Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

লর্ডসে আজ ইতিহাস হতে চলেছে

লর্ডস যে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে দুটো দল ফাইনালে খেলছে, তারা আগে কেউ বিশ্বকাপ জেতেনি। কে ভেবেছিল নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরও এক বার ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড?

যুযুধান: বোল্ট বনাম জেসন রয়ের দ্বৈরথ নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা। এএফপি

যুযুধান: বোল্ট বনাম জেসন রয়ের দ্বৈরথ নিয়ে বাড়ছে উত্তেজনা। এএফপি

জেফ থমসন
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৬:১৮
Share: Save:

‘ব্রেক্সিট’ না কি এ বার ‘ব্রেকস ইট’? লর্ডসে ‘সুপার সানডে’র ফাইনালের পরে সম্ভবত এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে। ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে যে দেশটা ভাগ হয়ে গিয়েছে, তারা কি ফাইনালের হারের রেকর্ড এ বার ‘ব্রেক’ করতে পারবে? এর আগে তিন বার বিশ্বকাপ ফাইনালে উঠেও চ্যাম্পিয়নের সিংহাসনে বসতে পারেনি ইংল্যান্ড। ডেভিড গাওয়ার, মাইক গ্যাটিং, গ্রাহাম গুচরা ১৯৭৯, ১৯৮৭ বা ১৯৯২ সালে যা করতে পারেনি, তা অইন মর্গ্যানের দল কি ২০১৯ সালে করতে পারবে?

লর্ডস যে ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। যে দুটো দল ফাইনালে খেলছে, তারা আগে কেউ বিশ্বকাপ জেতেনি। কে ভেবেছিল নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরও এক বার ট্রফি জয়ের লড়াইয়ে নামবে ইংল্যান্ড? মর্গ্যানরা অবশ্যই ফেভারিট হিসেবে মাঠে নামবে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, লর্ডসে ইংল্যান্ডের রেকর্ড সে রকম ভাল নয়। নিউজ়িল্যান্ডও নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটা জানে।

জেসন রয় দলে ফিরে আসার পরে জনি বেয়ারস্টো ওর ব্যাটিং কৌশলটা বদলে ফেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই বিস্ফোরক ওপেনিং জুটি ম্যাচটা সহজেই বার করে নিয়ে চলে যায়। ওদের ব্যাটিংটা দেখলে বোঝা যায়, শুরু থেকেই আক্রমণে চলে যায় রয়। আর বেয়ারস্টো একটু সময় নিয়ে ইনিংসটা গড়ে। কিন্তু ১০ ওভারের পরে ওদের ভূমিকাটা বদলে যায়। তখন বেয়ারস্টো মারতে শুরু করে আর রয় বড় ইনিংসের জন্য নিজেকে তৈরি করে। ট্রেন্ট বোল্ট আর ম্যাট হেনরিকে যে করে হোক এই ওপেনিং জুটিটা ভাঙতে হবে। তার পরে যদি তাড়াতাড়ি জো রুট আর মর্গ্যানকে ফিরিয়ে দিতে পারে, তা হলে ম্যাচ জমে যাবে। কিন্তু যদি ইংল্যান্ডের প্রথম চার ব্যাটসম্যানের কেউ উইকেটে জমে যায়, তা হলে নিউজ়িল্যান্ডের কাজ কঠিন হয়ে যাবে।

বিশ্বকাপ ফাইনালের ভাগ্য সম্ভবত নির্ভর করে থাকবে ইংল্যান্ড ব্যাটিং বনাম নিউজ়িল্যান্ড বোলিংয়ের লড়াইয়ের উপরে। একের বিরুদ্ধে এক হিসেবে যদি দেখেন, তা হলে নিউজ়িল্যান্ডের থেকে অনেক এগিয়ে ইংল্যান্ড। কিন্তু এই বিশ্বকাপ অনেককেই চমকে দিয়েছে। আমাকেও। যদিও আমাকে প্রশ্ন করলে আমার ক্রিকেটীয় অনুভূতি বলবে, খুব সহজেই ফাইনালটা জিতে যাবে ইংল্যান্ড। কিন্তু ওই যে কথায় আছে না, ক্রিকেট হল মহান অনিশ্চয়তার খেলা! ভারতের বিরুদ্ধে নিউজ়িল্যান্ড যে ক্রিকেট খেলেছিল, সেটা যদি ফাইনালে খেলতে পারে, তবে দারুণ একটা ম্যাচ দেখা যাবে। এক জন অস্ট্রেলীয় হিসেবে আমি খুব একটা খুশি হব না যদি দেখি কাপটা ইংল্যান্ড নিয়ে যাচ্ছে।

যদি প্রথমে ব্যাট করতে হয়, নিউজ়িল্যান্ডকে তিনশোর বেশি রান তুলতেই হবে। তবে কাজটা সহজ হবে না। ইংল্যান্ডের বোলিং‌ আক্রমণটাও রীতিমতো শক্তিশালী। জোফ্রা আর্চার, ক্রিস ওকস, মার্ক উড, লায়াম প্লাঙ্কেট, বেন স্টোকসের পেস আক্রমণ। সঙ্গে রয়েছে আদিল রশিদের স্পিন। আমি গত ৪৫-৫০ বছর ধরে ইংল্যান্ড ক্রিকেটটা দেখে আসছি। অনেক, অনেক বছরে এত ভাল ইংল্যান্ড দল দেখিনি।

প্রথম সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডের ভাগ্য ভাল ছিল বলে বেরিয়ে গিয়েছে। নিউজ়িল্যান্ড যতটা খারাপ ব্যাট করেছে, ভারত তার চেয়েও খারাপ করেছে। ম্যাচটা ভারতের মুঠোয় ছিল। নিজেরাই নিজেদের ডুবিয়ে দিল ভারত। ইংল্যান্ড ওদের এতটা ছাড় দেবে বলে মনে হয় না। কেন উইলিয়ামসন ব্যাপারটা জানে। নিউজ়িল্যান্ডকে কাপ দিতে গেলে জীবনের সেরা ইনিংসটা খেলতে হবে উইলিয়ামসনকে। নিউজ়িল্যান্ড অধিনায়ককে বাদ দিলে রস টেলর এবং মার্টিন গাপ্টিলের দক্ষতা আছে ইংল্যান্ডের এই বোলিং সামলানোর। সমস্যা হল, গাপ্টিল আবার জঘন্য ফর্মে রয়েছে।

নিউজ়িল্যান্ডের একটাই রাস্তা আছে জেতার। স্কোরবোর্ডে একটা ভাল রান তুলে বোল্ট, হেনরি, লকি ফার্গুসনকে দিয়ে ইংল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের আক্রমণ করতে হবে একেবারে প্রথম বল থেকে। শুরুতে উইকেট নিতেই হবে বোল্টকে। না হলে নিউজ়িল্যান্ডের জেতার কোনও সম্ভাবনাই নেই। এমনিতে ম্যাচটা ৮০ শতাংশই ইংল্যান্ডের দিকে ঝুঁকে।

ফুটবল বিশ্বকাপে অল্পের জন্য ইংল্যান্ড পারেনি। ওদের সেই ‘কাপ ঘরে নিয়ে এসো’ স্লোগান পূর্ণতা পেতে পারে ক্রিকেট বিশ্বকাপে। ফুটবলে হ্যারি কেন যা করে দেখাতে পারেনি, মর্গ্যান আর ওর দল সেটা করে দেখাতেই পারে। তবে আমার মতো প্রাচীন পন্থী ‘ব্যাগি গ্রিন’ অজি কিন্তু নিউজ়িল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রার্থনা করবে।

ইডেন গার্ডেন্স, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড আর লর্ডস হল বিশ্ব ক্রিকেটের তিনটি সেরা মাঠ। এই তিনটে মাঠেই এর আগে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড। ১৯৭৯ লর্ডসে, ১৯৮৭ ইডেনে আর ১৯৯২ সালে এমসিজি-তে। তিনটেতেই হেরেছে। আবার সেই লর্ডস। আবার কি একই ছবি দেখা যাবে? এক জন অস্ট্রেলীয় কিন্তু সে রকমই আশা করছে!

যাই হোক, অনেক ঠাট্টা-ইয়ার্কি হল। বলেই ফেলি, ইংল্যান্ডের স্বপ্ন এত দিনে সত্যি হতে চলেছে— ‘কাপ ঘরে আসছে’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy