ভরসা: ধোনির অভিজ্ঞতাই অস্ত্র অধিনায়ক কোহালির। বৃহস্পতিবার। টুইটার
কী বলা যায় একে? দুই প্রজন্মের তর্কাতর্কি শুরু হয়ে গেল না তো?
ম্যাঞ্চেস্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে বিরাট কোহালিদের সেমিফাইনাল টিকিট প্রায় নিশ্চিত হওয়ার দিনে সে-রকমই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মনে হতে শুরু করেছে, নতুন সংঘাতের সুর তৈরি হয়ে যাচ্ছে না তো? যার এক দিকে দু’হাজারের সেই সোনার প্রজন্ম। সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, বীরেন্দ্র সহবাগদের যুগ। অন্য দিকে ধোনি-কোহালিদের প্রজন্ম। সামনাসামনি না হলেও টুকরো-টাকরা অসি যুদ্ধের ঝনঝনানি কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সচিন তেন্ডুলকর স্বয়ং সাউদাম্পটনে ধোনির মন্থর ইনিংসের সমালোচনা করেছিলেন। ধোনি এ দিন হাফসেঞ্চুরি করে দেওয়ার পরে ম্যাচ শেষে কোহালি জোরালো ভাবে তাঁর অগ্রজের পাশে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘‘সকলের খারাপ দিন যায়। ধোনির একটা দিন খারাপ গেলেই প্রত্যেকে কথা বলতে শুরু করে দেয়। আমরা জানি ধোনি কত বড় কিংবদন্তি। কত ম্যাচ ও আমাদের জিতিয়েছে।’’
এই ‘প্রত্যেকে কথা বলতে শুরু করে দেয়’ কথাটা নিশ্চয়ই সচিন অনুরাগীদের ভাল লাগবে না। কারণ, ধোনিকে নিয়ে সব চেয়ে কড়া সমালোচনা ধেয়ে এসেছিল সচিনের দিক থেকেই। ম্যাঞ্চেস্টারে কোহালি নাম না করে কি সচিনের সমালোচনাকেও বিঁধতে চাইলেন? অনেকে কৌতূহলী হয়ে পড়ছেন।
এর মধ্যেই আবার সচিনের সঙ্গে ব্যাট করতে নেমে পড়েছেন তাঁর প্রাক্তন ওপেনিং পার্টনার। বীরেন্দ্র সহবাগ। তিনি এ দিন ফের প্রশ্ন তুলেছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিন খেলার সময় অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক ভঙ্গি নিয়ে। সহবাগের বক্তব্য, ‘‘আফগানিস্তানের সঙ্গে রশিদ খান প্রথমে চার ওভারে ২৫ রান দেওয়ার পরে শেষ ছয় ওভারে দিয়েছিল মাত্র ১৩। এ দিন ফাবিয়েন অ্যালেন প্রথম পাঁচ ওভারে ৩৪ দিল। তার পরের পাঁচ ওভারে দিল মাত্র ১৮। স্পিনারদের খেলার সময় এত রক্ষণাত্মক হওয়া যাবে না।’’
আগ্রাসী: ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে হাফসেঞ্চুরির পথে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। বৃহস্পতিবার ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। এএফপি
সহবাগের টুইটে সচিনেরই পর্যবেক্ষণের সুর। তিনি যে সময়টার কথা বলছেন, সেই সময়ে ধোনি ক্রিজে ছিলেন। তাই তাঁর নিশানাতেও প্রাক্তন অধিনায়ক কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। ধোনির সঙ্গেই দেশের হয়ে খেলেছেন সচিন, সৌরভ, সহবাগ, লক্ষ্মণেরা। তাই তাঁকে নিয়ে সমালোচনায় কিছুটা হলেও অসন্তোষ রয়েছে বর্তমান দলের মধ্যে।
বিশ্বকাপের মধ্যে যে দুই প্রজন্মে টক্কর লেগে যেতে পারে, তা অবশ্য আগে থেকে বোঝা যায়নি। কুম্বলের পদত্যাগ এবং শাস্ত্রীর প্রত্যাবর্তনের ঘটনাও অতীত হয়ে গিয়েছে। তিক্ততা যোগ হতে পারে ধোনিকে নিয়ে তৈরি হওয়া সমালোচনায়। সোশ্যাল মিডিয়াতে সচিন আক্রান্ত হয়েছেন ধোনির সমালোচনা করায়। তাতে আবার সচিনের যুগের ক্রিকেটারেরা তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ধোনি যে মন্থর খেলছেন এবং অতিরিক্ত সাবধানী হয়ে থাকছেন, সেই বিশ্লেষণ থেকে সচিন সহজে সরে আসবেন বলে মনে হয় না। আবার ধোনিদের দলের অন্দরমহলে চলছে এই বিশ্লেষণ যে, উইকেট বুঝে আমরা খেলছি এবং ঠিকই করছি। সচিন, সৌরভ, লক্ষ্মণ, সহবাগদের প্রজন্ম এখন কমেন্ট্রি বক্সে। কোহালি, ধোনিরা খেলছেন। ম্যাঞ্চেস্টারেই এই সংঘাত শেষ হচ্ছে না। যত দিন বিশ্বকাপ চলবে, এই সংঘাতও চলতে থাকবে।
এ দিন কে এল রাহুল সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে গেলেন, ‘‘আমরা খেলতে খেলতেই বুঝতে পারি, এই পিচে ২৬০-২৭৫ রান ভাল স্কোর হবে। সে-ভাবেই ইনিংসকে সাজাতে চেয়েছি আমরা।’’ রাহুল এবং রোহিত শর্মা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে অভ্যস্ত হলেও বিশ্বকাপে আশ্চর্যজনক ভাবে সতর্ক ভঙ্গিতে শুরু করছেন। সেটা নিয়েও জিজ্ঞেস করায় রাহুল যোগ করলেন, ‘‘বিশ্বকাপে চাপ অন্য রকম। এটা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নয়। তাই আমরা সতর্কতা নিয়ে ইনিংস সাজাচ্ছি।’’
ও দিকে ম্যাচের সেরা কোহালি পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে এসে ধোনিকে নিয়ে গরমগরম কথা বলে গেলেন। বললেন, ‘‘ধোনিকে নিয়ে সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে, যখন শেষের দিকে ওই ১৫-২০টা গুরুত্বপূর্ণ রান দরকার হবে, আমরা জানি ও সেটা করে দেবে। তা ছাড়াও কত রকম ভাবে ও দলকে সাহায্য করে। উইকেটটা যে তিনশোর নয়, ২৬০-২৭৫ রানের সে ব্যাপারেও তো ও পথ দেখাবে।’’ অর্থাৎ, সহবাগদের যুক্তিকে মানার কোনও ইচ্ছে নেই কোহালিদের যে, এই উইকেটে আরও রান উঠতে পারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম দশ ওভারের পাওয়ার প্লে-তে উঠল মাত্র ৪৭-১। জেসন হোল্ডার দশ ওভারে ৪৬টি ‘ডট বল’ (যে বলে রান হয় না) করে গেলেন। চলতি বিশ্বকাপে দশ ওভারের স্পেলে কেউ এতগুলো ‘ডট বল’ করতে পারেননি। তাই মন্থর ব্যাটিংয়ের তর্ক একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
বিজয় শঙ্কর চার নম্বর ব্যাটসম্যান হওয়ার উপযুক্ত কি না, সেই প্রশ্ন আবার উঠল। ম্যাঞ্চেস্টারের পরে যে ঋষভ পন্থের দাবি জোরালো হবে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। এর মধ্যেই ভারতীয় শিবির ফুঁসছে রোহিত শর্মার আউট নিয়ে। টিভি রিপ্লে বারবার দেখেও পরিষ্কার করে বোঝা যায়নি, বল ব্যাটে লেগেছিল না প্যাডে। স্নিকোমিটারে দাগ দেখিয়েছে ঠিকই কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল না, বল ব্যাটে লেগেছে না প্যাডে। বোলার কেমার রোচকে দেখে মনে হচ্ছিল, তিনি নিজে খুব একটা আশাবাদী ছিলেন না। তার পরেই তৃতীয় আম্পায়ার রোহিতকে আউট দিয়ে দিলেন। প্রযুক্তি যে লাইফ জ্যাকেট হয়ে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পারে না, তা ফের প্রমাণ হয়ে গেল ম্যাঞ্চেস্টারে।
তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে দেখে বোঝার উপায় নেই বিশ্বকাপ অভিযান শেষ হয়ে গিয়েছে। ম্যাচ শেষ হওয়ার অনেক পরে বেরলেন ক্রিস গেল, শেই হোপরা। ভারতীয় সমর্থকেরা অবশ্য এক জনের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি, ‘ইউনিভার্স বস’। ম্যাচে এক বার অসাধারণ তৎপরতায় তিনি বল ধরতেই উত্তাল হয়ে উঠল গ্যালারি। গেলও হতাশ করেননি ভারতীয় সমর্থকদের। স্টেডিয়াম ছাড়ার সময় হাসিমুখে এগিয়ে এসে ক্লান্তিহীন ভাবে অটোগ্রাফ দিলেন, নিজস্বী তুললেন। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের নীল জনসমুদ্রেও এক জন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের প্রতি ভালবাসার কোনও অভাব হল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy