনি যাচ্ছেন পাঁচ নম্বরে। চারে নামছেন ঋষভ পন্থ। এই দু’জনই এখন ভারতীয় দলে সব চেয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এঁরা দু’জনেই আগে আউট হয়ে যাওয়ায় শেষ পাঁচ-ছয় ওভারে রানটাকে প্রতিপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যেতে পারেনি ভারত।
লিডসে রাউন্ড রবিন পর্বের শেষ ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। টেবলের স্থান নির্ধারণের পাশাপাশি এটাও দেখার যে, ধোনিকে আগে পাঠিয়ে হার্দিককে শেষ ছয়-সাত ওভারের জন্য ধরে রাখা হয় কি না। ভারতীয় দলের টেলএন্ডারদের ব্যাটিং সব চেয়ে দুর্বল। ভুবনেশ্বর কুমার একমাত্র কিছুটা সহায়তা দিতে পারেন কিন্তু তাঁর হাতে বড় হিট নেই। ধরেই নিতে হবে, যা করার ছয় নম্বর পর্যন্ত ব্যাটসম্যানকে করতে হবে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঋষভ পন্থ নেমেছিলেন চারে। হার্দিক গিয়েছিলেন পাঁচে। ধোনি ছয়ে। লিডসে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কি পাঁচে ধোনি, ছয়ে হার্দিক যাবেন? আলোচনা শুরু হয়েছে।
তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকটাও রয়েছে। যদি রোহিত, রাহুল, বিরাটরা অনেক ওভার খেলে দেন, তখন ঝড় তোলার জন্য পন্থ, হার্দিকদেরই আগে পাঠানো হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পাঠানো হয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy